-----------------------------
পুলিশের কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক ৷ কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা না পেলে মানুষ অসন্তুষ্ট হয় ৷ এরপরও অবশ্য বিপদে মানুষ পুলিশের কাছেই ছুটে যায় ৷ দু'চার জনের জন্য পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে । এই সংকট থেকে তাকে রক্ষা করতে হবে । দু-চারজনের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, এটা মানা যায় না বলে অতীতে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন । পুলিশের অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনতে পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ নির্দেশনাও গেছে । কিন্তু তার পরও থেমে নেই পুলিশের অপরাধ তৎপরতা ।
কতিপয় ব্যাপরোয়া অসাধু পুলিশ সদস্যদের জন্য পুরো পুলিশ বাহিনীকে দোষারোপ করা যায় না । তাদের ত্যাগ ও অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে । মহান মুক্তিযুদ্ধে ২৫শে মার্চ কালোরাতে সর্বপ্রথম রাজারবাগ পুলিশ লেইনে ঘুমন্ত পুলিশ সদস্যদের উপর গুলি চালায় পাকহানাদার বাহিনী । ১৩০০ পুলিশ সদস্য কর্মস্থল ত্যাগ করে একযোগে পাকিস্থান সরকারের আনুগত্য অস্বীকার করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় । পুলিশের মধ্যে প্রচুর সংখ্যক বীরবিক্রম, বীরউত্তম, বীরপ্রতীক খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে । দেশে জঙ্গি দমন সহ জাতির নানা দুর্যোগে, দুর্ভোগে তাদের বিশাল অবদান রয়েছে । বৈশ্মিক মহামারী কভিট-১৯ করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশ আইন শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবাসহ জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং নানাবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানবিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় । এই পর্যন্ত ৬৬ জন পুলিশ কোভিট-১৯ এ শাহাদাত বরণ করেন । ১৯৮৯ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যান্য বাহিনীর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে অংশ নিচ্ছেন ৷ মিশনে নারী পুলিশ যুক্ত হয় ২০১০ সাল থেকে ৷ শান্তি মিশনে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছেন ৷ জাতিসংঘের নয়টি মিশনে এক হাজারেরও বেশি পুলিশ সদস্য সুনামের সাথে কাজ করছেন ৷ মিশনে তিন শতাধিক নারী পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন ৷ ফলে গোলামী যুগের বৃটিশ বেনিয়া পুলিশ আর স্বাধীন দেশের পুলিশের মধ্যে বিস্তর ফারেকের চিত্রটি ফুটে উঠে ।
একটি সভ্য স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু' । অপরাধীরা পুলিশকে ভয় পাবে আর সাধারণ জনগণ পুলিশকে বন্ধু ভাববে এইটি হবে মানবাধিকার বান্ধব পুলিশ ও সুশাসনের জন্য পুলিশের চরিত্র । উন্নত বিশ্ব সহ পুলিশের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধাবোধ অনেকক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য এবং এটা একটা মর্যাদাবান পেশা । কেননা বিপদগ্রস্ত মানুষকে অতি দ্রুত সার্ভিস প্রদানে তাদের জুড়ি নেই । এমন কি মা-বাবার নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য একটি শিশুও যদি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহয্য চায় তাতে সাড়া দিতে পুলিশের অতি অল্প সময় লাগে মাত্র । যিনি ধরবেন তিনি বিচার করবেন না । পুলিশের কাজ হল অপরাধীকে ধরে বিচারের কাছে সপোর্দ করা । সঠিকভাবে এজহার গ্রহণ, সুষ্ঠু তদন্ত উপস্থাপন ও সাক্ষ্য প্রমাণের নিমিত্তে চার্জশিট বা চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা, আদালতের আদেশ কার্যকর করে সাক্ষী, পলাতক আসামী গ্রেফতার, আলামত জব্দ উপস্থাপন গ্রহণ ইত্যাদি পুলিশের কাজ ।পুলিশকে আরো নানাবিধ প্রশাসনিক ও নির্দেশ ও দায়িত্ব পালন করতে হয় । তদন্তের জন্য পৃথক পুলিশের ব্যবস্থা এখনও কার্যকরভাবে গড়ে উঠেনি । পোস্টিং বাণিজ্য এদেশে একটা বড় সংকট একই এলাকায় ঘুরে ঘুরে পোস্টিং এর জন্য দৌড় ঝাপ লক্ষণিয় । এতে পুলিশ অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে ।
তবে আগে থেকে পরিস্থিতি পাল্টাচ্ছে ৷ পুলিশকে জনবান্ধব করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর এখন নিয়মিত প্রশিক্ষণের আয়োজন করে ৷ মানবাধিকারেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ৷ বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, মামলা গ্রহণ, বিচারে সহায়তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও ভিআইপি নিরাপত্তা-প্রটোকলসহ অনেক দায়িত্ব পালন করে ৷ সাথে করে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও ৷ সারা দেশে ৬৩৩টি থানার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে বাংলাদেশ পুলিশ ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে পুলিশের ইউনিটগুলো হলো: রেঞ্জ পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা (এসবি), ব্যাটেলিয়ন পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ ৷ বিভাগীয় শহরগুলোতে কাজ করে জেলাও মেট্রোপলিটন পুলিশ ৷ পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের কাজও শুরু হয়েছে । এর বাইরে পুলিশ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ও পুলিশ হাসপাতাল আছে ৷ বহুল আলোচিত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র্যাব-ও পুলিশের অন্তর্গত ৷ এ রকম আরেকটি হলো আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন বা এপিবিএন ৷ হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি বিশেষ বিভাগ কাজ শুরু করে ৷ —কাউন্টার টেররিজম' ইউনিট নামের এই বিভাগটি এখন সারাদেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে ৷ রয়েছে —সোয়াত' নামের —ল্যাপিড রেসপন্স টিম'-ও ৷ জঙ্গিবিরোধী অভিযানে তারাই মূল অভিযান পরিচালনা করে থাকে ৷ এছাড়া সক্ষমতা বাড়াতে যুক্ত হয়েছে —কমান্ডো ইউনিট' ৷ এরই মধ্যে এই ইউনিটের জন্য ৪০ জন সদস্যকে দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ৷ ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি থেকে দেশেই শুরু হচ্ছে নিয়মিত কমান্ডো ট্রেনিং ৷ পুলিশ সদস্যদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ৷ এর জন্য পুলিশের আলাদা ট্রেনিং ইন্সটিটিউট আছে ৷ এফবিআইসহ বিশ্বের উন্নত দেশে পুলিশ সদস্যরা প্রশিক্ষণ পান ৷ আবার ঐ সব দেশ থেকে প্রশিক্ষক এসেও প্রশিক্ষণ দেন বাংলাদেশে ৷ বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক পুলিশি সংস্থা ইন্টারপোল-এর সদস্য ৷ তাই পুলিশ সদর দপ্তরে আছে ইন্টারপোল ডেস্ক ৷ এই ডেস্কের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ছাড়াও নানা ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে ৷ এর বাইরে বাংলাদেশ পুলিশে এখন ফরেনসিক, সাইবার ক্রাইম, মানি লন্ডারিং, পোস্ট ব্লাস্ট ইনভেস্টিগেশন, ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন, নিউ টেকনিক অফ ইনভেস্টিগেশন, কল ডায়ালিং রেকর্ড (সিডিআর), বেসিক ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ৷ এ সব প্রশিক্ষণ হয় —নিড অ্যাসেসমেন্ট' করে ৷ পুলিশ সদস্যদের কেউ কেউ অবশ্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়েন ৷ এই অপরাধ কখনো হয় দায়িত্ব পালনের সময়, আবার কখনো দায়িত্ব পালনের বাইরে গিয়েও অপরাধ করার অভিযোগ আছে ৷
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই । পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপকর্মে জড়ানোর অভিযোগ বরাবরই রয়েছে । ঢাকাসহ সারা দেশের থানা ও ইউনিটগুলোতে কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও পুলিশের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি । আবার এটাও ঠিক যে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত হচ্ছে । বদলি, প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্তের মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে কিন্তু পুলিশের অপরাধ বন্ধ হচ্ছে না । মাঠপর্যায়ের কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেলে যে কাউকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে দ্বিধা করছে না । আর এই বিভাগটির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দপ্তর অভিযুক্ত সদস্যদের গুরুদণ্ড না দিয়ে লঘুদণ্ড দেয় । ভুক্তভোগী অনেকেরই অভিযোগ, ফৌজদারি মামলার অপরাধ করলেও বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দিয়েই ইতি টানা হয় । অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয় । একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে সময় নিয়ে কৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করা হয়।সদর দপ্তরে কর্মরত পুলিশের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগই বেশি ৷ পুলিশ সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেলের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭২১টি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷ এই মামলাগুলোতে ৭৯৮ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ৷ এদের মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৬ সালেই পুলিশের বিরুদ্ধে মোট ১২৮টি মামলা দায়ের হয় ৷ অন্যদিকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পাঠায় ৷ এতে ২০১২ সালের ১৫৬টি, ২০১৩ সালের ১০টি, ২০১৪ সালের ৫৩টি, ২০১৫ সালের ৭৩টি এবং ২০১৬ সালের ১৬টি অভিযোগ রয়েছে ৷
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এ সব অভিযোগের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ রয়েছে গুমের ৷ যার সংখ্যা ২৭টি ৷ এর বাইরে ২৪টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের ৷ পুলিশি হয়রানির অভিযোগ রয়েছে ২০টি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও ক্রসফায়ারের অভিযোগ রয়েছে ১২টি, ৭টি অভিযোগ রয়েছে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর ৷ এখানেই শেষ নয় সম্প্রতি কক্সবাজারে টেকনাফের ঘটনায় দেশ নড়ে উঠেছে ৷ শুধু টেকনাফে ২০৪ জনকে ক্রসফায়ার দেয়ার পরও মাদক ব্যবসার কোন কুল-কিনারা হয়নি ।পুলিশের বিরুদ্ধে নিরীহ লোকজনকে ফাসানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে ।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অপরাধী পুলিশের বিচার চাইলে তাদেরও হয়রানির শিকার হতে হয় । অন্যরা অপরাধীদের সমর্থন দিয়ে পুরো পুলিশ বাহিনীকে কালিমা লিপ্ত করছে । সঠিক তদন্ত না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে চারটি, জমি ও সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে চারটি, চারটি অভিযোগ রয়েছে চাঁদাবাজির আর ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে দু'টি করে ৷ এছাড়া ঘুস, অর্থ আদায়, লুটপাট, গ্রেপ্তারের পর অস্বীকার ও ভূমি দখলের অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে ৷ অপরাধ দমন এবং তদন্তই পুলিশের প্রধান কাজ ৷ আর এ কাজ করতে গিয়ে পুলিশকে মামলা গ্রহণ, মামলার তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল এবং বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে হয় ৷ পুলিশের অভিযোগপত্রের ওপরই মামলার বিচারের ফল বহুলাংশে নির্ভর করে ৷ আদালতে যদি তদন্ত অনুযায়ী সাক্ষী-প্রমাণ হাজির করা না যায় তাহলে মামলা প্রমাণ এবং অপরাধীকে শাস্তি দেয়া কঠিন ৷ তাই বিচার ব্যবস্থার সাফল্য পুলিশের সাফল্যের ওপরও নির্ভর করে ৷ কিন্তু এই প্রধান কাজের বাইরে পুলিশকে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধ প্রতিরোধে কাজ করতে হয় ৷ দেশে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে নিরাপত্তাসহ নানা ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশের বড় একটি জনশক্তি ব্যস্ত থাকে ৷ আইন প্রয়োগের চেয়ে আইন অমান্যকারীদের নিবৃত্ত করতেই পুলিশকে অনেক শক্তি খরচ করতে হয় ৷ এর বাইরে ভিআইপিদের নিরাপত্তা, প্রটোকল, স্থাপনার নিরাপত্তার কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয় পুলিশকে ৷ সাধারণত সিআইডি বড় ধরনের অপরাধের তদন্ত করে৷ থানা-পুলিশের বাইরে এই সংস্থা সরাসরি তদন্ত কাজেই নিয়োজিত ৷ নতুন প্রতিষ্ঠিত পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশকে এফবিআই-এর আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে ৷ এসবি আগাম গোয়েন্দা তথ্য ছাড়াও বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের নিয়ে কাজ করে ৷ শিল্প পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশ ও টুরিস্ট পুলিশ বাংলাদেশে বলতে গেলে নুতন ৷ এরা বিশেষায়িত ৷ বিশেষ ধরনের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত এরা ৷ আর ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের চলাচল সুশৃঙ্খল করার দায়িত্ব ছাড়াও ট্রাফিক আইন ও মোটরযান আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা আদায় এবং শাস্তি দেয়ার কাজ করে ৷ ট্রাফিক পুলিশে এখন নারীরাও কাজ করছেন ৷
পুলিশ কর্মকর্তা ও ভুক্তভোগীরা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দপ্তর অভিযুক্ত সদস্যদের গুরুদণ্ড না দিয়ে লঘুদণ্ড দেয় । ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ফৌজদারি মামলার অপরাধ করলেও বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দিয়েই ইতি টানা হয় । অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয় । একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে সময় নিয়ে কৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করা হয় । বাংলাদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়ার নজির বিরল ৷ আর আদালতে মামলা হলেও তার তদন্ত করে ওই পুলিশই ৷ ফলে অপরাধের কারণে পুলিশের প্রচলিত আইনে শাস্তি পাওয়ার নজির কম ।
পুলিশের এই সমস্যা রাজনৈতিক । এটাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে । রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি চায় তাহলে এ সমস্যার সমাধান হবে । এ ছাড়া সমাধানের কোনো পথ আছে বলে মনে হয় না । এই সমস্যা সমাধানের জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন স্তর থেকে শুরু করে ঢাকায় কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনীতে পরিবর্তন করা দরকার । ঢাকায় নির্দিষ্ট কয়েক জেলার অধিবাসীরাই সংখ্যায় অধিক । এটাতে পরিবর্তন আনা দরকার । একই সাথে ছাত্রজীবনে বিভিন্ন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িতদের সংখ্যাও পুলিশ বাহিনীতে এখন বেশি । অযোগ্য কিছু সদস্য রাজনীতি ও টাকার জোড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পোস্টিং নিয়ে এসেছে । এই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে । এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে পুলিশের চাকরি দেয়ার অনিয়মটাও দূর করতে হবে । রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি চান তবে এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেন । এটা যতো তাড়াতাড়ি করা যায় আমাদের জন্য, সমাজের জন্য, দেশের জন্য ততোটাই মঙ্গলজনক হবে ।বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে । পুলিশের কাজ অপরাধী দমন । অথচ তারাই অপরাধ ঘটাচ্ছে, অপরাধীদের অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করছে আর নিরপরাধ মানুষকে অপরাধী বানাচ্ছে । এ ধরনের ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতিই মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি করে । এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক । কারণ এ পরিস্থিতিতে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে । পুলিশ নিজেই অপরাধী হলে দুর্বৃত্তরা অপরাধ সংঘটনে উৎসাহিত হবে, এটাই স্বাভাবিক ।
অপরাধী যেই হোক তার শাস্তি নিশ্চিত করাই হলো অপরাধ দমনের প্রথম পদক্ষেপ । আর অপরাধ দমনের দায়িত্বে নিয়োজিতদের মধ্যে যারা নিজেরাই অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের শাস্তি অধিকতর কঠোর হওয়া দরকার । এত অভিযোগ অসন্তোষের পরও দেশের সাধারণ মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল পুলিশ । কিন্তু সেই আস্থার জায়গাটাকে মজবুত করতে হবে যে কোনোভাবে । দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি না হওয়ায় অপরাধ তৎপরতা চলছে । পুলিশের এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন না ভেবে কৌশল নির্ধারণ করা উচিত । না হলে মানুষের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব বেড়ে যাবে । তাদের প্রতি মানুষের আস্থা থাকবে না । সবাই অপরাধ করে কিন্তু পুলিশেরটা কেন বেশি আলোচনা হয় ? অনেকের প্রশ্ন পুলিশ আইন শৃংখলা রক্ষা করে, অন্যদের অপরাধ নির্মূল করবে তাই তাদের অপরাধ মুক্ত থাকতে হবে, প্রয়োজনে তাদের সমস্ত চাহিদা পূরণ করতে হবে, পুলিশ বাহিনীর সকল পদের সদস্য ও তাদের পরিবারের জন্য বাসস্থান, অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের জন্য বাসস্থান ও মেস এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার হতে হবে । তবুও তারা যেন অপরাধের সাথে জড়িয়ে না পরে ।
সবশেষে বলব পুলিশ জনগণের বন্ধু এবং সরকারের নিয়োজিত মানবাধিকার কর্মী । দেশের স্বার্থেই পুলিশের ভাবমুর্তি রক্ষা করতে হবে ।
লেখকঃ আইনজীবী, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০