-------------
শতাব্দীর পরিক্রমায় বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার দ্বারপ্রান্তে বর্তমান বিশ্ব। প্রযুক্তি আজ মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ আর সমৃদ্ধি। অনুসন্ধানী দৃষ্টি আর কেবল আটকে নেই মঙ্গলে, খুঁজে ফিরছে অনন্ত নক্ষত্রবীথি। পারমানবিক অস্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান বিশ্বের সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রগুলো যখন বসে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে, তখনই এলো মহামারী করোনা। এটম বোমা মেরে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করা আমাদের বাঁ হাতের খেল হলেও, এ যে অদৃশ্যের সাথে যুদ্ধ! ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শত্রু, যাকে খুঁজতে হয় অণুবীক্ষণের লেন্স দিয়ে। মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকাকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে স্থবির করে দিলো তাবৎ বিশ্ব। তবে করোনা শুধু ভয়াবহতা ও সংকট নয়, করোনা আমাদেরকে শিখিয়েও দিয়েছে নানান কিছু।
করোনা মহামারী থেকে আমরা শিক্ষা পাচ্ছি প্রতিনিয়ত। শিখছি একজন দামী খেলোয়াড়ের চেয়ে একজন সাধারণ স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন অনেক বেশি। শিখছি অর্থ, প্রাচুর্য আর খ্যাতি একসময় মানুষেরকোনো কাজেই লাগে না। করোনা আমাদের শেখালো ডিপ্রেশন, চেনালো বন্দীত্বের স্বাদ। করোনাকালীন সময়ে সরকারের দেয়া ত্রাণ নেতাদের দ্বারা চুরি হওয়ার ঘটনা শেখালো কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয়না।
তবে এতসব নেতিবাচক শিক্ষার ফাঁকেও করোনা আমাদের ইতিবাচক অনেক কিছুই শিখিয়েছে। করোনা শিখিয়েছে পরিস্থিতির সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেয়া। এ শিক্ষা মেনেই দেশে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা। যারা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এই সময়টায় গড়ে তুলেছে ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যাটফর্ম। অনলাইনেই কেনাবেচা করছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, বই, খাবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিখ্যাত দেশি পণ্যও। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা অনলাইন বিজনেস প্ল্যাটফর্ম তিজারাহ শপিং কমিউনিটি'র কথা। লকডাউনের ফলে আমাদের সকল কাজকর্ম হয়ে গেছে অনলাইন নির্ভর। সব কাজ অনলাইনেই সারতে হয় বিধায় প্রযুক্তির সাথে মানুষের সখ্য বাড়ছে, বাংলাদেশ হয়ে উঠছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন অনলাইনে, ব্যবসায়ীরা কেনাবেচা করছেন অনলাইনে, আরো কত কি!
করোনা ভাইরাস আমাদের মধ্যে জনসচেতনতাও তৈরি করছে। শিখিয়েছে দেশের চিকিৎসা খাত কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ভালো-মন্দ অনেক কিছুই আমরা শিখলাম এ করোনা নামক শিক্ষকের কাছ থেকে। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে এই শিক্ষাগুলো আমরা ভবিষ্যতে কাজে লাগাতে পারি কিনা। ভবিষ্যতের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত মহামারীতে আমরা যেন এবারের মতো দিশেহারা হয়ে না পড়ি।
---------
হাবিবুন নাহার মিমি
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০