রিপন মিয়া, মৌলভীবাজার সদর প্রতিনিধি।
মৌলভীবাজারে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ের সাধারণ মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ-নারী-পুরুষ,যুবক-যুবতী,গণমাধ্যম কর্মীও এ তালিকা থেকে বাদ যায়নি।
মৌলভীবাজারে করোনা উপসর্গ ও করোনা আক্রান্ত হয়ে অনেক মৌলভীবাজার ও সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মারা গেছেন ।
মৌলভীবাজার জেলা জুড়ে ঘরে ঘরে নানা পেশার মানুষ স্বর্দি, জ্বর,গলাব্যথা ও কাশিসহ নানা উপসর্গে ভূগছেন। কেউ করোনা আতংকে আবার কেউ পর্যাপ্ত সুযোগ না পেয়ে এবং আর্থিক সংকটে রোগ নির্ণয় ও সনাক্ত করছেন না। জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট, সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা স্বাস্থ্য বিধি নেষেধ মেনে চলাচল করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে আক্রান্ত ও মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছেন বহু নারী-পুরুষ,যুবক-যুবতী ও বৃদ্ধ মানুষ।
এদের মধ্যে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার একাটুনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য,মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক,রোটারিয়ান সাবেক ফুটবলার ইউপি আওয়ামীলীগর সহ-সভাপতি মো: শফিকুর রহমান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা গেছেন গত ৬ জুলাই।মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আব্দা গ্রামে ২জন করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ৭ জুলাই মৃত্যু হয় বলে সদর উপজেলা প্রশাসনের নামীয় ফেসবুক আইডি থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
মৌলভীবাজার সদরে তিন গণমাধ্যম কর্মীসহ বহু লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৌলভীবাজারের মান্যবর সুযোগ জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মীর নাহিদ আহসান সপরিবারে (স্ত্রী-সন্তানসহ) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিজ সরকারি বাস ভবনে আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ি গতকাল ৭ জুলাই পর্যন্ত জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ৩৩২ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে(সন্দেহভাজন) ১৪জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
৭ জুলাই একদিনেই সর্বোচ্চ রেকর্ড জেলায় করোনা পজেটিভ সনাক্ত হয়েছেন ৯৪ জন। এরমধ্যে ২৫০ শয্যা মৌলভীবাজার হাসপাতালে ৪২জন, রাজনগর ১০জন,কুলাউড়া ১৬জন,বড়লেখা ৫জন, কমলগঞ্জ ২জন,শ্রীমঙ্গলে ১১জন ও জুড়ীতে ৮জনসহ একদিনে ৯৪জনের দেহে করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে। সরকারি হিসেবে গত ৭ জুলাই পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ৩৮জন।
রাজনগর উপজেলার ৪নং পাঁচগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁচগাঁও গ্রামের মোছাঃ নেহারুন্নেছা (৭০) গত ৬ জুলাই মঙ্গলবার রাত ১১ টার দিকে করোনা পজেটিভ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট শহীদ সামসুদ্দীন মেডিকেলে মৃত্যু হয়। ৭ জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তিনি উপজেলার পাঁচগাও উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক মরহুম সাইদুর রহমান চৌদুরীর স্ত্রী। একই উপজেলার মনসুরনগর গ্রামের দেলওয়ার মিয়া গেলো রাত সোয়া ৯টায় রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা উপসর্গসহ হৃদরোগ জটিলতায় মারা যান।
রাজনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বেগম আলিফ লায়লা করোনা আক্রান্ত হয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকার সিটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় লাইফ সাপোর্টে মারা যান।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার নারায়নছড়া গ্রামের তোফায়েল আহমদ করোনা সন্দেভাজন উপসর্গে মৃত্যু হয়।
কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়ের নাচনি গ্রামের আব্দুল লতিফের স্ত্রী সালেহা বেগম করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেটের সোবহানীঘাটে কমিউনিটি বেইজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার আগের দিন ওই হাসপাতালে তার করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে।
গত তিন দিনে কুলাউড়ায় করোনায় কেড়ে নিলো ৫ জনকে। এই ৫ জনই করোনার উপসর্গ নিয়ে সিলেট ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধিন ছিলেন। এদিকে কুলাউড়া পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের নতুন পাড়া এলাকার বাসিন্দা কুলাউড়া রেলওয়ে পুরাতন মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ আলি (৫৫) করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত ১ জুলাই সিলেট নর্থইষ্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনিও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসার পর কুলাউড়া কোভিড-১৯ লাশ দাফন টিমের পুরুষ ও মহিলা সদস্যরা দাফন সম্পন্ন করেছেন।
মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)শেখ রুহেল আহমদ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। রোববার (৪ জুলাই) কুলাউড়ায় কোভিড-১৯ পরীক্ষায় তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
উপজেলার উত্তর কুলাউড়ার ও জয়চন্ডী ইউনিয়নে ১ পুরুষ ও ১ মহিলা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। তারা দুজনেই মৌলভীবাজার ও সিলেটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
কুলাউড়া পৌরসভার উত্তর কুলাউড়ার বাসিন্দা হারিছ খাঁন কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ৪ দিন পূর্বে মৌলভীবাজার আল হামরা হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি মারা যান। অপরজন জয়চন্ডী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার লৈয়ারহাই গ্রামের বাসিন্দা আজিজ উদ্দিন লবিকের স্ত্রী হেনা বেগম কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার সিলেট নুরজাহান হাসপাতারে ভর্তি হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। উভয়ের লাশ ঐদিন হাসপাতাল থেকে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর কুলাউড়া কোভিড-১৯ লাশ দাফন টিম স্বাস্থ্য বিধি মেনে দাফন করেন।