হারিয়ে গেছে সেই সুন্দর অতীত গুলো।
আমাদের মাঝে আর নেই বাল্যকালের খেলাধুলা, তালে তালে ছন্দবদ্ধ ছড়া বলা। দলবদ্ধ হয়ে চাকুবাটা,ইচিং বিচিং, দৌড়,কাবাডি খেলা, নৌকা বাইচ, সাঁতার, প্রতিযোগিতা, নাচ গান ইত্যাদি আর নেই। অথচ আগে বাচ্চারা গেয়ে উঠতো,
"ইচিং বিচিং চা
প্রজাপতি উড়ে যা,
এ এল ত লন্টন
বাবুর মাঝে বন্টন।
বাবু তুই খাবি খা
আমার বাড়ি যাবি যা।"
এইসব খেলা জিইয়ে রাখতো বাচ্চাদের, আনন্দ দিতো সারা গ্রাম-শহরকে। উঠোনে মুরব্বিদের আসর আর জমে না এখন, কিছু অনন্য বৈশিষ্ট মন্ডিত পরিবার বা বন্ধু মহল ছাড়া এখন তেমন আর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পারিবারিক বন্ধন এবং গ্রামীণ জনপদের সেই সুন্দর অতীত আর দেখা যায় না।
সময়ের পরিবর্তনে আমাদেরকে গ্রাস করেছে আধুনিকতা নামক অপসংস্কৃতির ছোবল, হনন করেছে স্মার্টফোন নামক অস্ত্র, আঘাত করেছে ইন্টারনেট নামক থাবা।
এতোসবের পর বর্তমান তরুণ প্রজন্মের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ধাপে ধাপে বিশ্ব এগোচ্ছে মানবসম্পদ ধ্বংসের দিকে,কেননা মানুষ এখন আর মানুষের সাথে বসবাস,কমিউনিকেট করে না,তাদের সমস্ত জীবন চলছে রোবটিক্সের উপর।
বাচ্চারা মোবাইল, ট্যাবলয়েড, কম্পিউটার, ল্যাপটপ নির্ভর জীবন কাটাচ্ছে, অনেক সুস্থ সন্তান তাই অল্পতেই রূপান্তরিত হচ্ছে অন্ধত্বে,বোবায়।
কারণ তাদের সাথে কথা বলে না পরিবারের সদস্যরা,তারাও কারো সাথে কথা বলে না। ব্যস্ত সময় পার করে অনলাইন, ইন্টারনেটে দেখা ভিডিও গেমিং, ফেসবুক,টুইটারে।
কখনও কখনও সাইবার ক্রাইমও ঘটাচ্ছে অল্প বয়েসি ছেলেমেয়েরা। পিতামাতার সাথে অসদাচরণ করছে,মোবাইল না দিলে সুইসাইড বা আত্মহত্যার মতো জঘন্য পাপ করতেও দ্বিধা করছে না। এমন পরিস্থিতি আমাদের বিশ্বকে মানবশূন্য করে দিতে পারে অচিরেই।
এমনকি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে ধর্ষণের মতো অপরাধও করছে ইন্টারনেটের কুপ্রভাব এবং অপব্যবহারের তীব্র মাত্রার কারণে।
কলামিস্ট আবদুল মোমেন বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে কয়েক তরুণ মিলে ধর্ষণ করল; তা কেবল সমাজের অবক্ষয়ের চিত্রই তুলে ধরে না, তরুণদের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার সংকটও তুলে ধরে। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় জড়িত তরুণদের বখাটে আখ্যা দিয়ে পার পাওয়া যাবে না, কেননা শিক্ষিত অভিজাত পরিবারের সন্তানেরাও কি একই ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে না? আধুনিকতার অপব্যবহার কি তাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে না?"
সচেতনতা সৃষ্টি করতে হয় পরিবার থেকেই,সেই পরিবার যদি সন্তানের হাতে মরণফাঁদ ধরিয়ে দেয় তাহলে নৈতিক অবক্ষয় তো হবেই,সাথে নিজের সন্তানকে খুঁজে পাবেন না আর।
প্রতিটি পরিবার একটি সন্তানের প্রথম শিক্ষা কেন্দ্র। এখান থেকে সে শিখবে নৈতিকতা, ভদ্রতা, উত্তম আচরণ, সততা। সন্তানকে পরিশ্রমী, উদ্যোমী এবং বিদ্যানন্দ করার দৃঢ় মনমানসিকতা তৈরি করতে হবে পিতামাতা এবং পরিবারেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, "শিশুকে নীতিবাক্য শুনিয়ে কাজ হবে না! তা আচরণের ও পালনের বাস্তবতা পরিবারে ও সমাজে আছে কি না, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। শিশু শেখে মূলত দৃষ্টান্ত থেকে।"
আর আচরণের চোরাবালি হলো স্মার্টনেস নামক ঔদ্ধত্য। মূলত স্মার্টফোন,ইন্টারনেট,ঔদ্ধত্য দিয়ে কখনও স্মার্টনেস আসে না, স্মার্টনেস আসে আচরণে ভদ্রতা- নম্রতা দিয়ে। আদর্শে চোরাবালি রেখে কখনও জীবনকে জয় করা যায় না; চোরাবালি সবসময় গ্রাস করে নেয়। জীবনকে যতটুকু দেবেন তার বরাবর করে সে আপনাকে ফিরিয়ে দেবে,সেটি ভালো হোক কিংবা মন্দ। আমাদের তরুণ প্রজন্মের দরকার খারাপ বাদ দিয়ে ভালো গ্রহণ করা,যেনো নিজের, পিতামাতার এবং পরিবারের অসম্মান না হয়। বিশ্বের বুকে আগামীর ভবিষ্যতকে আমরা যেনো জিইয়ে রাখতে পারি।
লেখকঃ
জোয়াইরিয়া বিনতে আজিজ
শিক্ষার্থীঃ আরবি বিভাগ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০