ঢাকাবুধবার , ১২ মার্চ ২০২৫
  1. সর্বশেষ

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস – আমি জেনে শুনে বিষ করছি পান !

প্রতিবেদক
নিউজ এডিটর
৮ জুন ২০২২, ৩:৩৩ অপরাহ্ণ

Link Copied!

মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।

বলা হয়ে থাকে ধূমপান মানে বিষ পান। এবং সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সংবিধিবদ্ধ সতর্কিকরণ হিসেবেও তা লেখা আছে। কে শুনে কার কথা! প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে জনসম্মুখে অবাধে নির্বিঘ্নে মানুষ ধূমপান করেই চলেছে। ফলশ্রুতিতে তামাকজনিত রোগে মানুষের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও জনস্বাস্থ্যের হুমকির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ ও বন নিধন হচ্ছে বেপরোয়াভাবে। গত ৩১ মে ‘পরিবেশ রক্ষা করো’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। “বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে কমপক্ষে ১৯ কোটি ৫০ লাখ সিগারেট ও বিড়ির অবশিষ্টাংশ। তামাক শুকাতে (কিউরিং) অনেক গাছ কাটা হচ্ছে। তামাক শুকানো ও সিগারেট-বিড়ি খাওয়ার সময় সৃষ্ট ধোঁয়া থেকেও ঘটছে পরিবেশ দূষণ”। {সূত্রঃ প্র/ আলো, ৩১ মে’২২}। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে দেড় কোটি মানুষ সিগারেট, ৫৩ লাখ মানুষ বিড়ি এবং ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে থাকে। প্রতিদিন ১২ কোটি ৩০ লাখ সিগারেট এবং ৭ কোটি ২০ লাখ বিড়ি খাওয়া হয়। ফলশ্রুতিতে সমপরিমাণ সিগারেটের ফিল্টার এবং বিড়ির অবশিষ্টাংশ আবর্জনা হিসেবে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। সে হিসাবে প্রতিদিন বিড়ি-সিগারেটের সাড়ে ১৯ কোটি অবশিষ্টাংশ প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছে। তাছাড়া সিগারেটের ফিল্টার কগাজের মতো দেখতে হলেও সেটি এক ধরণের প্লাস্টিক যা পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। তামাক বিরোধী সংঘটন প্রজ্ঞা’র তথ্য থেকে জানা যায়, “বিশ্বে তামাক কোম্পানি বছরে ৮৪ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমণ, ছয় ট্রিলিয়ন সংখ্যক সিগারেট শলাকা উৎপাদনের জন্য ২২ বিলিয়ন টন পরিমাণ পানির অপচয় এবং ৬০ কোটি বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট এবং ইকো সিস্টেম এ ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। প্রতি বছর ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন সিগারেট ফিল্টার আবর্জনা হিসেবে প্রকৃতিতে জমা হয়, যার ওজন প্রায় ৭ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন। ফেলা দেয়া বর্জ্য হিসেবে এটির অবস্থান শীর্ষে”। {সূত্রঃ আজাদী, ৩১মে’২২}। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য যে সিগারেটের ফিল্টার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে সময় নেয় দশ বছর। পাশাপাশি মিশে যাওয়ার সময় এ থেকে সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। সিগারেটের বাইরে জর্দা, গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাক ও তামাকপণ্যগুলোও প্লাস্টিক কৌটা, ও পলিথিন প্যাকেটে ভরে করা হয় যা পরিবেশ জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

“বিশ্বের মোট তামাকের এক দশমিক তিন শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে। আবাদযোগ্য জমিতে এসব তামাক চাষ হয়। এতে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকিতে আছে দেশ। বাংলাদেশের ৩১ শতাংশ বন নিধনের জন্য তামাক দায়ী”। {সূত্রঃ দৈ/ আজাদী,৩১ মে’২২}। পাশাপাশি তামাক ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীট নাশক সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাশয়, নদীর পানিতে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করছে মৎস্য উৎপাদন। এবং হুমকিতে আছে বিবিধ জলজ প্রাণী। জানা যায়, বছর দেড়েক আগেও উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও রামগড়ে ব্যাপকভাবে তামাক চাষের কারণে হুমকির মুখে পড়ে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বিষ বা ক্ষতিকারক জেনেও বর্তমানে দেশে ৩৫ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। পাশাপাশি তামাকের পরিবেশগত ক্ষতির একটি বড় কারণ পরোক্ষ ধূমপান। চার কোটিরও অধিক মানুষ বাড়িতে যার সিংহ ভাগ নারী পরোক্ষ ধূম্পানের শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি আচ্ছাদিত কর্মস্থলে, গণ পরিবহনে যাতায়াতের সময়, রেস্তোরাঁ এবং চা-কফির স্টলে অনেকেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। এক তথ্য থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরের সরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, গণ পরিবহণসহ পাবলিক স্পেস ও পাবলিক পরিবহণে প্রায় শতভাগ ভঙ্গ হচ্ছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।

অপ্রিয় সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে কয়েক লক্ষ মানুষ। ২০১৯ সালের এক তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের চারটি কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে তামাক। পাশাপাশি দেশের উৎপাদনশীলতা হ্রাস এবং চিকিৎসা ব্যয়ের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি। তামাক সেবনে মানুষের মৃত্যু, পঙ্গুত্ব এবং দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধ করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। তামাক চাষ, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন, বিপণন, ব্যবহারের পাশাপাশি তামাকজাত বর্জ্য আমাদের প্রকৃতি পরিবেশ বায়ুকে প্রতিনিয়ত দূষিত করছে, জনস্বাস্থ্যের জন্যে বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পরিবেশগত মানবিক স্বাস্থ্যগত এবং আর্থিক ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, আইনের কঠোর এবং নির্মোহ প্রয়োগ বিবেচনায় নিতে হবে। জনসাধারণ ব্যবহারকারী উৎপাদনকারী এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়সহ সংশ্লিষ্ট সকলমহলকে আন্তরিকতা সদিচ্ছা এবং সচেতনতার মাধ্যমে তামাকমুক্ত পরিবার সমাজ দেশ ও জাতি গঠনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে। ধূমপান তথা বিষপান থেকে সবাই বিরত থাকবেন এটাই প্রত্যাশা।
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী ।

840 Views

আরও পড়ুন

চিরিংগা ইউনিয়ন পরিষদের নবনিযুক্ত প্রশাসককে বরণ করলেন ইউনিয়ন জামায়াত

শান্তিগঞ্জে প্রবাসবন্ধু ফোরামের ত্রৈমাসিক সভা

বাংলাদেশ-কোরিয়ান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের সাথে মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং চুক্তি স্বাক্ষরিত

সুনামগঞ্জ সাহিত্য সংসদ গণপাঠাগার হতে শেখ একেএম জাকারিয়াকে অব্যাহতি

মাদারগঞ্জে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কলারোয়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে রমজান ও যাকাতের গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

জেলা কারাগার ডান্ডাবেরীর বাণিজ্য চরমে
জেলার আবু মুছার হাতে বন্দি কক্সবাজার জেলা কারাগার, বন্দিদের জীবন দুর্বিষহ!

কবিতা:- ছোবল

রংপুরে হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পর্যটন নগরীর নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের কঠোর নজরদারি, ফিরছে পর্যটকদের আস্থা

ছাতকে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মসজিদের ইমাম আটক

তা’মীরুল মিল্লাতে দাখিল ২৪ ও আলিম ২৬ ব্যাচের ‘ইনতিফাদা ইফতার মাহফিল’ অনুষ্ঠিত