বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহানের মেয়ে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি বিভাগের প্রভাষক সানজানা সোবহানকে শিক্ষাছুটি শেষ করে যথাসময়ে যোগদান না করায় শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে সাবেক উপাচার্যের মেয়ে হওয়ায় তাকে উদ্দ্যেশ্যমূলকভাবে শোকজ করা হয়েছে বলে দাবি এই শিক্ষিকার।
গত ২১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ৩১.০৭.২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত ৫২৪তম সিন্ডিকেট সভার ২৫ নং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি কেন শিক্ষাছুটি বাতিলের আদেশ জারি ও প্রাপ্তির পরেও দেশে না ফিরে অনুনমোদিতভাবে কোন অধিকার বলে বিদেশে অবস্থান করছেন, কেন আপনি যথা সময়ে বিভাগে যোগদান করেননি এবং কেন তদন্ত কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয়কে অসহযোগিতা ও অবজ্ঞা করেছেন এবং সিন্ডিকেটের আদেশ অমান্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন তার ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “এই পত্রের উত্তর প্রাপ্তির পরে আপনার বিভাগে যোগদান বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।”
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অভিযোগ এবং চিঠির প্রেক্ষিতে সানজানা সোবহান বলেন, “আমি সমস্ত নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট পূর্ণ বেতনে আমার শিক্ষা ছুটিটিও মঞ্জুর করে। আমার ডিগ্রি শেষ হতে যখন সাত মাস বাকি, তখন হঠাৎ করেই আমাকে জানানো হয়, আমার ছুটিটি মঞ্জুর হয়নি; অতিসত্বর আমি যেন বিভাগে যোগদান করি। স্কলারশিপের শর্তানুযায়ী, মাঝপথে ডিগ্রিটি ছেড়ে দিলে আমাকে প্রায় ৪২ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতো। তাই, পুনরায় ছুটির আবেদন করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৭ মাস পর জানায়, যে তারা আমার পুনরায় করা ছুটির আবেদনটি আমলে নেননি। আমি ২৪ মে তারিখে জয়েনও করেছি বিভাগে, এখন দেখছি নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করে আমার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হচ্ছে। ”
সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি সংক্রান্ত বেশ কিছু চিঠি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। চিঠিগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে স্নাতকোত্তর কোর্সের জন্য স্কলারশিপ পান সানজানা সোবহান। ২০২২ সালের ৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে দেড় বছরের শিক্ষাছুটি প্রদান করা হয়। একই বছরের ৮ মে, ছুটি চলাকালীন তার বেতন চালু রাখার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ২৬ জুলাই, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ড. শেখ সা’দ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, “০৪-০৭-২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক এবং এই অফিসের ২৩-০৩-২০২২ তারিখের ৬৬২/১(৩)/১ই-৭২৫৮ / সাশা নং পরার অনুবৃত্তিক্রমে আদিষ্ট হয়ে জানাচ্ছি যে, আপনাকে ০১-০৩-২০২২ হতে ৩১-০৭-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত ০১ (এক) বছর ০৫ (পাঁচ) মাস শিক্ষাছুটি পূর্ণবেতনে মঞ্জুর করা হয়েছে।”
তবে, এর তিন মাস পর আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, সানজানা সোবহানের ছুটি শিক্ষা পরিষদ সভার ৪৫ নং সিদ্ধান্ত এবং 08-07-2022 তারিখে অনুষ্ঠিত ৫১৫তম সিন্ডিকেট সভার ৪৫ নং সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে ০১-০৩-২০২২ হতে ৩১-০৭-২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সানজানা সোবহানের ০১ (এক) বছর ০৫ (পাঁচ) মাস শিক্ষাছুটির আবেদন অনুমোদিত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সানজানা সোবহানের পুনরায় করা আবেদনটি বিবেচনায় না নিয়ে পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল আছে মর্মে আরেকটি চিঠি দেয় চলতি বছরের ১০ মে। তবে শিক্ষাছুটি শেষ করে সানজানা সোবহান বিভাগে যোগদান করেন চলতি বছরের ২৫ মে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুস সালাম সানাজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি প্রসঙ্গে বলেন, “বিভিন্ন অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষে শিক্ষাছুটির বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদনের পর সিন্ডিকেটে যায়। সাবেক উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের জামাতার (এটিএম শাহেদ জামান, শিক্ষক, আইবিএ) নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছিল। তদন্ত কমিটি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানের বিষয়েও কিছু অভিযোগ করেন।
পরবর্তীত, একাডেমিক কাউন্সিলেও বিষয়টি আলোচিত হয় এবং সানজানা সোবহানের শিক্ষাছুটি স্থগিত করা হয়।”
সানজানা সোবহানকে দেওয়া ২১ আগস্টের চিঠির প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ওনার কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে, তিনি সেগুলো দিবেন। এরপর, সেগুলো সিন্ডিকেটে যাবে। সিন্ডিকেটে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানাবে।”
জানা গেছে ছুটি স্থগিত করা হলেও, সানজানা সোবহানের বেতন চালু রাখা প্রসঙ্গে কোনো চিঠি বা আদেশ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে ট্যুরিজম বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সানজানা সোবহানের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা চলমান আছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারা হেনস্তার স্বীকার হচ্ছেন উল্লেখ করে সানজানা সোবহান বলেন, “আমি সাবেক উপাচার্যের মেয়ে—সে কারণেই আমার বিরুদ্ধে এসব করা হচ্ছে। কোনো অভিযোগ নেই, অনুযোগ নেই, আমি কোনো মার্ডারের আসামিও না, সকল নিয়ম মেনেই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ গিয়েছি; তাহলে আমার ত্রুটি কোথায়?”
সানজানা সোবহান আরও জানান, “আর্থিকভাবেও আমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। শিক্ষাছুটি থেকে ফিরে আসার পর স্যালারিটার একটা ফিক্সেশন হয়, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমার সেটি হয়নি। আমার প্রমোশনের জন্য নিয়োগ বোর্ডও গঠন করা হয়েছিল; কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এটি বাতিল করা হয়। আমার প্রমোশনটিও আটকে রাখা হয়েছে।”