আল মাহমুদ বিজয়, রাবি:
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। সুজলা-সুফলা সৌন্দর্যে ঘেরা ৭৫৩ একরের এই ক্যাম্পাসে কী নেই? উত্তরে ভর্তিচ্ছুকদের মন্তব্য একজন শিক্ষার্থীর মেধা বিকাশে যা দরকার সবই আছে রাবিতে। ক্যাম্পাসের মধ্যে পরিপূর্ণ ক্রিকেট স্টোডিয়ামের বিরল রেকর্ড একমাত্র রাবিতেই আছে। তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে রয়েছে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের নানা স্বপ্ন।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নাকের ডগায়। রাবি প্রশাসনও তাদের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নেওয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার ইতোমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, রাবির প্রতিটি আসনের বিরুদ্ধে প্রায় ১০২ জন ভর্তিচ্ছুক প্রাথমিক আবেদন করেছিলেন। ভর্তি পরীক্ষার্থীদের এমন আগ্রহ দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ রাবিকে ছাড়তে রাজি না কেউ।
রাবির প্রতি ভালোবাসা ব্যক্ত করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোসা. সামজানা রহমান বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামটি বলতে গেলেই মনের মধ্যে একরাশ আবেগ এসে হানা দেয়। রাবিতে আমার প্রথম আসা অ্যাডমিশনের সময়। তখনই প্রথম দেখা হয় প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসকে। সেই অনুভূতিটা আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
তবে একটা কথা মনে পড়ে, সেদিন যখন পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার জন্য ক্যাম্পাস থেকে বের হতে লাগলাম তখন শেষবারের মতো পিছন ফিরে রাবির সেই মেইন গেটের দিকে তাকিয়ে আবেগ ভরা মনে ভাবতে লাগলাম যদি এই ক্যাম্পাসটা আমার হতো! আলহামদুলিল্লাহ্। আজ আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী।
তিনি আরও বলেন, কী নেই আমার ক্যাম্পাসে! ৭৫৩ একরের এই ক্যাম্পাসে যে কেউ এসে মুগ্ধ হতে বাধ্য। গাছে গাছে যখন কাঠবিড়ালী লুকোচুরি খেলে তখন একা একা বসে থাকতেও ভালো লাগে, যতবারই শহীদ মিনারের দিকে তাকাই ততবারই মনে হয় অনেক কষ্টে পেয়েছি আমি আমার রাবিকে। টুকিটাকিতে বসে গরম গরম চা আর সামুচা খেতে খেতে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দেওয়া এটাই তো ক্যাম্পাসের পরিপূর্ণতা। সময় পেলে লাইব্রেরিতে বসে বই পড়া। বদ্ধভূমিতে বছরে ২-৩বার পিকনিকের আয়োজন করা। প্যারিস রোড দিয়ে মনের আনন্দে হেঁটে চলা আবার মাঝে মধ্যে রোডের পাশে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে রিকশা মামাকে ডাকা, স্টোডিয়ামে বসে খেলা দেখা সেখানে ৪/৬ হলেই সবাই একসাথে মেতে ওঠা, এইতো শুরু হয়েছে শীতকাল মেতে ওঠেছে ক্যাম্পাস শীতের পিঠার আমেজ এছাড়াও নানা রকম আলোকসজ্জায় মাঝে মাঝেই দেখেতে পাওয়া যায় রাবিকে। সবই আমার আবেগ, সবই আমার ভালো লাগা। তাই আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এটাই বলতে পারি যে, ভোরের আলোয় দেখেছিলাম আমি আমার রাবিকে আজও সে আমার আবেগ।’
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন শোভন বলেন, মতিহারের এই সবুজ চত্বরে ৭৫৩ একর জুড়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে
হাজারো শিক্ষার্থীর প্রাণের স্পন্দন, বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, আমার প্রাণপ্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
রাবি যেন শুধু একটি শব্দ নয় এ যেন সহস্র শিক্ষার্থীর অব্যক্ত আবেগ। রাবির নীল সাদা বাসগুলোতে কাঙ্ক্ষিত সেই উড়ালের আশায় কত শত সহস্র শিক্ষার্থী যারা নিজের রাতের ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে তার হিসেব মেলানো বড্ড কঠিন। তাই মহান আল্লাহর নিকট অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি যে তিনি আমায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সুযোগটি করে দিয়েছেন।
মেইন গেট দিয়ে ঢুকতেই জোহা চত্বর, বিখ্যাত সেই প্যারিস রোড, সাবাশ বাংলার মাঠ, অনন্য প্রশাসনিক ভবন এ যেন নিতান্তই এক নজরকাড়া দৃশ্য। এছাড়াও সেই পরিচিত শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় মসজিদ, গ্রন্থাগার, টুকি-টাকি চত্বর, পরিবহণ এই জায়গাগুলো যেন এই কয়দিনেই আপন হয়ে উঠেছে। বধ্যভূমি ও চারুকলার অতুলনীয় সৌন্দর্য তো আছেই। ক্লাস করতে সকালে বের হয়ে আসা বন্ধু বান্ধবরা মিলে আড্ডা দিতে দিতে ক্যাফেটেরিয়া এবং বিভিন্ন হলগুলোর ডাইনিং এ খাওয়া, একসাথে শেখ রাসেল মাঠে, সাবাশ বাংলা মাঠে, স্টেডিয়ামে খেলা দেখা এবং খেলা এ যেন নিত্যদিনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে।ক্লাসের মনোরম পরিবেশ এবং আধুনিকায়নের এক অনন্য ছোয়ায় আমি মুগ্ধ। এ যেন চিত্তে ধারণ করা সেই স্বপ্নটির হুবহু বাস্তবায়ন।
তিনি আরও বলেন, আজ ৭৫৩ একরের এই সবুজ চত্বরই আমার বিচরণক্ষেত্র। এ পীঠে এসে অনেক কিছু শিখেছি এবং ভবিষ্যতেও শিখব এবং এর শিক্ষার উদ্দীপ্ত আলোতে নিজেকে বিকশিত করব। পরিশেষে বলব, হে বিদ্যাজননী, আশা করি তুমি যেন তোমার সকল প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে বরাবরের মতো নিজের যশ-গৌরব ও আভিজাত্য নিয়ে উন্নতির চরম স্বর্ণশিখরে পৌঁছাতে পারো। কেন না তুমি তো তোমার বুকে বিকশিত হওয়া হাজারো শিক্ষার্থীর অনিঃশেষ ভাবাবেগ।’