তাওহিদুল ইসলাম শিশির , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) রয়েছে শিক্ষক সংকট। ফলশ্রুতি শিক্ষকদের কাজে যেমন অতিরিক্ত চাপ পড়ছে তেমনি শিক্ষার মান ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিবছর বেশকিছু শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করেন ও সময়মতো দেশে ফিরে আসেন না। তাই এই সংকট আরো গুরুতর হচ্ছে।
জানা যায়, বুটেক্সে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষক থাকার প্রয়োজন ৩০০ জন। সেখানে বুটেক্সে স্থায়ী শিক্ষকের সংখ্যা ১৫৪ জন এবং ৪৬ জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগ হতে বিভিন্ন মেয়াদে প্রায় ৪০ জন শিক্ষক দেশের বাইরে উচ্চশিক্ষার জন্য অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে অনেকে এখনো উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন তেমনি অনেকের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মেয়াদ শেষ হলেও তারা দেশে ফিরে আসছেন না। এজন্য যাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মেয়াদ শেষ হওয়া শর্তেও দেশে ফিরে আসছেন না তাদের প্রত্যাবর্তনের নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং অনেকের বেতন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শিক্ষকের এই সংকটের কারণে বিভিন্ন বিভাগের নিয়মিত ক্লাস ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বছরের অধিকাংশ সময় শিক্ষকের এমন সংকট থাকে ফলে বিভাগীয় বিষয়গুলির জন্য প্রতিনিয়ত খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করতে হয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত সঠিক না থাকায় শিক্ষার মান হুমকির মুখে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন শিক্ষার্থী জানান, বর্তমানে বিভাগে স্থায়ী শিক্ষক আছেন মাত্র ৪ জন। উপযুক্ত শিক্ষকের অভাবে বিভাগীয় বিষয়গুলো ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে। বিভাগটির ১১ জন শিক্ষক ছিলেন তার মধ্যে ৭ জন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশের গমন করেছেন। এতে করে স্থায়ী শিক্ষকদের ওপর অধিক চাপ পড়ছে তেমনি খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে হচ্ছে।
টেক্সটাইল মেশিনারী ডিজাইন অ্যান্ড মেনটেনেন্স বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে বিভাগীয় বিষয়গুলোর নিয়মিত ক্লাস হয় না। তাই সেমিস্টারের শেষে পড়াশোনার বেশি চাপ পড়ে। এ বিভাগ থেকে ৫ জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গমন করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদার বলেন, শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। শিঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন স্থায়ী শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়া হবে বলে আশা করছি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে গমনকারী যেসব শিক্ষক নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশে ফিরে আসছেন না তাদের প্রশাসনিক নিয়ম মেনে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে এবং অনেকের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হয়ছে ইতোমধ্যে।
উল্লেখ্য, বুটেক্সের শিক্ষাখাতের অন্যতম গুরুতর সমস্যা এটি। উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদেশে চলে যাচ্ছেন, ফলে বুটেক্সের শিক্ষাব্যবস্থা আরো বেশি সংকটে পড়ছে। এই অবস্থা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। তাদের দাবি বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় দীর্ঘদিন ধরে চলা এই শিক্ষক সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।