

আব্দুল মুনতাকিন জুয়েল, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধায় নতুন করে আরও ৪ জন করোনা আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। টানা কয়েকদিন গাইবান্ধায় নতুন করোনা রোগী না পাওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও গত শনিবার (২৩ মে)একদিনে চারজন করোনা শনাক্তের পর আজ বুধবার (২৭ মে) জেলায় নতুন করে আরও ৪ জন করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলল। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় একজন এবং বাকী তিনজন সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা।
গাইবান্ধায় গত ১০ মে লকডাউন শিথিল করার পর কয়েকদিন শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কম থাকলেও নতুন করে আবারও করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় বিশ দিন জেলায় করোনার সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে থাকলেও এরআগে গত ১২ মে মঙ্গলবার এবং পরদিন ১৩ মে বুধবার নতুন করে দু’জনের দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। তাদের একজন চট্টগ্রাম ফেরত শ্রমিক পলাশবাড়ি উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমারগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা। অপরজন গাজিপুর ফেরত পোশাক শ্রমিক ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কাইয়ার হাট গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা যায়। এছাড়া গত শুক্রবার (২২ মে) একদিনেই নতুন করে তিনজনের দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জে দু’জন মৃত ব্যক্তির দেহ থেকে সংগৃহিত নমুনা পরীক্ষার পর করোনা ভাইরাস পাওয়া যায়। বাকী আরেকজন গোবিন্দগঞ্জের বাসিন্দা। এরপর গত শনিবার (২৩ মে) একদিনে চারজনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় দুইজন, গোবিন্দগঞ্জে একজন এবং বাকী আরেকজন সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা। সবশেষ আজ বুধবার (২৭ মে) জেলায় নতুন করে আরও চারজন করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলল। নতুন করে আক্রান্তদের মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় একজন এবং বাকী তিনজন সাদুল্লাপুরের বাসিন্দা। এ নিয়ে বুধবার (২৪ মে) পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৩৭ জনে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় সুত্র জানায়, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর গাইবান্ধায় সেরে উঠেছেন ২২ জন। করোনা জয় করে সুস্থ হওয়া সবাই গাইবান্ধার বিভিন্ন করোনা আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরপর দুটি টেস্টে নমুনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের আইসোলেশন থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। জেলায় মোট ৩৭ জন আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ১২ জন আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন আছেন।
গাইবান্ধায় করোনা আক্রান্তদের মধ্যে সদরে ৭, ফুলছড়িতে ১, সাঘাটায় ৩, পলাশবাড়ীতে ৪, গোবিন্দগঞ্জে ১২, সুন্দরগঞ্জে ৩ এবং সাদুল্লাপুর উপজেলায় রয়েছেন ৭ জন। এরমধ্যে গোবিন্দগঞ্জে আক্রান্ত ২ জন এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আরও ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এ.বি.এম আবু হানিফ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রতিদিনের প্রেস রিলিজ সুত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত জেলায় করোনা সন্দেহে মোট ৮৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য রংপুরে পাঠানো হয়েছে এরমধ্যে ৭৩২টি পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল অপেক্ষমান আছে ১১৫টি। গাইবান্ধায় গত ২৪ ঘন্টায় বুধবার (২৭ মে) করোনা উপসর্গ নিয়ে নতুন করে ৬২ জন সহ ৪৪০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট হোম কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন ৩ হাজার ৯০১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৬ জন। এ নিয়ে জেলায় কোয়ারেন্টাইন শেষে মোট ৩ হাজার ৬০২ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় এসেছেন ১৪৯ জন। বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ৩১ জন আছেন।
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় জেলার প্রস্তুতি হিসেবে ৭টি সরকারি হাসপাতালে মোট ৪শ’ ৮১টি ও ১৮টি বেসরকারি হাসপাতালে ১৯০টি বেড রয়েছে। এরমধ্যে প্রস্ততকৃত বেডের সংখ্যা ১১৫টি ও বেসরকারি ১৯টি। এছাড়া জেলায় মোট ১শ’ ২৬ জন সরকারি ডাক্তার ও বেসরকারি ১৯ জন ডাক্তার বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। সরকারি নার্স ১শ’ ৯০ জন এবং ১৯ জন বেসরকারি নার্সসহ দায়িত্ব পালন করছেন ২০৯ জন। সরকারি চিকিৎসকদের জন্য ৭ হাজার ৩৭৫টি এবং বেসরকারি ১১০টি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) মজুদ রয়েছে। ইতোমধ্যে ১১ হাজার ৫৫টি পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। অপরদিকে ১৬ হাজার ৫০০টি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে এবং ৯ হাজার ৬৮২টি মাস্ক মজুদ রয়েছে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জরুরী চিকিৎসায় স্থানান্তরের জন্য ২টি এ্যাম্বুলেন্স ও ২টি মাইক্রোবাস সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০