নিগার সুলতানা সুপ্তি, ঢাবি :
বাংলাদেশে একটা সময় ছিল যখন বাজারে গেলে মানুষজন হাতে করে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে যেতেন।কিন্তু বিগত দুই দশক ধরে বাজারে পলিথিনের ব্যপক ব্যবহার শুরু হয়।এর পর থেকে বাজারে যে ধরনের দোকানেই যান না কেন বিনে পয়সায় পলিথিনের ব্যাগ দেয়া শুরু হল।সকল দোকানে সহজে বিনে পয়সায় চাইলেই পলিথিনের ব্যাগ পাওয়া যায়। পরিশ্রম এবং অর্থ ছাড়াই যখন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে তখন সাধারণ মানুষ সে দিকে ঝুঁকবে এটাই স্বাভাবিক।
ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১ কোটি ৪০ লাখ পলিব্যাগ পরিত্যক্ত হয়। যা জলাধার, নদী হয়ে মহাসাগরে গিয়ে জমা হয়। তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বিশ্বের সর্বাধিক ২০টি প্লাস্টিক দূষণকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশ যা ২০০২ সালে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ বিশ্বে নজির স্থাপন করেছিল। অগ্রসর বিশ্ব অবাক তাকিয়েছিল, বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও কীভাবে পলিথিন নিষিদ্ধ করল? কিন্তু তা ধরে রাখতে কঠিন হলো । কিছু কিছু প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়ার ছত্রাবরণ থেকে আবার পলিথিনে বাজার সয়লাব হয়ে গেল। বিভিন্ন দিবসে দেখা যায় শুধু জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় অসচেতনতা এবং পরিবেশের অসহায়ত্বের গল্প।
তবে ২০১৮ সালে এসে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মাঝে আসে কিছু অভিনব চিন্তাধারা।পরিবেশ রক্ষায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নানা উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বসন্তের শুরুতে, প্রথম ফালগুনে ভালবাসা দিবস লগ্নে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একটি অন্যতম সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেচার কনজারভেশন ক্লাব এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ‘প্লাস্টিক বর্জ্যমুক্ত ভালোবাসার ক্যাম্পাস ২০২০’। উক্ত অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘ প্লাস্টিক ব্যবহারে নিজের সচেতনতার পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক স্তরের মানুষকে সচেতন করা।’
উক্ত প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের , পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব শাহাব উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ সামাদ, ডিন, জীব বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক,চেয়ারম্যান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক হুমায়ুন রেজা খান, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. গোলাম রব্বানী, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড. এ. কে. এম. রফিক আহাম্মদ, মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা |
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেচার কনজারভেশন ক্লাব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ এর অন্যতম উদ্যোক্তা ও বিভাগের অধ্যাপক ড.এম নিয়ামুল নাসের এবং অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অতিথিবৃন্দ।
“আমি বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে, দেশের প্রকৃতি রক্ষায় এবং ভবিষ্যত পৃথিবীর জন্য দূষণ পরিহারে সর্বদা সচেষ্ট থাকব”শপথ বাক্য পাঠের মধ্য দিয়ে উক্ত কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা ৫টি দলে ভাগ হয়ে কার্জন হল, শহীদ মিনার, ভিসি-ভবন চত্ত্বর, কলাভবন,কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী, টিএসসি,বাংলা একাডেমিসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পলিথিন,প্লাস্টিক সংগ্রহের পাশাপাশি এর ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন ক্যাম্পাসে আগত জনসাধারণের মধ্যে। আমরা প্রত্যেকে যদি আমাদের ভলোবাসার জায়গাগুলোকে ভালোবেসে পলিথিন প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে পারি তবেই পৃথিবী নামক গ্রহটিকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।