
আবু সুফিয়ান সরকার শুভ
নিজের লক্ষ্য অটুট রেখে ব্যার্থতাকে মেনে নিয়ে বাধাবিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে বিসিএস (শিক্ষা) ক্যাডার সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়র (জবি) শিক্ষার্থী মোত্তালিব মিহির৷ জীবিকার তাগিদে তিনি নিরাপত্তাকর্মীতেও যোগদান করেছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শিক্ষাজীবনের বন্ধুর পথ পড়ি দিতে তিনি যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন পেশায়৷ কখনো টিউশনি, কখনো কোচিং-এ শিক্ষাকতা, কখনো প্রুফ রিডারের মত কাজেও যুক্ত ছিলেন তিনি৷
বগুড়ার শিবগঞ্জের মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির একমাত্র সন্তান মোত্তালিব মিহির। বাবা গ্রামে বর্গাচাষী এবং মা গৃহিণী। বাবার স্বল্প আয়ের ওপর ছিলো সংসারের দায়িত্ব। যেন একমাত্র স্বপ্ন কেবল সন্তান মোত্তালিবের ভবিষ্যতের উপরই ছিল।
আর্থিক দুরাবস্থার কারণে এক সময় চাচার বাড়িতে ছিলেন তিনি। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ার উপক্রম হয়ে পড়ে৷
এত বাধা-বিপত্তির মাঝেও তিনি এসএসসিতে কৃতিত্বের সাথে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ- ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
এইচএসসি পড়াশোনা শেষে ২০১২ সালে ঢাকায় এসে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য আবারও পড়াশোনা প্রায় বন্ধ। একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেন তিনি। সারাদিন গেইটে বসে ডিউটির মাঝে ছিলো তার পড়াশোনার সময়। ছুটি নিয়ে বন্ধুর সাথে দেখা করে সে বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং সম্পর্কে অবগত হয়। সেও এবার ঢাকায় কোচিং করে এডমিশন দিবে। তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জেনে পড়াশোনার সেই উদ্দীপনা আবারো জাগে মিহিরের। সিকিউরিটি চাকরির বেতন হতে কিছু টাকা জমিয়ে সে ভর্তি হয়ে যাই একটি কোচিংয়ে।
এভাবে চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে ২০১৩ সালে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পান তিনি। সিকিউরিটি চাকরিটি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যান এবং ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিসিএস সহ চাকুরির পরিক্ষায় ব্যার্থ হয়ে অবশেষে ৪৩ তম বিসিএসে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) তাঁকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।
সফলতা নিয়ে মোত্তালিব মিহির বলেন, 'শত বাঁধা পেরিয়ে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনো হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি যেখানে ছেলেমেয়েদের নাম লেখা শেখার পরে স্বপ্নই থাকতো বিদেশ চলে যাবে। এরকম একটা পরিবেশে আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনো ভাবি নি যে বিসিএস এর মতো এতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণীর একটা চাকরি করব।'
জীবনে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকে আমি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। আশা করি নিজের উপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা দিতে পারব বলে আশা ব্যাক্ত করেন মিহির।
ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিবে তাদের উদ্দেশ্যে মিহির বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের তার থেকে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে সফলতা আসবেই ইনশাল্লাহ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০