মোহাম্মদ মন্জুরুল আলম চৌধুরী।
বাঙ্গালী বড়ই আবেগপ্রবণ জাতি। বৈশ্বিক মহামারি বা অতিমারি করোনাভাইরাসের কঠোর চোখ রাঙ্গানীর মধ্যেই এই আবেগের তোড়ে প্রাণের টানে শেকড়ের টানে মানুষ স্রোতের মতো গ্রামে ছুটে যাচ্ছে। অপ্রতুল যানবাহন, ফেরী কোনো কিছুই মানুষের জনস্রোতকে দমিয়ে বা আটকিয়ে রাখতে পারছে না। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর রেকর্ড গড়ছে প্রতিদিন। চারিদিকে অক্সিজেনের জন্য, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য হাহাকার। রোগী আর স্বজনদের আর্ত-চিৎকারে আকাশ বাতাস যেন শোকে মুহ্যমান। মৃত দেহ দাহ এবং কবর দেয়ার স্থান নেই। দাহের লাইন, কবর দেয়ার লাইন। আরও দুঃখের বিষয় হচ্ছে বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “মুম্বাইয়ে ২৫ বছরের এক নারী বিরল কিন্তু বিপজ্জনক ছত্রাক সংক্রমণ ‘মিউকরমাইকোসিসে’ আক্রান্ত হয়েছেন। আগ্রাসী এই ছত্রাক নাক, চোখ এবং কখনো মস্তিষ্কেও ছড়িয়ে পড়ে। ছত্রাকটি ব্লাক ফাঙ্গাস নামে পরিচিত”। জীবন বাঁচানোর জন্য ঐ নারীর চোখ অপসারণ করতে চিকিৎসক বাধ্য হন। ওই নারী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মাত্র তিন সপ্তাহ আগে সুস্থ হয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি ব্লাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে চোখ হারান। ভারতে এই বিরল ব্লাক ফাঙ্গাসে অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে খবরে প্রকাশ।
ঈদ বাঙ্গালীর জীবনে সার্বজনীন আনন্দ উৎসবের অন্যরকম মাত্রা যোগ করে। মানুষ গ্রামে যায়, গ্রামের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আনন্দ উৎসব উদযাপন করে। অনেকেই কেবল একবারই ঈদে গ্রামে যায়, মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে, আনন্দ বেদনা মিলে মিশে ভাগ করে নেয়। অনেকেই বিভিন্ন ধরণের সামাজিক, পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত কাজ কর্ম এই ঈদের ছুটিতেই সেরে নেয়। তবে এসব হচ্ছে স্বাভাবিক সময়ের ঈদের বিষয়। কিন্তু আমরা বছরেরও বেশি সময় ধরে বৈশ্বিক মহামারি বা অতিমারি করোনাভাইরাসের সঙ্গে জীবন জীবিকার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত আছি। এবছরের মার্চ এপ্রিলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও লকডাউনসহ বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপের কারণে করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর লাগাম টেনে ধরা গেছে। তথাপি অতি আবেগ উৎসুক্যতার জন্য গ্রামমুখী মানুষের ঢল, বিভিন্ন মার্কেট শপিংমলসহ ফুটপাতে ঈদের বাজারের জন্য ব্যাপক জনসমাগম এবং মানুষের বেপরোয়া চলাফেরা, স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করাসহ বিবিধ কারণে ঈদের পরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সরকার, স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা। এমন অবাধ, অহেতুক, অযথা, বেপরোয়া, অসচেতন চলাফেরার কারণে শহর থেকে করোনাভাইরাস গ্রামে এবং গ্রাম থেকে শহরে মানুষের মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ঈদের আনন্দ উৎসব উৎযাপন বা ভোগ করতে গিয়ে আমরা সচেতনভাবেই আমাদের আপনজনদেরকে সংক্রমিত করে তাঁদেরকে কি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছি না। কেননা ইতোমধ্যেই ভারতের করোনার চারটি ধরণ বা ভেরিয়েন্টের বাংলাদেশে উপস্থিতির কথা দেশবাসী অবহিত হয়েছে। ভারতের মারাত্মক মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলা ভেরিয়েন্ট যদি এদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে দেশের জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা ভয়াবহ বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। জানিনা ঈদের আনন্দ কত পরিবারের জন্য দুঃখ এবং বিষাদের কারণ হয়ে উঠবে। সরকার এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা গ্রহণ না করে মানুষের অপরিণামদর্শীন কর্মকাণ্ডের চরম মাশুল গুনতে হবে দেশ ও জাতিকে। সবার মনে রাখা উচিৎ - ঈদের আনন্দ যেন বিষাদে রূপ না নেয়। আল্লাহ্ আমাদের দেশ ও জাতিকে হেফাজত করুন। ঈদ মোবারক।
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ মন্জুরুল আলম চৌধুরী ।
আরবান ভিলা
২২ গুরা মিয়া চৌধুরী লেইন
দেওয়ান বাজার । চট্টগ্রাম -- ৪০০০.
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০