*****************************
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী।
আমাদের মধ্যে আত্মগ্লানি এবং অনুশোচনা এক সঙ্গে কাজ করছে।কতিপয় মানুষের আচরণ এমনভাবে বদলে যাবে তা যদি আগে ভাগে কিছুটা আঁচ করা যেতো তাহলে আমরা সবাই মিলে তাদের জন্য এমন বদান্যতা দেখাতাম না। আশ্রয়হীনের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার মানে তো নিজেদেরকে সৃষ্টি কর্তার আশ্রয়ে সোপর্দ করা।
মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন, উন্নতি অস্বাভাবিক কিছু নয়। অস্বাভাবিক হচ্ছে মানুষের স্বাভাবিক সুন্দর চেহারার আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা নিজেদের কুৎসিত কদাকার চেহারার ভয়ংকর হিংস্র দানবীয় প্রকাশ। অকৃতজ্ঞতার পাশাপাশি সব সম্মান শ্রদ্ধা মুহূর্তেই বিলীন করে দিয়ে উচ্চতর আসন থেকে ঝেটিয়ে নর্দমায় ফেলে দেয়া। দু:খ আর আফসোসের বিষয় হচ্ছে এমন নির্লজ্জ অমানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে যদি আরও নি:স্ব অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো যেতো তবে আজকে আমাদেরকে আত্মগ্লানিতে ভুগতে হতো না।
একটা প্রবাদ আছে অনেকেই যে পাতে খায় সে পাত কাঁনা করতে দ্বিধা করে না। প্রকৃত অর্থে সমাজের কতিপয় মানুষের চক্ষু লজ্জা ক্রমশ লোপ পাচ্ছে। লোপ পাচ্ছে হিতাহিত জ্ঞান। বেমালুম ভুলে গেছে সেই দু:খের দিনের সহায়তা সহমর্মিতা সহানুভূতিশীলতা সহৃদয়তার কথা।কেউ ঢোল বাজিয়ে বাহবা পাওয়ার জন্য কাউকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়ায় না। কিন্তু দিন শেষে নিজের বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা ভুলে গিয়ে উপকারীদের দিকে বিষধর সাপের মতো ফণা তোলবে সেটা কেউ দু:স্বপ্নেও ভাবেনা। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করা।
অযত্ন অবহেলা গাফেলতি করে দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে উপকারকারীদের ক্ষতি সাধন করবে সেটা মোটেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। মানুষের ভেতরকার ভদ্রতা সৌজন্যতা মনুষ্যত্ববোধটুকু যখন লোপ পায় তখন তাদের পক্ষে যে কোনো ধরনের অসদাচরণ, অসম্মান করা কোনো মারাত্মক এবং ভয়ংকর বিষয় নয়। অন্তরে অনুশোচনা বিবেক বিবেচনা জাগ্রত হয়না। আবেগ অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়। বর্তমান আর্থিক উন্নতি এবং অবস্থার পরিবর্তনের কারণে চোখে পুরোনা সেই দু:খের স্মৃতি এখন আর উঁকি দেয়না।
মানুষ মানুষের পরম এবং বিশ্বস্ত বন্ধু। সেই মানুষই আবার মানুষের চরম এবং হিংসাপরায়ণ শত্রু।অর্থের দাফটের কাছে সাহায্য সহযোগীতা আন্তরিকতা সহমর্মীতা সবকিছুই দাফন হয়ে যায়। ভুলে গেলে কী চলবে -- এই দিন দিন নয় আরও দিন আছে, এই দিনকে নিয়ে যাবে সেদিনেরও কাছে। দুই দিনের দুনিয়ায় মানুষের আত্মতৃপ্তি এবং বড়াই করার আদৌ কোন সুযোগ আছে কী? যদি মানুষ পরকালকে বিশ্বাস করে থাকে তাহলে তাদেরকে আত্মশুদ্ধি এবং অনুশোচনার পথে ফিরে আসতে হবে। এক ফোঁটা নাপাক পানি দিয়ে তৈরি মানুষের কীসের এতো দম্ভ আর অহংকার? অহংকার একমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহ্ সুবাহান তায়ালারই সাজে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০