মোঃ হাবিবুর রহমান হাবিব,
জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ পর্বের সফল সমাপ্তির পর সম্মুখীন হতে যাচ্ছে ভর্তি পরিক্ষা নামক যুদ্ধ ক্ষেত্রে। যেখানে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তারা হয়ত,তাদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন লালন করে আসছে সুদূর অতীত থেকে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস অনেকেরই নিজের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়ার সৌভাগ্য হয়ে উঠে না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা শিক্ষার্থীর জীবনকে আঁকড়ে ধরে। যার মূল কারণ আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর তুলনায় সীমিত সংখ্যক আসন। প্রতি আসনের বিপরীতে যে পরিমাণ পরিক্ষার্থী নাড়া দেয় যা কল্পনা করাও কল্পনাতীত। তাই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিৎ নিরন্তর সাধনা ও কঠোর পঠন-পাঠনের মাধ্যমে তাদের মনোবলকে দৃঢ় শক্তিশালী করা। যেখানে থাকবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং স্বপ্ন পূরণের দৃঢ় প্রত্যয়।
যদিও ভর্তি পরিক্ষা আমাদের সম্মুখে নাড়া দিয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ভর্তি পরিক্ষা সম্পন্ন হয়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি। এবিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে লাখো লাখো শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু বাস্তবে তা হয়ে উঠে না। যার কারণে আজ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বুকে চাপা থাকে অদম্য স্বপ্ন। এই স্বপ্নকে ঘিরে তাদের মধ্যে নব-স্বপ্নের শুভ সূচনা হয়। তাই প্রত্যেকের মনোবল থাকে একজন পাবলিকিয়ান হওয়ার। তাই লাল পাহাড়ের সবুজ ক্যাম্পাস নামে খ্যাত লালমাই পাদদেশস্থ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পূরণের একমাত্র বাসনা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কি.মি. পশ্চিমে ময়নামতি সংলগ্ন লালমাই পাহাড়ের পাদদেশস্থ প্রকৃতির আপনকোলে সবুজের অভয়ারণ্যে অবস্থিত দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। ৫০একর ভূমির উপর বিশাল দানবের মত তীর্যক দৃষ্টিতে স্বগৌরবে থাকিয়ে আছে বিশাল আকাশের পানে। এর কোলঘেষে রয়েছে নব শালবনবিহার, শালবন, কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, ময়নামতি জাদুঘর এবং সামাজিক বনায়ন।
আগামী ৮ও৯ নভেম্বর অনুষ্টিত হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরিক্ষা। যেখানে ৩টি ইউনিটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ভর্তি পরিক্ষা অনুষ্টিত হবে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় থাকছে না অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত লিখিত পরিক্ষা। পুর্ববর্তী বছরের তুলনায় এবছরও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রতিটি ভূল উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্ক কাউন্ট করা হবে। 'এ' ইউনিটের অধিনে থাকছে বিজ্ঞান অনুষদ ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ। 'বি' ইউনিটের অধিনে থাকছে কলাওমানবিক অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং আইন অনুষদ। একইভাবে 'সি' ইউনিটের অধিনে থাকছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ।
ভর্তি পরিক্ষা সন্নিকটে হলেও ভয়ের কোন কারণ নেই। পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সবচেয়ে বেশী এনালাইসিস করতে হবে। এমনভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে যা পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নের আলোকে। এছাড়া সবচেয়ে বেশী জোর দিতে হবে বাংলার জন্য নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা প্রথম পত্র। ইংরেজির জন্য নতুন করে পড়ার প্রয়োজন নেই, পূর্বের পড়াগুলো বার বার পড়তে হবে। এছাড়া ইংরেজি শব্দ ভান্ডারের প্রতি দখল থাকতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য বিশেষ করে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে। যেহেতু 'বি' ইউনিটে যারা পরিক্ষা দিবে তাদের জন্য নিজের বিভাগ ভিত্তিক বিষয় ব্যতীত বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে মৌলিক ধারনা থাকতে হবে। আর যারা 'সি' ইউনিটে পরিক্ষা দিবে তাদের কে বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংঘটন ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশেষ ধারণা থাকতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগের পরিক্ষার্থীদের সংক্ষেপে গণিত করার কৌশল জানা থাকতে হবে। 'এ' ইউনিটের পরিক্ষার্থীদের বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিতের উপর পূর্ণ দখল থাকতে হবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষায় বিগত সালের প্রশ্ন থেকেও আসার সম্ভাবনা থাকে। তাই বিগত সালের প্রশ্নগুলো বার বার রিভিশন দিতে হবে। ভর্তি পরিক্ষা নিয়ে কোন প্রকারের হতাশায় ভোগা যাবে না। সর্বাত্মক মন-মানসিকা সচল রাখতে হবে। এমন কি পরিক্ষার হলে কোন প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটা নিয়ে বেশিক্ষণ সময় নষ্ট করা যাবে না। নিজের বিশ্বাসের প্রতি সর্বদা অটল থেকে পরিক্ষায় জানা প্রশ্ন গুলোর উত্তর করতে হবে। বিশেষ করে সময়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যাতে সময়ের সাথে ভারসাম্য রাখে জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর করা যায়।
ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকলের জন্য শুভ কামনা যাতে তারা এবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেদের মনোনিবেশ করতে পারে। এবং সুশিক্ষা অর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেদেরকে একজন যোগ্য,সৎ এবং মনুষ্যেতের অধিকারী হিসাবে গড়ে তুলতে পারে। তাই নিজেকে একজন কুবিয়ান হওয়ার পূর্ণবাসনা রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার কামনা রইল।
মোঃ হাবিবুর রহমান
শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০