রাবি প্রতিনিধি :
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগ শাখার কেন্দ্রীয় সম্মেলন ১২ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সভাপতি-সম্পাদক পদে সিভি জমা দিয়ে ৯৩ জন প্রার্থী। তবে শীর্ষ এই দুইপদে আসার দৌঁড়ে আলোচনায় আছেন প্রায় এক ডজন নেতা। যাদের মধ্যে রয়েছে অছাত্র, ড্রপ আউট, চাঁদাবাজ ও তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীরা।
তবে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটের শীর্ষ দুই পদে নিয়মিত ছাত্র, সৎ, যোগ্য, সাংগঠনিক ও ক্লিন ইমেজধারীরা নেতৃত্বে আসুক।
জানা যায়, গত ২৩শে অক্টোবর প্রেস রিলিজের মাধ্যমে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির জন্য জীবনবৃত্ত আহবান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। প্রায় সপ্তাহখানেক না যেতেই আরেক প্রেস রিলিজের মাধ্যমে ১২ই নভেম্বর রাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় কমিটি। নভেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত ছিল পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার শেষ সময়। এতে ৯৩ জন সিভি জমা দেয়।
পদপ্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন বিতর্কিত নেতা মেহেদী হাসান মিশু। ২০১৬ সালে হওয়া রাবি ছাত্রলীগের ২৫ তম সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বিভিন্ন হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে হলে হলে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী উঠান তিনি। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা হলে এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। এসব ঘটনায় খবর প্রকাশিত হলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এবারের ২৬তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন তিনি।
জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা তথ্যানুযায়ী মেহেদী হাসান মিশু বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ ৬ শিক্ষাবর্ষের মধ্যে সম্মান শেষ করতে হয়। সে হিসেবে ২০২২ সালে ৮ বছর পেরিয়ে গেছে তার সম্মান শেষ করার সময়সীমা। তবে বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের নিয়মানুযায়ী নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে অনার্স শেষ করতে না পারায় বিভাগ থেকে ড্রপ-আউট হয়েছেন তিনি। সে হিসেবে তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক।
ড্রপ আউটের বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান মিশু বলেন, আমার ছাত্রত্ব নেই বিষয়টি সঠিক নয়। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে একটু রেজাল্ট খারাপ করি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কর্তৃপক্ষ ছাত্রত্ব রাখার নিয়ম আছে। আমি বিভাগে এবিষয়ে আবেদন করেছি। এবিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং রাজশাহীর অভিভাবকরা অবগত আছেন। সিভিতে তিনি বর্তমানে শিক্ষাগত যোগ্যতা সমাজবিজ্ঞানে পড়ছেন তা উল্লেখ করছেন কিনা এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বিজয় কৃষ্ণ বণিক বলেন, আমরা তাকে (মিশু) বিভাগ থেকে প্রত্যয়নপত্র দিতে পারি নি। যদি তার ছাত্রত্ব থাকতো তাহলে প্রত্যয়ন পত্র দিতে তো কোন সমস্যা ছিলো না। এখন বাকিটা আপনারাই বুঝে নেন।
অন্যদিকে, আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি পদের দৌঁড়ে বেশ আলোচনায় আছেন বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা মুশফিক তাহমীদ তন্ময়। তিনি ফোকলোর বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদক সরবরাহে জড়িতদের তালিকায় তার নাম নথিভুক্ত করা হয়।
এছাড়া, চলতি শিক্ষাবর্ষে রাবি'র ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির ঘটনায়ও তার নাম আসে। যার প্রেক্ষিতে রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্প্রতি সম্মেলনে সিভি জমা দেওয়ার একদিন আগে তন্ময়ের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে তিনি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পদের জন্য সিভি জমা দেন।
ক্যাম্পাসে প্রচার আছে, তন্ময় স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার পারিবারিক এক আত্মীয়ের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে লবিং করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন তিনি। এবার সেই ব্যাক্তির মাধ্যমে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদটি লুফে নিতে দৌঁড়ঝাপ করছেন বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতা। এবিষয়ে মুশফিক তাহমীদ তন্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন রিসিভ হয়নি।
এছাড়াও শীর্ষ এই দুইটি পদের একটি পেতে বিভিন্ন স্থানে লবিং ও দৌড়ঝাঁপ করছে আন্তর্জাতিক বিভাগ থেকে ড্রপ আউট ও শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ হিল গালিব। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে গালিব বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু পরবর্তীতে টানা তিনবছর প্রথম বর্ষ অতিক্রম করতে না পারায় ড্রপ আউট হয়ে যান তিনি। পরে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি অনার্স শেষ
করেছেন বলে দাবি করলেও সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে শিক্ষাগত যোগ্যতায় তিনি শুধু এসএসসি ও এইচএসসির তথ্য প্রদান করেন। পাশাপাশি তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে জীবনবৃত্তান্তে দাবী করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বিভাগে ভর্তির কার্ড ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড যা প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন তা জীবনবৃত্তান্তে জুড়ে দেন তিনি।
ড্রপআউটপের বিষয়টি এড়িয়ে গালিব বলেন, আমি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী।
মাদকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদপ্রার্থীদেরকে ডোপ টেস্ট করানো হোক। তাহলেই বুঝা যাবে।
সম্মেলন বিতর্কিত প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদেরকে কেন্দ্র কখনোই রাখবে না। এর কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ প্রাপ্ত কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে না। আমরা পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে এসেছি। কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক জীবনবৃত্তান্তগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখবে। অভিযোগের বিষয়গুলো আমরা ভালোভাবে দেখবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০