ঢাকাশনিবার , ২৬ জুলাই ২০২৫
  1. সর্বশেষ

ঢাবি শিক্ষার্থীর চা শ্রমিক ‘মা’ কে নিয়ে আবেঘগন স্টেটাস! !

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
১৮ আগস্ট ২০২২, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

কে.এম কাওসার আহমেদ, ঢাবি :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সন্তোষ তার চা শ্রমিক ‘মা’ কে নিয়ে আবেগঘন এই লেখাটি লিখেছেন … হৃদয়ের গভীরে আঘাত করার মতো!

পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরলাম :

জন্মের ছয় মাসের মাথায় বাবাকে হারিয়েছি। মা চা-বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা।

সেই সময় আমাকে পটের দুধ খাইয়ে, অন্যের বাসায় রেখে মা যেতেন বাগানে কাজ করতে।

২০০৭ সালে আমি ক্লাস ফাইভে পড়ি। মায়ের মজুরি তখন ৮৮ টাকা। এক দিন বললেন, ‘বাজারে গিয়ে পাঁচ কেজি চাল নিয়ে আয়।’ সেই চাল দিয়ে এক মাস চলেছে আমাদের। পরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে দেখি মা চাল ভাজলেন। পলিথিনে সেই ভাজা চাল, আটার রুটি আর লাল চা একটা বোতলে ভরে গামছায় প্যাঁচালেন। আর আমাকে আটার রুটি ও লাল চা দিলেন। দুপুরে খেতে গিয়ে দেখি শুধু পেঁয়াজ, শুকনা ভাত, তেল আর লবণ আছে। তা দিয়ে মেখে খেলাম। রাতেও কোনো তরকারি ছিল না। তখন পাশের বাসার কাকু আমাকে ডেকে কুমড়া আর আলু দিয়েছিলেন, যা দিয়ে আমরা দুইটা দিন পার করেছিলাম। তখন কুপি বাতির আলোয় পড়তাম। মা আগেই রেডি করে দিতেন বাতি। তেল শেষ হয়ে গেলে আর পড়া হতো না। দোকানদার বাকিতে তেল দিতেন না।

পঞ্চম শ্রেণির পর ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুলে পাঁচ বছরের জন্য ফ্রি পড়ালেখার সুযোগ পাই। মা অনেক খুশি হয়েছিলেন। তখন তাঁর সামান্য আয়ের একটা অংশ থেকে আমাকে টিফিন খাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে ৭০-৮০ টাকা দিতেন।

২০১৩ সালে বিএএফ শাহীন কলেজে ভর্তি হই। তখন মা ১০২ টাকা করে পেতেন। এই সময়ে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে আমার ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন।

২০১৪ ডিসেম্বর। মায়ের হাতে টাকা নেই। তখন এইচএসসির রেজিস্ট্রেশন চলছিল। মা ৫০ টাকার একটা নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘কেউ ধার দেয়নি রে বাপ।’ কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেবার রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়েছিলাম।

এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিং। মা তখন আবার লোন নিলেন গ্রামীণ ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তির জন্য এই সময় মা বাড়ি থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। বিনিময়ে পেতেন ৩০০ টাকা। আমি জানতাম ঘরে চাল নেই। শুধু আলু খেয়েই অনেক বেলা কাটিয়েছিলেন মা।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলাম। মা তখন কী যে খুশি হয়েছিলেন! কিন্তু ভর্তির সময় যত ঘনিয়ে আসছিল, মায়ের মুখটা তত মলিন দেখাচ্ছিল। কারণ চা-বাগানে কাজ করে যা পান তা দিয়ে তো সংসারই চলে না। ভর্তির টাকা দেবেন কোথা থেকে। পরে এলাকার লোকজন চাঁদা তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহায়তা করল। বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশনি করেই চলতাম। হলের ক্যান্টিনে ২০ টাকার সবজি-ভাত খেয়েই দিন পার করেছি। অনেক দিন সকালে টাকার অভাবে নাশতাও করতে পারিনি। দুর্গাপূজায় কখনো একটা নতুন জামা কিনতে পারিনি।

২০১৮ সালে শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে উপজেলায় মাকে সম্মাননা দেওয়া হবে বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়। পরে মায়ের নামটা কেটে দেওয়া হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, মা আমার চা শ্রমিক। স্টেজে উঠে নাকি কিছু বলতে পারবেন না। তাই নাম কেটে দিয়েছে!

মা এখনো প্রতিদিন সকালে একটা বোতলে লবণ, চা-পাতা ভর্তা, আটার রুটি, সামান্য ভাত পলিথিনে ভরে নিজের পাতি তোলার গামছায় মুড়িয়ে নিয়ে দৌড়ান চা-বাগানে। আট ঘণ্টা পরিশ্রম করে মাত্র ১২০ টাকা মজুরি পান! এই মজুরিতে কিভাবে চলে একজন শ্রমিকের সংসার? আজকাল মায়ের শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। বলেন, ‘তোর চাকরি হইলে বাগানের কাজ ছেড়ে দেব।’

আমি এখন সেই দিনের প্রতীক্ষায় আছি….!

সন্তোষ রবিদাস অঞ্জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

1,145 Views

আরও পড়ুন

নাকুগাঁও সীমান্তে শিশুসহ ২১রোহিঙ্গাকে বিএসএফের পুশইন

জামাতে ২০০ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পেলো ৫ শিক্ষার্থী

মধ্যনগরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে শাহিন মিয়া নামে এক যুবক আটক,বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরুর প্রথম ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২২-২৩শে আগস্ট!

শেখ হাসিনা আমাদের একটি ফিটনেস বিহীন রাষ্ট্র চাপিয়ে দিয়ে গেছে ——–সুনামগঞ্জে নাহিদ ইসলাম

আওয়ামী লীগের কুখ্যাত সন্ত্রাসী আনু সালাম গ্রেফতার

মধ্যনগরে ভারতীয় থান কাপড়সহ কোটি টাকার মালামাল আটক

কক্সবাজারে র‍্যাবের হাতে ভূয়া সাংবাদিক আটক

রায়পুর পৌরসভা কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে এখনও রয়েছে দলীয় সাবেক মেয়রের ভিডিও, প্রশ্ন উঠছে নিরপেক্ষতা নিয়ে!

দোয়ারাবাজারে পুলিশের অভিযানে ভারতীয় মদের চালানসহ মাদক কারবারি আটক

নারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগে বাস আটক করল ইডেন কলেজ শিক্ষার্থীরা

শান্তিগঞ্জে আন্ত: ইউনিয়ন ফুটবল টুর্নামেন্ট এর প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত