-----------
প্রিয় পরীক্ষার্থীরা! আশা করি তোমরা ভালো আছো।তোমরা নিশ্চয় গত পর্বে আমার ইতিহাস প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের সিলেবাস ও মানবণ্টনের আলোচনা বুঝতে পেরেছো এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছো। তোমরা জেনে খুশি হবে যে ইতিহাস প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের বিভিন্ন অধ্যায় ধারাবাহিক ভাবে নিউজ ভিশনের ক্যাম্পাস পাতায় প্রকাশিত হবে।আজ আমি প্রথম পর্বের বাকি অংশ আলোচনা করবো।
বলশেভিক বিপ্লব
১৯১৭ সালের অক্টোবর মাসে এ বিপ্লব সংঘটিত হওয়ায় এর আরেকটি নাম অক্টোবর বিপ্লব ।রাশিয়ায় বিপ্লব সংঘটিত হওয়ায় একে রুশ বিপ্লব বলা হয় ।আবার লেলিনের নেতৃত্বে বলশেভিক দল এ বিপ্লব ঘটিয়েছিল বলে একে বলশেভিক বিপ্লব নামেও আখ্যায়িত করা হয়।
বিপ্লবপূর্ব রাশিয়ায় অর্থনৈতিক অবস্থা
----বিশ শতকের প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে রাশিয়ার অর্থনীতি চরম শংকটপন্ন ছিল । ১৮৬১ সালে ভূমিদাস প্রথা রহিত হলেও সামন্ত প্রথা বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত বহাল ছিল। তাছাড়া রাশিয়ার অর্থনীতি ছিল কৃষি নির্ভর। জার সরকারের উদাসীনতার কারণে শিল্প ও খনিজ অগ্রগতি লাভ করেনি। অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে বাড়তি লোকের খাদ্য ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ সরকারের ছিল না। আবার উচ্চমূল্যে কৃষকগণ জমি ক্রয় করতে পারত না বলে সকল জমি ভূস্বামীদের হাতে চলে যায়। এক হিসেবে দেখা যায় রাশিয়ার ১.৫% লোকের হাতে ২৫ শতাংশ জমি থাকছে।
সামাজিক অবস্থা :
---রাশিয়ার সমাজে বরাবরই দুটি শ্রেণী বিদ্যমান ছিল। একটি অভিজাত অন্যটি ভূমিহীন। দেশের সব জমি ছিল রাজ পরিবার ও অভিজাতদের দখলে। বিপ্লব-পূর্ব রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৭৭ ভাগ ভূমিহীন বা কৃষক ছিল। উৎপাদনের ৫০% কৃষি থেকে আসতো অথচ জমি মালিকানা কৃষকদের ছিল না।
রাজনৈতিক অবস্থা :
---- ১৯ শতকের শেষ ভাগের পূর্ব পর্যন্ত রাশিয়ায় জারতন্ত্রের নিষ্পেষণমূলক শাসনের কারণে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটতে পারেনি।মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অনুপস্থিতি ভূমিহীন বা ভূমি দাসদের চরম আর্থিক দুর্দশা অভিজাতন্ত্রের দাপট এখানে কোন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার বিকাশ করতে দেয়নি।
সংস্কৃতির অবস্থা :
----জনগণের মনে তাদের বেসিক প্রয়োজনকে কেন্দ্র করে বিপ্লবের সূচনা হলে তা সফল হয় ।লেলিন তার এপ্রিল থিসিসের মাধ্যমে শ্রমিক কৃষককে বিপ্লবের উপযুক্ত সময় ও কর্মকৌশল সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিলে রুশ বিপ্লব সফল হয়।
পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থ সামাজিক বৈষম্য অর্থনৈতিক বৈষম্য
----পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের মাত্রা ছিল অধিক এ কারণে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়াতে পারেনি নিজের ছকটি দেখলেই আমরা এটা বুঝতে পারবো
-------পশ্চিম পাকিস্তান ---পূর্ব পাকিস্তান
রাজস্ব খাতে ব্যয় ৭৫%----- ২৫ %
মুদ্রার ব্যায়-------- ৮০% ------২০%
শিল্প উন্নয়ন ব্যয় ৭৫%--------২৪%
সামাজিক বৈষম্য :
----সামাজিক অবকাঠামগত দিক দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান অনুন্নত ছিল হাসপাতাল অফিস আদালত স্কুল কলেজ রাস্তাঘাট ডাকঘর সবদিক থেকে পূর্ব পাকিস্তান বৈষম্যের শিকার ছিল
রাজনৈতিক বৈষম্য :
----পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বৈষম্যের শিকার হয়। কোন ধরনের রাজনৈতিক সুষ্ঠু ও পরিবেশ এখানে ছিল না। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ২৩ বছরে মাত্র একবারের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানের পথ বাঙ্গালীদের দেয়া হয়েছিল। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে পূর্ব বাংলায় ৩ এপ্রিল এ কে ফজলুল হক প্রাদেশিক সরকার গঠন করেন ।পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে ১৯৫৪ সালের ২৯ মে তার মন্ত্রিসভা কে বরখাস্ত করে পূর্ব বাংলায় কেন্দ্রীয় শাসন জারি করা হয়।
সামরিক ক্ষেত্রে বৈষম্য :
---সামরিক বাহিনীতে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বাঙালি নিয়োগ লাভ করে ৮১০ জন । রিক্রুটিং কমিটিগুলো তৈরি করা হয়েছিল অবাঙালিদের দ্বারা। দেহের মাপ এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছিল যে খুব কম বাঙালি দৈহিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ ছিল। তাছাড়া সামরিক বাহিনীতে যোগ দিলেই পোস্টিং দেওয়াতে পশ্চিম পাকিস্তানের ।খুব কম অভিভাবকই তাদের সন্তানকে সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহ দিতেন ।এবার দেখা যাক নেভী ও বিমান বাহিনীতে নিয়োগের বৈষম্য।
পদবি -পশ্চিম প অফিসারেরসংখ্যা --পূর্ব প অফিসারের স
নেভি---৫৯৩----------------------০৭
বিমান -৬৪০---------------------৬০
সামরিক ক্ষেত্রে বরাদ্দের বেলায়ও পূর্ব বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তান ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হয়। ১৯৪৭ - ৫৬ সময়কালে প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর গুলোর প্রশাসনিক খরচ ছিল ২৫৬৩.৯ মিলিয়ন টাকা যার পুরোটাই পশ্চিম অংশে ব্যয় করা হয়েছিল ।এ সময়কালে প্রতিরক্ষা খাতে মোট ব্যয় ছিল ৪৫৬৫.৭ মিলিয়ন টাকা। এর মধ্যে মাত্র ১৬৭.২ মিলিয়ন টাকা ব্যয় করা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে।
লেখক :
আলো আরজুমান বানু
সহকারী অধ্যাপক
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ
আইইআর,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০