মো:তাওহিদুল ইসলাম শিশির, বুটেক্স প্রতিনিধি
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামানের পদত্যাগ চান বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) একাংশ শিক্ষক। তাঁরা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে উপাচার্যের পদত্যাগ চাচ্ছেন।
পদত্যাগের বিষয়ে ২৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো সরব হন শিক্ষকরা। এরপর ২৭ আগস্ট প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করেন তাঁরা। সেখানে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা ও অসংগতির অভিযোগ উল্লেখ করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। আজ শুক্রবার (৩০ আগস্ট) শিক্ষকদের একাংশের পক্ষ হতে উপাচার্যের পদত্যাগ চাওয়া নিয়ে সম্মিলিত বিবৃতি প্রদান করেন।
যেসব শিক্ষক উপাচার্যের পদত্যাগ চান তাঁরা হলেন ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. জুলহাস উদ্দিন, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ মো. মামুন কবীর, টেক্সটাইল মেশিন ডিজাইন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল আলম (ডালিম), ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান খাঁন, টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. মাসুম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কাওসারুল ইসলাম প্রমুখ।
শিক্ষকদের সম্মিলিত বিবৃতিতে উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি, দলীয়করণ, স্বৈরাচারিতা ও নানাবিধ অপতৎপরতা অভিযোগ তুলে ধরেন। যেসব অভিযোগ তুলে ধরা হয় তা হলো—
১। অধ্যাপক ড. শাহ আলিমুজ্জামান সদ্যবিদায়ী আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায় উপাচার্য হয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে পতিত সরকারকে সহযোগীতার জন্য একদফার আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মানববন্ধনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ করেন।
২। ৪ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে দমনের জন্য উপাচার্য এবং তার একনিষ্ঠ দলীয় অনুসারী কিছু শিক্ষকবৃন্দ সাধারণ শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ আন্দোলনরত ছাত্রদের নামের তালিকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ডিবি অফিসে প্রেরণ করেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থনকারী শিক্ষকগণ ওই মুহূর্তে গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগেছিলেন।
৩। মুক্ত বুদ্ধির চিন্তা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও জ্ঞান সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য বর্তমান ভিসি তাঁর সিদ্ধান্তের বাইরে ভিন্ন মত পোষণ করলেই তাকে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ বা পদোন্নতিতে হয়রানি করেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এই বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সম্প্রীতি একজন অধ্যাপক ৪.৫ কোটি টাকার যন্ত্র কেনার কাজে আইনি জটিলতার বিষয়টিতে মত প্রকাশ করলে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন।
৪। পরিচালক গবেষণা ও পরিচালক বহিরাঙ্গন নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ভঙ্গ করেছেন বর্তমান উপাচার্য। উল্লেখিত পরিচালক পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষকের উল্লেখ থাকলেও ভিসি আইন অমান্য করে সহকারী ও সহযোগী আধ্যাপক পদমর্যাদার শিক্ষককে দায়িত্ব প্রদান করেছেন।
৫। বর্তমান ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে এক প্রস্তাব প্রেরণ করেছিলেন। প্রেরিত প্রস্তাবে বর্তমান ভিসি কোনো গ্রেড-১ অধ্যাপকের নাম দেননি, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভিসি তাঁর দলীয় শিক্ষকদের নাম প্রস্তাব করেন।
৬। বর্তমান উপাচার্য তাঁর প্রকাশিত বইটিতে চৌর্যবৃত্তি করেছেন যা একজন শিক্ষকের জন্য নৈতিক স্খলন এবং এ বিষয়টি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
৭। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বর্তমান রেজিস্ট্রার যখন রেজিস্ট্রার পদের অতিরিক্ত দায়িত্বে ছিলেন তখন প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার আর্থিক অনিয়ম করে। বর্তমান উপাচার্য এমন একজন আর্থিক অনিয়মকারী কর্মকর্তাকে রেজিস্ট্রার পদে নিয়োগ প্রদান করেছেন।
৮। বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় একজন শিক্ষক, একজন কর্মকর্তা ও একজন কর্মচারীকে পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে যাহারা বর্তমান ভিসির দলীয় লোকজন। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০