৩য় পর্ব :
প্রিয় শিক্ষার্থীরা!
আজকে আলোচনা করব গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সমূহ। এখানে তাই প্রথম পত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের লর্ড কার্জন (১৮৬৯ - ১৯২৫ )এর সংস্কার সমূহ আসবে, দ্বিতীয় পত্রের দ্বিতীয় অধ্যায়ের নেপোলিয়ান বোনাপার্টের সংস্কার সমূহ, এবং মহামতি লেনিনের সংস্কার সমূহ যা থাকবে দ্বিতীয় পত্রের চতুর্থ অধ্যায় ।এই তিনজন মহান সংস্কারকের সংস্কারের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে লর্ড কার্জন ,ফ্রান্সে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এবং রাশিয়ার লেনিন ইতিহাসের ইতিবাচকভাবে নিজেদের সুখ্যাতি বজায় রেখেছেন।
লর্ড কার্জনের সংস্কার সমূহ
লর্ড কার্জন ভারতীয় উপমহাদেশের শাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিলেন।তার এসব নীতির মধ্যে
১.সীমান্ত নীতি
২.রাজনৈতিক সংস্কার
৩.প্রশাসনিক সংস্কার
৩.সামরিক সংস্কার
৪.অর্থনৈতিক সংস্কার
৫.শিল্প যাতায়াত ও কৃষি সংস্কার
৫.ভূমি সংস্কার
৬. বিচার ব্যবস্থার সংস্কার
৭.বঙ্গভঙ্গ( ১৯০৫ )
লর্ড কার্জনের সংস্কার সমূহের মধ্যে রাজনৈতিক সংস্কার অন্যতম। ১৯০৫ সালে বঙ্গবিভক্তি ও ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ বিতর্কিত পদক্ষেপ হলে পূর্ব বাংলার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এর পেছনে শুধু প্রসারী রাজনীতি উদ্দেশ্য ছিল ।এটি ছিল ব্রিটিশদের ভাগ কর ও শাসন কর নীতির অংশ।
প্রশাসনের সংস্কার হিসেবে তিনি অফিসিয়ালাইজেশন ও সেন্ট্রালাইজেশন করেন। তিনি অফিসে হাজিরার নিয়মিত বিলম্ব ,ফাইলের শ্লথ গতি, ফাইলে অহেতুক দীর্ঘ মন্তব্য, বাগাড়ম্বরপূণ কার্যবিবরণী প্রভৃতি দূর করেন।
অর্থনৈতিক সংস্কার হিসেবে ভারতীয় মুদ্রা আইন পাস করে ভারতে ব্রিটিশ মুদ্রা প্রচলন এর ব্যবস্থা করেন। কার্জনের সময় ভারতীয় মুদ্রার সাথে ব্রিটিশ পাউন্ডের বিনিময় হার ছিল পাউন্ড প্রতি ১৫ রুপি। ব্যবসা-বাণিজ্য আরো বিস্তৃত ও শক্তিশালী করার জন্য কার্জন বাণিজ্য ও শিল্প দপ্তর নামে একটি নতুন দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন। ডাক ও তার কারখানা রেলওয়ে প্রশাসন খনি বন্দর ইত্যাদি এই দপ্তরের অধীনে ছিল ।১৮৯৯ সালে ভারতের উত্তর দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে খরা ও দুর্ভিক্ষ হলে তিনি দুর্ভিক্ষ কমিশন গঠন করেন।এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা ও ত্রাণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়।লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংস্কার একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। ১৯০৪ সালের' ইউনিভার্সিটি এক্ট' এর মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর তিনি সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করেন। তিনি ঢাকায় যে টাউন হল স্থাপন করেন পরবর্তী সময়ে সেখানে ঢাকা কলেজের কার্যক্রম চালু হয় অবশেষে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হয়। শিক্ষা সংস্কার করতে গিয়ে কার্জন বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিষয়ক পড়াশুনার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি অনেক জনহিতকর সংস্কারের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন।
নেপোলিয়নের সংস্কার সমূহ
প্রশাসনিক: প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের পরিবর্তে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় শাসনের মাধ্যমে তার দক্ষতা প্রমাণ করেন। তিনি ৮৩ টি প্রদেশ এবং ৫৪৭ টি জেলা আগের মতই বহাল রাখেন তবে গণতান্ত্রিক শাসনের বদলে একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চালু করেন ।প্রশাসনের বিচ্ছিন্নতাবাদ কঠোর হাতে দমন করে কাউন্সিল সদস্যদের মাধ্যমে এমন একটি শক্তিশালী আমলাতন্ত্র গড়ে তুলেন যাদের তার প্রতি ছিল আকুন্ঠ সমর্থন।
অর্থনৈতিক: ১৮০০ সালে নেপোলিয়ন ব্যাংক অফ ফ্রান্স প্রতিষ্ঠা করেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের মাধ্যমে সরাসরি কর আদায়ের ব্যবস্থা করেন। তার সময়ে ব্যাংক থেকে ৬% সুদে ঋণদানের ব্যবস্থা করায় কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটে।
আইনবিষয়ক: নেপোলিয়নের সংস্কার সমূহের মধ্যে চির স্মরণীয় আছে তার আইনবিধি বা কোড অফ নেপোলিয়ন। তিনি নিজে ৮৪টি অধিবেশনে মিলিত হয়ে বিশেষজ্ঞর আইনবিধির মূল সূত্রগুলো সংকলন করেন ।এই সংকলে মোট ২২৮৭ টি ধারা ছিল। আইনগুলার প্রধানতম ধারা ছিল—সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভের অধিকার, স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বিবাহ আইন মজবুত করা, বিচার ব্যবস্থায় জুড়ি প্রথা চালু করা, ফৌজদারী আইনবিধি যুক্তিবাদ ও প্রাকৃতিক আইনের আলোকে রচনা করা.
নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত নাগরিক তৈরি করা। তিনি প্রকৌশল, চিকিৎসা, প্রশাসন ইত্যাদি শিক্ষার উপর জোর দেন। অর্থনীতি ,ইতিহাস, সাহিত্য ইত্যাদি শিক্ষার উপর এ সময় কম গুরুত্ব দেয়া হয় ।নেপোলিয়ন তার শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি পরিশ্রমী জাতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সৃষ্টিশীল আবেগ নির্ভর জাতি নয়।
লেনিনের সংস্কার সমূহ
-----১৯১৭ সালে নভেম্বর মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর বলশেভিক সরকার সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি জাতীয় সংবিধান সভা গঠনের উদ্দেশ্যে নির্বাচন দেয় কিন্তু তা বাতিল করতে বাধ্য হয়। ১৯২৪ সালে রাশিয়ায় একটি স্থায়ী সংবিধান গৃহীত হয়। এ সংবিধানে রাশিয়াকে সংযুক্ত সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়। দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা চারটি সংস্থার মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়।ক.সোভিয়েত খ. সোভিয়েত ইউনিয়ন গ.গুপ্ত পুলিশ ঘ.সেনাবাহিনী। প্রতি গ্রামে গ্রামবাসীর মাধ্যমে একটি সোভিয়েত গঠন করা হয়। এতে সদস্যরা প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত হতেন।গ্রাম সোভিয়েত গুলোর সদস্যরা আঞ্চলিক সোভিয়েত, এভাবে প্রাদেশিক সোভিয়েত এবং প্রজাতন্ত্রের সোভিয়েত নির্বাচিত করা হয় ।সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সুপ্রিম সোভিয়েতের সদস্য সংখ্যা ২০০০।এরা ৩০০ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাচক সমিতি গঠন করে ।লেলিন ছিলেন এই মন্ত্রিসভার প্রধান। উল্লেখ্য, লেনিন এর সংস্কার বলতে বলশেভিক সরকারের সংস্কার সমূহ বিবেচনা করা হবে।
-------------
লেখক:আলো আরজুমান বানু
সহকারী অধ্যাপক
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ
আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০