মোহাম্মদ মন্জুরুল আলম চৌধুরী।
“শিক্ষকতা একটি মহৎ পেশা। পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে অন্য সকল পেশার জননী বলা হয়। সেটি শিক্ষার যেকোনো স্তরেই হোক না কেন। হতে পারে সেটি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। দল-মত, শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে একজন শিক্ষক সমাজের সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। শিক্ষার মান উন্নয়ন, শিখন প্রক্রিয়া উন্নয়ন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ বিনির্মাণে শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” (সূত্র- ইন্টারনেট) । গত ০৯ মার্চ’২১ তারিখে বিকাল ৫ টার দিকে হাটহাজারীর মারকাজুল কুরআন ইসলামিক একাডেমিতে মোঃ ইয়াসিন ফরহাদ নামে ৮ বছর বয়সী এক শিশু শিক্ষার্থীকে বেধড়ক প্রহার করে আহত করেন মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহিয়া। মূলত মায়ের পিছু পিছু যাওয়ায় শিক্ষক ইয়াহিয়া ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁর ছাত্রের উপর এ নির্যাতন চালান। পুলিশ জানায়, “০৯ মার্চ’২১ তারিখ বিকালে ইয়াসিন ফরহাদের মা তাকে দেখতে মাদ্রাসায় যান।। তিনি চলে যাবার সময় ছেলে কান্নাকাটি করে এবং মায়ের পিছু পিছু স্থানীয় কনক কমিউনিটি সেন্টার পর্যন্ত চলে যায়। অন্যদিকে মাদ্রাসা শিক্ষক ইয়াহিয়াও পিছু পিছু যান এবং ফরহাদকে টেনেহিঁচড়ে সেখান থেকে মাদ্রাসায় নিয়ে আসেন এবং বেধড়ক মারধর করেন। এসময় মাদ্রাসার অপর এক ছাত্র ফরহাদের মারধরের ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়”। { সূত্রঃ আজাদী, ১২ মার্চ’২১}। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে সেদিন ছিল ইয়াসিনের জন্মদিন। আর সেই জন্মদিনে সে ফুলেল শুভেচ্ছা নয়। নয় আদর ভালবাসা। বরং তার কপালে জুটেছে ধর্মীয় শিক্ষক নামক এক নর পাষান্ডের কাছ থেকে বর্বর নিষ্ঠুর মর্মন্তুদ নির্যাতন। পরে গত ১০ মার্চ”২১ তারিখে হাটহাজারী পৌরসভার কামাল পাড়া পশু হাসপাতালের পাশ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ ইয়াহিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ১১ মার্চ’২১ বিকালে সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয় ইউনিয়নের গারাঙ্গিয়া রঙ্গিপাড়া হেফজখানা ও এতিমখানার শিক্ষক মোঃ কামরুল ইসলামের (২৬) বেত্রাঘাতে আবদুল্লাহ আনাস নামের ৭ বছর বয়সী এক ছাত্র আহত হয়েছে।। “গত ১২ মার্চ’২১ তারিখে ছেলে বাড়িতে ফেরার পর কাপড় পরানোর সময় পিঠে বেত্রাঘাতের দাগ দেখে তার মা বিষয়টি বুঝতে পারে”। { সূত্রঃ আজাদী, ১৪ মার্চ’২১}। পরবর্তীকালে আনাসকে জিজ্ঞাসা করার পর জানা যায়, পড়া না পারার জন্য আগের দিন শিক্ষক কামরুল তাকে মারধর করেছে। শিক্ষক কামরুল মারধরের বিষয়টি পরিবারকে না জানানোর কথা বলায় আনাস তা পরিবারকে জানায়নি। পরে আনাসের পরিবার সাতকানিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর শিক্ষক কামরুলকে পুলিশ গ্রেফতার করে এবং শিশুটিকে স্থানীয় সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করায় তার পরিবার। প্রকৃতপক্ষে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের নির্যাতন কোনো নতুন বিষয় নয়, “গত বছরের ৪ মার্চ’২০ ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ময়মনসিংহের ভালুকার জামিরদিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী তাওহিদুল ইসলাম (১০)। তাওহিদুলের পড়া মুখস্থ না হওয়ার অপরাধে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পাঁজরের একটি হাড় ও একটি পা ভেঙে দেন। তাওহিদুল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার পরিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়”। {সূত্রঃ দেশ রূপান্তর, শুক্রবার, ১২ মার্চ ২০২১ }। এক তথ্য থেকে জানা যায়, “গত বছরের নভেম্বর মাসে দেশের কওমি মাদ্রাসায় ৪০ ছেলে শিশু বলাৎকারের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর এ তথ্য জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। তারা বলছে, এসব ঘটনায় কেবল মামলা হয়েছে, চেপে যাওয়া ঘটনা আরও বেশি”। প্রকৃতপক্ষে, শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, মাদ্রাসাগুলোয় যৌন নির্যাতন করা হয় শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ প্রায়ই উঠছে। পুরুষ ও কন্যাশিশু উভয়ের যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর প্রায়ই পাওয়া যায় গণমাধ্যমে। তবে ভুক্তভোগী কয়েকজন সাবেক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বলছেন, যত শিক্ষার্থী শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তার সামান্য তথ্যই বাইরে আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শারীরিক বা যৌন নির্যাতন কোনোটির তথ্য প্রকাশ হয় না। মাদ্রাসার মক্তব আর বিশেষ করে হেফজখানায় এই নির্যাতন করা হয় বেশি। মাদ্রাসায় পেটানোর কারণে অনেকে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। কেউ কেউ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাদ্রাসা ছেড়ে পালায়।
এদিকে ২০১৩ সালে ইউনিসেফের একটি জরিপে থেকে জানা যায়, “প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জন জানিয়েছে যে, তারা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তির শিকার৷ আর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন শিশু জানায় যে, তারা বাড়িতে অভিভাবকদের হাতে শারীরিক শাস্তি পায়৷ পাশাপাশি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) আরেকটি তথ্য অনুযায়ী গত বছর (২০২০) সারাদেশে এক হাজার ৭৪১টি শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে৷ এরমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১২৫টি শিশু৷ এইসব ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে আটটি৷ এই সময়ে শিক্ষকদের দ্বারা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ১৪ জন শিক্ষার্থী৷ ছেলে শিশুরাও যৌন হয়রানীর শিকার হয়েছে”৷ জাতীয় মাননিসক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বরাতে জানা যায়,“করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ৷ কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে তার চেম্বারে প্রতি মাসে ১০-১২টি শিশুকে তার অভিভাবকেরা নিয়ে আসেন৷ যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার৷ আর এখন মাদ্রাসা খোলা থাকায় সেখান থেকেও শিশুদের নিয়ে আসা হয়৷ তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা হলো মাদ্রাসায় শারীরিক নির্যাতন বেশি হয়৷ আর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন বেশি হয়৷ ভাবার কোনো কারণ নেই যে মাদ্রাসার বাইরে নির্যাতন হয় না৷ তিনি আরও জানান, মাদ্রাসায় যেমন যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষকদের দ্বারা বুলিং-এর শিকার হন শিক্ষার্থীরা৷ তার অভিজ্ঞতা বলছে, গড় হিসেবে সব ধরনের নির্যাতন মিলিয়ে মাদ্রাসায় ৬০ ভাগ আর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ৪০ ভাগ ঘটনা ঘটে৷
বাংলাদেশের আইন আওনুযায়ী, “ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ৷ ২০১১ সালে হাইকোর্টের এক আদেশের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন করে৷ আর তাতে শারীরিক ও মানসিক শাস্তির সংজ্ঞাও দেয়া হয়েছে৷ শারীরিক শাস্তি বলতে যেকোনো ধরনের দৈহিক আঘাত বলা হয়েছে৷ মারধর ছাড়াও আইনে কান ধরা, চুল টানা, বেঞ্চের নিচে মাথা রাখতে বাধ্য করাও দৈহিক শাস্তি৷ আর মানসিক শাস্তির মধ্যে শিশু বা তার পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বাজে মন্তব্য বা যেকেনো আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গিশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই দুই ধরনের শাস্তি দেয়াকেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেছে৷ যাদের বিরুদ্ধে এই অপরাধ প্রমাণ হবে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ একই সঙ্গে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে”৷ কিন্তু এরপরও বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়ার প্রবণতা বেশ লক্ষ্য করা যায়৷ বিশেষ করে মাদ্রাসায় এটা প্রকট৷ এদিকে হাটহাজারীর ওই ঘটনায় হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে বৃহস্পতিবার একটি রুল দিয়েছেন৷ শিশু নির্যাতনের ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা স্থানীয় প্রশাসনকে ১৪ মার্চের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে৷
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মানবিক, সামাজিক, নৈতিক, ধর্মীয় অবক্ষয়ের এই সময়ে আদর্শ শিক্ষকদের অনেকেই আজ আদর্শচ্যুত হয়েছেন বা হচ্ছেন। কতিপয় শিক্ষকের নৈতিক চারিত্রিক পদস্খলন আমাদেরকে যারপর নাই মর্মাহত ব্যথিত দুঃখিত করে তোলে। শিক্ষকদের বিপথগামী কিছু অংশ যৌন হয়রানি, হেনেস্তার সাথে জড়িত হয়ে পড়েছেন, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন করছেন, ছাত্রীদের নিয়ে অশ্লীল ভিডিও বানাচ্ছেন, ব্লাক্মেইল করছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎ করছেন এমনকি বিশ্ববিদ্যাল্যের উপাচার্য পর্যন্ত এর ব্যতিক্রম নন। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের সামান্য ভুলের জন্যে বা অন্যকোন কারণে ক্রোধের শিকার হয়ে কোমলমতি শিশুদের দৈহিক নির্যাতন করেন, তাঁদেরকে রক্তাক্ত করেন এতে অনেকের প্রাণহানি পর্যন্ত ঘটেছে। এতে শিশুদের লেখাপড়ার প্রতি অনীহা আসে, শিক্ষক সমাজের প্রতি লেখা পড়ার প্রতি বিতৃষ্ণা জাগে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
ইসলামে বলা হয়েছে, ক্রোধ ধ্বংস করে দিতে পারে জীবন, সম্পদ, সম্মান এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক। আমরা তো ধর্মীয় শিক্ষক এবং আলেম ওলেমাদের নিকট থেকে ধর্মীয় জ্ঞান লাভ করছি। তাঁরাই তো কোরআন আর হাদীস থেকে আমাদেরকে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দিচ্ছেন -- "অত্যন্ত ক্রোধপরায়ন ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা অধিক অপ্রিয়" -- আল হাদিস (নাছায়ী, তিরমিজী) । পাশাপাশি নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)। যখন ক্রোধ আমাদের গ্রাস করতে চায় কিংবা আমরা রাগান্বিত অবস্থায় থাকি, তখন আমাদের কী করা উচিৎ ? রাসুল (সা.) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ দাঁড়ানো অবস্থায় রাগান্বিত হয়ে পড়ে, তবে তার উচিত বসে পড়া। যদি তার রাগ কমে যায়, তবে ভালো; নয়তো তার উচিত শুয়ে পড়া।’ (তিরমিজি)। ক্রোধ দমনের জন্য অজু করা একটি কার্যকরী পন্থা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বললেন, ‘সে প্রকৃত বীর নয় যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (বুখারি: ৫৬৮৪)। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা রাগ দমনকারীকে ভালোবাসেন। কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং রাগ দমনকারীগণ ও মানুষকে ক্ষমাকারীগণ। আল্লাহ অনুগ্রহকারীকে ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)। ক্রোধান্বিত বা রাগান্বিত হলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। তখন মানুষ বুঝতেই পারেনা ভালো বা মন্দের পার্থক্য। মানুষ মোটেও বুঝে না এর পরিণাম কত ভয়াবহ, ভয়ংকর এবং সুদূরপ্রসারী হতে পারে। চোখের পলকেই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ঘটনায় সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। যেমন হয়েছে মোঃ ইয়াসিন ফরহাদের ক্ষেত্রে শিক্ষক হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার এবং আবদুল্লাহ আনাসের ক্ষেত্রে হয়েছে শিক্ষক মোঃ কামরুল ইসলামের। ধর্মীয় গুরু শিক্ষক এবং আলেম ওলামাদের এহেন আচরণ আমাদেরকে দ্বিতীয় বার চিন্তা করতে বাধ্য করে এরা কি মানুষ ? এরা কি শান্তির ধর্ম ইসলামের ধারক বা বাহক ?
আমরা মোটেও অস্বীকার করিনা যে, একজন শিক্ষক রক্ত মাংসে গড়া মানুষ। তারও রাগ দুঃখ ক্ষোভ আছে। আছে কর্মস্থলে ও পরিবারে নানাবিধ সমস্যা। কিন্তু তাই বলে তুচ্ছ কারণে বা লেখাপড়া সঠিক ভাবে শিখে আসেনি বলে শিক্ষার্থীদের উপর দৈহিক আক্রমণের মাধ্যমে মনের ক্রোধ রাগ দুঃখ ক্ষোভ ঝাড়বেন এটা মোটেও কাম্য বা শোভনীয় হতে পারেনা। তাঁরা শিক্ষাদানের মতো মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন। শুভ সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে ন্যায় নীতির প্রতীক, অনন্য ও অনুসরণীয় চরিত্রের অধিকারী শিক্ষদেরকে সবাই আদর্শ মনে করে থাকে। তাই আদর্শ চরিত্রের অধিকারী শিক্ষকদের ক্রোধের শিকার কোমলমতি শিক্ষার্থী হতে পারেনা। শিক্ষকদের নৈতিক অধঃপতন ও পদস্খলন একদিকে তাঁদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্বের বিচ্যুতি অন্যদিকে তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও গর্হিত আচরণও বটে। আমরা প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আদর্শচ্যুতি, নৈতিক, মানবিক এবং ধর্মীয় অধঃপতন চাইনা। আপনারা আমাদের গৌরব এবং আদর্শ হয়ে বেঁচে থাকুন এটাই কাম্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০