------
শিক্ষা মানুষকে উন্নত জীবনের পথ দেখায়। অনেক ক্ষেত্রে একজন উচ্চ শিক্ষিত বা শিক্ষিত যুবক তার নিজের যোগ্যতা দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ভালো একটি চাকুরী জোগাড় করতে পারে। একজন কম শিক্ষিত মানুষের পক্ষে যা অনেক কঠিন একটি বিষয়। আবার বাংলাদেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক উচ্চ শিক্ষিত যুবককেও বেকার থাকতে হচ্ছে কিংবা চাকুরি না পেয়ে ব্যবসায় নামে অথবা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। অনেকে আবার অর্থের অভাবে ব্যবসাও করতে পারে না কিংবা বিদেশে যেতে পারে না। ফলে অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন৷ এতে করে তার নিজের জীবন ও পরিবারের অন্যান্যদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। একটি উন্নত জাতি গঠন কিংবা উন্নত রাষ্ট্র বিনির্মাণে এটিকে অন্যতম বাধা বলা যায়। তবে শিক্ষিত-যোগ্যদেরকে চাকরি প্রদান করা কিংবা পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সরকারের একক দায়িত্ব নয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের এবিষয়ে বড় দায়িত্ব রয়েছে।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, চাকুরি পাওয়ার প্রত্যাশা বা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যে পরিমাণ আকাঙ্ক্ষা মানুষজন (বিশেষ করে যারা শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নামে) করে থাকে তার তুলনায় অনেক কম প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে থাকে। গত প্রায় দুই দশকে ব্যক্তি পর্যায়ে পড়াশুনা করা, অধ্যবসায় করা, গবেষণা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অবনতি হয়েছে বলে অনুমান করা যায়।
বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, আগেকার দিনে বই-পুস্তকের প্রতি বা প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের প্রতি একজন শিক্ষার্থীর যে পরিমাণ মনোযোগ তৈরি হতো কিংবা মনোযোগ তৈরি করা যেতো এখন তার ধারেকাছেও নেই! আগেকার দিনের শিক্ষকরা শিক্ষাদানকে তাদের পবিত্র কর্ম বলে মনে করতেন। শিক্ষকতাকে তাঁরা অনেক মর্যাদাকর ও মহান পেশা হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতেন। শিক্ষার্থীদেরকে সঠিক শিক্ষাদানে তাঁরা কখনোই কার্পণ্য করতেন না।
শিক্ষার্থীরাও একেকজন শিক্ষককে আদর্শ হিসেবে মান্য করতেন, সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা করতেন, তাঁদের দিক-নির্দেশনা মেনে চলতেন। তখনকার শিক্ষার্থীরা তাঁদের শিক্ষা জীবনে যেমন সফল হয়েছেন তেমনি পরবর্তী জীবনেও অনেক সফল হয়েছেন। এতে করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক জ্ঞানী, গুণী, যোগ্য ব্যক্তিকেও আমরা পেয়েছি। অগণিত সফল ব্যক্তির সাফল্যের গল্প আমাদের অনেকেরই জানা থাকার কথা!
কিন্তু আজ কোথায় সেই শিক্ষা? কোথায় সেই আদর্শ? কোথায় সেই মূল্যবোধ, শ্রদ্ধা, ভক্তি? কোথায় সেই অধ্যবসায়, চেষ্টা-প্রয়াস? আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকই এখন শিক্ষকতার এই মহান পেশাকে যেমন কলুষিত করেছেন, তেমনি প্রকৃত শিক্ষাদানের দায়িত্ব পালন থেকে তারা এখন অনেক দূরে! অনেক শিক্ষক নিজের স্বার্থ হাসিল করা কিংবা শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের কাজে ব্যস্ত থাকেন! অনেক শিক্ষক আছেন যাদের নিজের পেশার প্রতি তাদের নিজেদেরই রেস্পেক্ট নেই। এসব শিক্ষকদেরকে প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শনে আমাদের শিক্ষার্থীদেরকেও এখন কার্পণ্য করতে দেখা যায়।
আগেকার যুগের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রকৃত মেধা এবং সুপ্ত প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে, শিক্ষকদের গাইডলাইন অনুসরণ করে অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ভালো ফলাফল অর্জন এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে পারতো। তাছাড়া জ্ঞান অর্জনের প্রতি তাদের আগ্রহ বা আকর্ষণ ছিলো অনেক বেশি। যার ফলে তারা জীবনে সফল ও প্রতিষ্ঠিতও হতে পেরেছেন।
কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হচ্ছে- গত প্রায় দুই দশকে ব্যক্তি পর্যায়ে পড়াশুনায় চেষ্টা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমে ব্যাপক ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখনকার শিক্ষার্থীরা ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টিভি ও মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন বা পড়াশুনায় তাদের আগ্রহ এবং কৌতূহল ব্যাপকভাবে হারিয়ে ফেলছে!
পাঠ্যপুস্তকে এখন তাদের মনোসংযোগ নেই বললেই চলে। এর পরিণতি মোটেও সুখকর হচ্ছে না!
দেখা গেছে, দুর্বল ভিতের কারণে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টধারী অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় খুব খারাপ ফলাফল করছে! তারা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না। তাদের শিক্ষা জীবন ধ্বংসসহ জীবনের আরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রত্যাশিত জীবন গড়তে ব্যর্থ হচ্ছে। এর জন্য অধিকাংশ শিক্ষার্থী মা-বাবা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার কিংবা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে থাকে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
এমনও দেখা যায়, পাকিস্তান আমলে কয়েকটা শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করা ব্যক্তির জ্ঞান আমাদের বর্তমান সময়ের অনেক সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিতের তুলনায় অনেক বেশি! তারাও পড়াশুনা করেছেন। আর এখনকার শিক্ষার্থীরাও পড়াশুনা করছেন!
সার্বিক বিবেচনায়, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ অতিব জরুরি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক সকলেরই সচেতন হওয়া অত্যাবশ্যক।
লেখক :
উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
লোহাগাড়া, চট্টগ্রামঃ
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০