জীবন মানেই সংগ্রাম, যুদ্ধ করে অভিযোজন ক্ষমতাধর প্রাণিদের মত সমাজে টিকে থাকা।
জীবনের সেরা ভুল তারাই করেছে, যারা মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহন করেছে। যাবতীয় ভুলের বিপরীতে শুধু মাএ একটাই ভুল, মধ্যবিত্ত পরিবারে কেন জন্ম? এই ভুলের পাশ্চ্যিৎতের সামনে দাড়িয়ে থাকতে হয় মৃত্যু পর্যন্ত।
একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে যারা বাস করে ঠিক তারাই বলতে পারবে, জীবনটা কত কঠিনতম।হাজারো স্পৃহা থাকা সত্যেও শত শত শখ, স্বপ্ন টাঙ্গিয়ে রাখে অভাবের দেয়ালে ঠিক না চলা ঘড়িটির মত।খুব করে মন চাইলেও অভাবের তাড়নায় বোবা স্বপ্ন গুলোর মুখে কখনো বাচ্য ফুঁটে না।
খুব বেশি না, একটু কষ্ট করে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের দিকে তাকালেই বুঝা যাবে,তারা কি ভাবে পারে।
না,তাদের এসিওয়ালা কোন গাড়ি নেই।তবুও খুব সাধারনের ভিতরে একটা মার্জিত কাপড় ও সুন্দর একটা সাঁজ ধরে রাখতে হয়।সেই সাঁজ টুকু নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষে পাব্লিক বাসে উঠে কাদের উপর সাধারণ মানের একটা ব্যাগ রেখে অমানুষ গুলার কনুইয়ের গুতা সামলে নিয়ে মাথা নিঁচু করে নেমে যেতে হয়,রোজ ভার্সিটিতে।
দামি রেস্টুরেন্টে যাওয়া হয়না,ক্যানটিনে একা একা খাওয়া যায়না;বাসা থেকে টিফিন আনতেও লজ্জা লাগে।তাই হয়তো ডায়েটের নামে খালি পেটেই হাসি মুখে চলে ভার্সিটির ক্লাস।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে এক বেলা না খেয়ে থাকলে কেউ দেখবেনা। কিন্তুু মুখ ভর্তি জোর করে হাসি,আর চোখে একটু কাজল তো দেয়াই লাগবে মনুষ্য মেলে। নিজের ব্যাক্তিতত্ত্ব কে ধরে রাখতেই হবে, হোক তা মিথ্যে অভিনয়।
দামি পোশাক,উঁচু হিল পড়া হয়তো বা দামি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যাওয়া মেয়েগুলোর দিকে শুধু তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমরা উচ্চ বাক্যে এই বলার সাহস রাখিনা কেউ।
আর এই মধ্যবিত্ত মেয়ে গুলো ওড়না পেঁচিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে গেলেও, আমরা তো আমরাই! গাড়ির হেল্পার থেকে শুরু করে কোন শ্রেণিই ছাড়ি না উৎক্ত করতে।
এগুলো তো শুধু চলা ফেরার ক্ষেএে।
অনকে মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ের হয়তো বাবা নেই,ছোট ছোট ভাই-বোন এবং বিধবা মা আছে।অন্যথা বাবা থেকেও অসুস্থ বা নেই কোন রোজগার ও পড়ানোর ক্ষমতা।টিউশনির টাকা অথবা পার্ট টাইম জব দিয়েও চালিয়ে নিতে হয় নিজের পড়া লেখা।
কি অদ্ভুত শক্তি সম্পূর্ন এই মেয়ে গুলো।আপনি, আমি, আমরা কথা বলে ; বা চলা ফেরায় তাদের দিকে তাকিয়ে এক চুল পরিমাণ বুঝতে পারবো না।একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের চাইতে কত বেশি যন্রনা চেপে রেখে মিষ্টি করে হাসতে হয়,আর বলতে হয় সব ঠিকই আছে একদম।ছেলেদের মত রাগ করা বা দুঃখ কষ্ট ভুলতে বাড়ি থেকে চলে গিয়ে কিছু করার সাধ্য নেই;না আছে কোন সুযোগ।চোখের জল মুছতে মুছতেই রাগ, অভিমান কষ্টগুলো গিলে ফেলে নিজের কাজে হাত দিতে হয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রতিটা বাবার, ভাইয়ের,স্বামীর, ছেলের গল্প এবং মায়েদের ঝুড়ি ভরা কষ্টের কাহিনী গুলাও সবার জানা আছে খুব করে।
কিন্তুু একটা মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে যাকে আর দশটা ছেলের মতই বাসে চড়ে,পায়ে হেঁটে কলেজে যেতে, টিউশনি করতে হয়।আবার চোখের কাজল,ঠোঁটের লিপষ্টিক ও সাধারনের মধ্যে একটা জামা ধরে রাখা চাই।তাদের অসহ্য কষ্ট ও ব্যাথার কথা হয়তো আমরা জানি না।কারন, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বলে কথা। ভিতরটা ধুমড়ে মুচড়ে ফেঁটে যাবে তবুও তাকে নিজের শ্রেণি ও ব্যাক্তিতত্ত্ব
ধরে রাখতেই এবং সব অবস্থায় সামলে নিতে হবে। হোকনা কিছু মিথ্যে গল্প তারপরও।
এত কিছু করার পরও সেই মেয়ে গুলা চাকুরী করে খায়, বাবা মা-কে খাওয়ায় ছোট ছোট ভাই-বোন তার উপর নির্ভর করে।সেই মেয়ে গুলার চলা ফেরা নিয়ে এই আমি,আপনি,আমরাই কথা বলি কটুউক্তি করি।কেউ তার ঘরের খোঁজ নিবো না অথচ একটু সেঁজে গুজে অফিসে গেলেই তার চরিএ খারাপ। সন্ধ্যায় বাহিরে দেখা মানেই কারো সাথে অবৈধ সম্পর্ক।আর সব চাইতে ভয়ংকর ব্যাপার হলো গরীব বলে লোভী ভেবে কিনতে চাওয়া কিছু হিংস্র মানুষ রুপী পশু।
এত কিছুর মাঝেও মেয়েগুলোর মনের ভিতর কি আগুন,যন্রনা হচ্ছে খুব বেশি কাছে না গেলে তার কাজলে ঢাকা চোখের ভাজে লুকিয়ে থাকা জল আপনি আমি কখনোই দেখবো না।
এরাই মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে,যারা সব পরিস্থিতিতেই নিজেকে মানিয়ে নিয়ে বাঁচতে পারে।।
------------------
সুমাইয়া বিথী
প্রাণীবিদ্যা বিভাগ(২য় বর্ষ)
সরকারি সা'দত কলেজ,
করটিয়া টাংগাইল।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০