নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে তিন কলেজ অধ্যক্ষের দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে দুর্গাপুর উপজেলা প্রশাসন বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চ। মঞ্চের যুগ্ম আহবায়ক খালিদ মাসুদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল গত মঙ্গলবার এই স্মারক লিপিটি দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোঃ নাভিদ রেজওয়ানুল কবীরের নিকট জমা দেন।
অভিযুক্তরা হলেন দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার, তার স্ত্রী আলহাজ্ব মাফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের অধ্যক্ষ মোছা. কামরুন্নাহার ও দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও বর্তমানে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আজিজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসে মঞ্চের পক্ষে আহবায়ক কাজী আশফিক রাসেল অভিযুক্তদের দুর্নীতির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে অভিযোগ জমা দেন। দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিপা বিশ্বাসকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা প্রশাসন। যার স্মারক নাম্বারঃ ০৫.৩০.৭২১৮.০০০২.১৮.০৮৪.২৪-১১৩৮ ও ১১৯২(২৬/১১/২০২৪খ্রি.)। খালিদ মাসুদ স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিটিতে অভিযুক্তদের দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাখা-প্রমাণসহ ৪৯ টি পাতা সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহমেদ তালুকদারের দুর্গাপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের অবৈধতা, অবৈধভাবে চাকুরিতে যোগদান, স্ত্রীকে সহকারী শিক্ষক নিবন্ধন জালিয়াতি করে অন্য কলেজে অবৈধভাবে অধ্যক্ষ পদে বসানো, আর্থিক কেলেংকারী, তার ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজের শিক্ষাসনদ ত্রুটিরও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তি হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অরাজনৈতিক পদ দখলের প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত ফারুক আহমেদ তালুকদার ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগি আব্দুল আজিজ একদিকে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থীদের প্রচারণায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক নেতাসুলভ বক্তব্য দিতেন অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আমলে ভোট ডাকাতির নির্বাচনগুলাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে দস্যুর ভূমিকা অবতীর্ণ হতেন এমন প্রমাণও সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে।
দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ ফারুক আহমেদ তালুকদার গত দুই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শীর্ষ নেতা ছিলেন। তিনি একই সাথে দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির উপজেলা সভাপতি ও উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সভাপতি। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত আলহাজ্ব মাফিজ উদ্দিন তালুকদার কলেজের নামে ফেসবুকে প্রোফাইল খুলে সেখানেও রাজনৈতিক প্রচারণার প্রমাণ দেওয়া হয়েছে।
সুসং মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক (কম্পিউটার) পদে নিয়োগকালীন সময়ে অভিযুক্ত ফারুকের কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলো না সংযুক্ত মাউশির পরিদর্শন প্রতিবেদনটি সম্পর্কে জানতে চাইলে সুসং সরকারি মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইহার সত্যতা স্বীকার করেন। তদন্ত কমিটির চাহিদামোতাবেক ইতিমধ্যে একটা কপি সত্যায়িত করে পাঠিয়েছেন বলেও স্বীকার করেন।
সুসং দুর্গাপুর দুর্নীতি ও নিপীড়ন বিরোধী ভার্সিটিয়ান মঞ্চের যুগ্ম-আহবায়ক খালিদ মাসুদ বলেন, " গত নভেম্বর মাসে গঠিত তদন্ত কমিটি সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেননি। বিষয়টি জনমনে ব্যাপক উদ্বেগ ও সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। অভিযুক্তরা অবৈধ অর্থ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের কারণে দুর্নীতির তদন্তকে প্রভাবিত করার চতুর্মুখী অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা স্বারকলিপি দিয়ে এসেছি। যদি তদন্ত কার্যক্রমে কোনো বাধা সৃষ্টি হয় বা প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব হয়, তাহলে আমরা গণমানুষের দাবির পক্ষে রাজপথে তীব্র আন্দোলন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব।"
মঞ্চের আহবায়ক কাজী আশফিক রাসেল বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ এক নতুন সূর্যোদয়ের নাম। জুলাই আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে"
তদন্ত কমিটি আহবায়ক উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব নিপা বিশ্বাস বলেন, "আমরা এইবিষয় নিয়েই মিটিংয়ে আছি। পরে কথা বলি"
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজলুর রহমান বলেন, "হ্যাঁ আমরা অধিকাংশ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। খুব শ্রীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার চেষ্টা চলছে।"
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনাব মোঃ নাভিদ রেজওয়ানুল কবীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি তদন্ত দ্রুত শেষ করতে সুপারিশ করবেন বলে আশ্বাস দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০