—————
পুরান ঢাকার বাংলাবাজারের প্যারিদাস রোডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রেকর্ডকৃত মালিকানাধীন বাণী ভবনের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কাউন্সিলরের মদদে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী দখলকৃত জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও এর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ অনুযায়ী বিলুপ্ত কলেজের সকল স্থাবর ও অবস্থার সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সম্পদের পরিসংখ্যানপত্র তৈরী করা হয়। পরিসংখ্যান পত্রে বিলুপ্ত জগন্নাথ কলেজের অধীনে ১২টি হল ও এর জায়গা ছিল। কিন্তু ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় জনসাধারণের সাথে আবাসিক হলগুলিতে অবস্থানরত ছাত্রদের সংঘর্ষের ফলে হলগুলির অধিকাংশই বেদখল হয়ে যায়।
বে-দখলকৃত সম্পত্তিগুলো উদ্ধারের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে তিনটি হল ও হলের জায়গা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকা বাংলাবাজারের ১ ঈশ্বরদাস লেন, ৩৫/৩৬ প্যারিদাস রোড অবস্থিত বাণী ভবন রয়েছে। বাণী ভবনে দীর্ঘদিন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী বসবাস করে আসছেন। এরই মধ্যে বাণী ভবনের একপাশের জায়গা দখল করে দেয়াল তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। সেখানে এখন বহুতল ভবণ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে তারা।
সরজমিনে দেখা যায়, বাণী ভবনের সামনের অংশে টিনের বেড়া দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং করা হচ্ছে। এই ভবনের দেয়াল ঘেঁষে তুলা হচ্ছে নতুন বাউন্ডারি ওয়াল। দুই স্তর বিশিষ্ট বাউন্ডারি ওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলে জায়গা দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পাইলিং এর কাজ চলছে। সেখানে শ্রমিকরা কাজ করছে। ফলে পুরনো মূল ভবনের দেয়াল ও ভবনের কিছু অংশ হেলে পড়েছে। কোথাও কোথাও দেবে গেছে, এমনকি ভেঙ্গেও গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের পেছনে প্রত্যক্ষ মদদে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন। তার প্রত্যক্ষ মদদে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই জায়গা দখল করে অবৈধ এই স্থাপনা নির্মাণ করছেন বলে জানা গেছে। এর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত রয়েছেন অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বাণী ভবনে থাকা কয়েকজন কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত ৪-৫ বছর পূর্বে ভবনটির ঘেঁষে দেয়াল তুলে এর সামনের জায়গা দখল করে নেয়া হয়। দখল করে নেয়া জায়গার সামনের অংশে একটি বেসরকারি কোম্পানির কাগজের দোকান ছিলো। তবে তা দীর্ঘদিন বন্ধ পড়ে ছিলো। স্থানীয় কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটন ও তাঁর সহযোগীরা সেই জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ করছে বলে জানান তারা।
দীর্ঘদিন থেকে বাণী ভবনে বসবাস করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী (আজিজুল ইসলাম) বলেন, প্রথমে ভবনের সামনের অংশে দেয়াল তুলে জায়গা দখলে নেয়া হয়েছিল। ভিতরে জায়গা ফাঁকাই ছিল। এখন সেখানে আরেকটা দেয়াল তুলে দুই স্তরের দেয়াল করেছে। কয়েকমাস আগে কাউন্সিলর ছোটনসহ আরও বেশ কয়েকজন এখানে এসে কয়েকবার জায়গা পরিদর্শন করে যায়।তারপর থেকেই পাইলিং এর কাজ শুরু করে দেয় তারা। যারা এখানে কাজ দেখাশোনা করে সবাই ছোটন কমিশনার ও তার সহযোগীদের লোক। আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারিনা।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানাধীন এই জায়গাটি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হলেও টুঁ শব্দও নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। মৌজা ও খতিয়ানে পুরো জায়গাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ডে থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তি রক্ষায় কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত নাহিদ হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেসব সংরক্ষণ বা উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। বাণী ভবনের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুত বন্ধ করে জায়গা বুঝে নিতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
স্নাতকে অধ্যয়নরত রতন মোল্লা নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সিটি করপোরেশন-প্রভাবশালী ব্যক্তি সবারই নজর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির দিকে। আমাদের হল, খেলার মাঠ সব দখল হয়ে গেছে। এখন বেঁচে থাকা বাণীভবনের জায়গাটাও দখল হয়ে যাচ্চে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও নির্বিকার। এই জায়গা উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সব দখলদারদের রুখে দিতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।
এবিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ছোটনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার কামাল হোসেন বলেন, আমি শোনার পর জায়গাটি বেশ কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি আমি উপাচার্য মহোদয়কে অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি কর্মকর্তা কামাল হোসেনকে বিষয়টি তদারকির জন্য নির্দেশ দিয়েছি। এবিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
———
সাব ক্যম্পাস এডিটর