ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৫ মে ২০২৫
  1. সর্বশেষ

চট্টগ্রামে অরক্ষিত খাল-নালায় আর কত অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হুঁশ আসবে!

প্রতিবেদক
নিউজ ডেস্ক
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ

Link Copied!

মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।

চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার কাপাসগোলায় রিকশা উল্টে হিজড়া খালে পড়ে মায়ের কোল থেকে নিখোঁজ হওয়া ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরিশের মরদেহ দীর্ঘ ১৪ ঘন্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে চামড়ার গুদাম এলাকায় চাক্তাই খালে মৃতদেহটি ভেসে উঠতে দেখেন স্থানীয়রা।পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দায়িত্বরত ব্যক্তিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় লাশটি উদ্ধার করেন।উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার রাতে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার পথে কাপাসগোলা এলাকায় অটোরিকশা উল্টে গেলে মা-দাদীসহ শিশুটি খালে পড়ে যায়। মা-দাদীকে উদ্ধার করা গেলেও পানির স্রোতে হারিয়ে যায় শিশুটি।তারপরই উদ্ধার কাজে নামে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।স্থানীয় লোকজন জানান, শিশু সেহরিশের ফুফু:র বাসা চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায়। সেখানেই বেড়াতে এসেছিলেন পরিবারটি।সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমে উঠেছিলেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়। সেটিই উল্টে পড়ে খালে। খালটি হিজড়া খাল নামে পরিচিত।খালের বিভিন্ন অংশে আবর্জনার স্তূপ জমে ছিল ।আবার খালের পাশেই চালক অটোরিকশাটি ঘোরাতে গিয়ে খালে ফেলে দেন।তাৎক্ষণিকভাবে দুই নারী উঠে এলেও শিশুটিকে পাওয়া যায়নি।নগরে গত ১৭ এপ্রিল ২৫ সন্ধ্যা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এ-কারণে খালে পানির স্রোত বরাবরের চেয়ে বেশি ছিল।স্থানীয় সূত্র থেকে আরও জানা যায়, খালটির সঙ্গে সড়ক একেবারে লাগোয়া।এ-সড়কে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ চলায় খালের পাশে থাকা একটি নিরাপত্তাবেষ্টনী খুলে রাখা হয়েছিল।এ কারণে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটল।নিরাপত্তাবেষ্টনী থাকলে এ দুর্ঘটনা ঘটত না।অবশ্য দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরে মেয়র শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে খালের পাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী বসানো হবে।

খাল-নালায় তলিয়ে যাওয়া নিখোঁজ হওয়া এবং মারা যাওয়ার বিষয়টি কোনো একক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।কেননা গত ছয় বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২০ সালে ২ জন, ২০২১ সালে ৫, ২০২৩ সালে ৩, ২০২৪ সালে ৩ ও চলতি বছর ১ জন। ২০২০ সালের ২১ জুলাই নগরের মহেশখালে পড়ে মৃত্যু হয় মুন্নি আক্তার ও ঝুমা আক্তার নামের দুই কিশোরীর।২০২১ সালের ৩০ জুন মেয়র গলি এলাকায় চশমা খালে পড়ে অটো রিকশাচালক ও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই বছরের ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুরে চশমা খালে পা পিছলে পড়ে তলিয়ে যান সবজি বিক্রেতা ছালেহ আহমেদ। তাঁর মরদেহ এখনো পাওয়া যায়নি। এরপর ৬ ডিসেম্বর একই খালে তলিয়ে যায় শিশু মো. কামাল উদ্দিন। তিন দিন পর নগরের মির্জা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নগরের আগ্রাবাদের মাজারগেট এলাকায় ফুটপাত থেকে পা পিছলে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়ার।অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা বলেন, এ বছর বর্ষার র্আগেই ঝুঁকিপূর্ণ খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনি দেওয়া হবে।যদিওবা বৈশাখ মাস থেকে আমাদের দেশে ঝড় বৃষ্টি ও কাল-বৈশাখীর তান্ডব শুরু হয়ে যায়।

“বারবার মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এখনো খাল ও নালার অনেক অংশ উন্মুক্ত। আবার কোথাও কোথাও বসেছে নিরাপত্তাবেষ্টনী, স্ল্যাব। গত ১৯ এপ্রিল মোটরসাইকেলে নগরে চশমাখাল, মির্জাখাল, হিজড়া খাল, চাক্তাই খালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও বাঁশ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী বসানো হয়েছে। কোথাও খালি পড়ে আছে। শিশু সেহরিশ যে অংশে নিখোঁজ হয়েছিল, সেখানে অবশ্য গতকাল সকালে বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দেওয়া হয়। আবার মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, ২ নম্বর গেট, মেয়র গলি, আল ফালাহ গলি, মেহেদিবাগ, বাকলিয়া ঘুরে দেখা গেছে, নালার ওপর কোথাও স্ল্যাব আছে, কোথাও নেই। সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে খাল-নালা রয়েছে ১ হাজার ১৩৭ কিলোমিটার। খালের সংখ্যা ৫৭।

এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালে কাজ চলছে” {সূত্রঃ প্র/আলো, ২০ এপ্রিল’২৫}। এদিকে নগরের হিজরা খালে পড়ে ছয় মাসের শিশু নিহত হওয়ার পর অরক্ষিত খাল–নালায় বেষ্টনি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। পাশাপাশি বেষ্টনি ও স্ল্যাবহীন খাল–নালা ও ঢাকনাহীন ম্যানহোল আছে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোর তালিকাও প্রণয়ন করছে সংস্থাটি।এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের মেয়র বলেন, এই দুঃখজনক ঘটনায় আমরা কেউ দায় এড়াতে পারি না। একজন নগরবাসী হিসেবে ও মেয়র হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। তবে অতীব পরিতাপের বিষয়,চট্টগ্রাম নগরের “অরক্ষিত নালা ও খালে পড়ে গত ৬ বছরে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এভাবে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও তা তদন্তে কোনো কমিটি গঠন করেনি নালা ও খালের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এতে কী কারণে এবং কাদের গাফিলতি ও অবহেলায় এ ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে, তা চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। মৃত্যুর ঘটনার মতো তদন্তের দায়িত্বও পরস্পরের কাঁধে চাপিয়ে নীরব আছে দুটি সংস্থা। এ কারণে দায়িত্বে গাফিলতির সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বারবার আড়ালে থেকে যাচ্ছেন” । {প্র/আলো,২১ এপ্রিল’২৫}। এ ঘটনার পরে গত ২০ এপ্রিল’২৫ পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি চসিক ও সিডিএ। শুধু এ ঘটনাই নয়, এর আগের ১৩ মৃত্যুর ঘটনায়ও তদন্তের ব্যাপারে নীরব ছিল সংস্থা দুটি। চট্টগ্রাম নগরের নালা ও খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এবং তত্ত্বাবধানের দায়ভার চসিক ও সিডিএর। সংস্থা দুটির হাতে নগরের ৫৭টি খাল এবং ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার নালার দায়িত্ব।“

এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত ছিল বলে স্বীকার করেন চসিক ও সিডিএর দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তবে কেন গঠন করা হয়নি, তার দায় নিতে রাজি হননি তাঁরা” {সূত্রঃ প্র/ আলো, ২১ এপ্রিল}।সেহরিশের মৃত্যুর ঘটনার পর খাল-নালা নিরাপদ করার প্রসঙ্গটি আবার সামনে এসেছে। নগরবাসী সরকারি সংস্থাগুলো দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না বলে অভিযোগ করেছেন। নগরবাসী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেন, এভাবে আর কত দিন। আর কত প্রাণ ঝরলে খালের পাশে বসবে নিরাপত্তাবেষ্টনী। প্রতিটির মৃত্যুর পর একই দাবি তুলতে হয়। কিছুদিন আলোচনা চলে। এরপর সব থেমে যায়। সিটি করপোরেশন কী করছে। তাদের টনক নড়বে কবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক ও আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী জানান, এমন সময়ে এসেও নালা-খালে পড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু কাদের গাফিলতি ও অবহেলায় এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, তা খুঁজে বের করতে সিডিএ-সিটি করপোরেশন কখনো তদন্ত কমিটি গঠন করবে না। কেননা তাদের কাছে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই।পাশাপাশি নালাগুলোর পানি বর্ষার সময় ফুলেফেঁপে ওঠে। অনেক সড়ক ও খাল পানিতে একাকার হয়ে যায়। এতে কোনটি খাল, কোনটি সড়ক তা বোঝার উপায় থাকে না।ফলশ্রুতিতে এসবস্থানে দুর্ঘটনাও বেড়ে যায়।

চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা চসিক এবং সিডিএ কর্তৃপক্ষ মানুষের নিরাপত্তা এবং জনজীবনে স্বস্তি আনয়নের জন্যে এ বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই উন্মুক্ত স্থানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে মানুষের চলাচলা নিরাপদ নির্বিঘ্ন করার যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন। মানুষ শান্তি আর স্বস্তি চায়। বর্ষায় মানুষের জীবন বহুমাত্রিক দুর্ভোগ দুর্দশা ভোগান্তিতে নাকাল এবং বিপর্যস্ত হয়ে উঠে।পাশাপাশি অরক্ষিত উন্মুক্ত খাল-নালায় পড়ে অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মানুষকে শঙ্কিত এবং আতঙ্কিত করে তোলে।ভুলে গেলে চলবে না, খাল- নালায় পড়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হাত সুরক্ষা দেয়া চসিক এবং সিডিএ’র নৈতিক দায়িত্ব এবং কর্তব্যের মধ্যে পড়ে।

ধন্যবাদান্তে,

মোহাম্মদ মন্‌জুরুল আলম চৌধুরী।
দেওয়ানবাজার, চট্টগ্রাম

100 Views

আরও পড়ুন

কাপাসিয়ায় মশলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কৃষক প্রশিক্ষণ

পাহাড় সাজবে নতুন আলোয়, রাঙামাটি আসবেন ৩৫০’র অধিক বিজ্ঞানী

শহর জামায়াতের দায়িত্বশীল সমাবেশে অনুষ্ঠিত

এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করে রামু উপজেলা ছাত্র শিবির

বোয়ালখালীর ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ বিতরণ

রাবিতে বহ্নিশিখার আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ শুরু

সৎ দক্ষ ও দেশ প্রেমিক নাগরিক তৈরি আমাদের অঙ্গীকার শিবির সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম

পেকুয়ায় রাস্তার কার্পেটিং বাধা, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

এইচএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ২০২৫

কমলগঞ্জে অয়েকপম ফাউন্ডেশন মেধাবৃত্তি প্রদান ও ‘মিৎয়েং’ স্মারকের মোড়ক উন্মোচন

ঘোড়াশালে অগ্নিকান্ডে পুড়ল বসত বাড়ি

শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত