মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম সাদিক
সর্বকালের, সর্বযুগের শ্রেষ্ঠ মহামানব রাসুল (সা:)-কে সমগ্র নবী রাসুলের মুজেযাসহ অসংখ্যগুণ বৈশিষ্ট ও মুজেযা দিয়ে সৃষ্টিকর্তা এই ধরাধামে প্রেরণ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরুপ হযরত নুহ (আ:)-এর শুকরিয়া, হযরত ইব্রাহিম (আ:)-এর সুন্নাত, হযরত মুসা (আ:)-এর এখলাছ, হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর সত্যবাদিতা, হযরত ইয়াকুব ও আইয়ূব (আ:)-এর ছবর, হযরত ঈসা (আ:)-এর ন¤্রতাসহ সকল গুণবৈশিষ্ট্য একত্রিতভাবে রাসুল (সা:)-কে প্রদান করা হয়েছিল। রাসুল (সা:)-এর শান এতো উচ্চ মাকামে ছিল যা পৃথিবী ও আসমান জমিন এর তুলনায় বহুগুণ বেশি। তাঁর শানে রিসালাত বর্ণনা এমনকি তদাপেক্ষা অধিক মহান মুজেযা ও শ্রেষ্ঠতম ফজিলত সৃষ্টিকর্তা দান করে ছিলেন যা বর্ণনাতীত। ৬ষ্ঠ হিজরি হুদাইবিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। সেই সন্ধিনামায় মুশরিকরা আপত্তি করলো রাসুল (সা:)-এর নামের সাথে ‘রাসুল’ শব্দ যোগ করা যাবে না। সন্ধিনামা হতে মুছে ফেলতে হবে, অন্যথায় চুক্তিতে অংশ গ্রহণ করবে না। এমতাবস্থায় রাসুল (সা:) শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি হযরত আলী (রা:)-কে নির্দেশ দিলেন, হে আলী তুমি চুক্তিনামা হতে ‘রাসুল’ শব্দটা মুছে দাও। কিন্তু রাসুল (সা:)-এর শান-মানকে উচ্চ মাকামে উত্তীর্ণ করেছেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। তাঁর পিয়ারা রাসুল (সা:)-এর যে যশগান গেয়েছেন, সেই শান ও মান মর্যাদার উপর কতিপয় কাফির মুশরিকেরা আপত্তির মুখে রিসালাতের ‘রাসুল’ শব্দটা হযরত আলী (রা:) পক্ষে মূছে ফেলা সম্ভব ছিল না। রাসুল (সা:) তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য্য ও মহানুভবতার খাতিরে ‘রাসুল’ শব্দ মুছে ফেলতে রাজি হলেও, কোনো আশিকে রাসুলের পক্ষে রাসুল (সা:)-এর শান-মান ও রিসালাতের ন্যূনতম মর্যাদাহানি অথবা অবমাননায় আপস করা সম্ভব হতে পারে না। রিসালাতের দাওয়াতকে সার্বজনীন ও সুদূর প্রসারী করার লক্ষ্যে স্বয়ং রাসুল (সা:) যে হিকমত সূক্ষ্ম ও সুচিন্তিত ধারায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা বাহ্যিক ছাড় দিলেও দিতে পারেন, যা সৃষ্টিকর্তার একান্ত কৌশল হয়ে থাকে। তাই কোনো মুমিনের পক্ষে বিবেক, যুক্তির দৃষ্টি কোন থেকে রিসালাতের অবমাননায় সায় দিতে পারে না। হযরত আলী (রা:) আরজ জানালেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা:) আমায় ক্ষমা করুন, আমার পক্ষে এরূপ কাজ কোনোদিন সম্ভব নয়। আপনার শান ও মানের উপর কখন কলম উঠাতে পারি না। রাসুল (সা:) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত ও আমাদের আদর্শ হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন তাই তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমস্ত সাহাবা-ই-কেরামের একান্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে গুটিকয়েক কাফিরের আব্দারে রাসুল (সা:) চুক্তিনামা থেকে ‘রাসুল’ শব্দ স্বহস্তে মুছে দিলেন।
রাসুল (সা:)-এর নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও সাহাবা-ই-কেরামের পক্ষে রিসালাতের মর্যাদাকে কোন কৌশলে ও ন্যূনতম ক্ষুণœ করা সম্ভব হয়নি। যার অনেক প্রমাণ বিদ্যমান। সাহাবা-ই-কেরামের পর থেকে অদ্যাবধি তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন, সলফে সালেহীন, গাউস কুতুব, পীর, ওলী এবং কোন হক্কানী উলামাই কেরাম রিসালাতের মর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন শত বাধা বিপত্তি সত্ত্বেও। অতীতকাল থেকেই ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও নাসারা সম্প্রদায় এবং তাদের অনুসারীরা রাসুল (সা:)-এর পবিত্র রিসালাতের সুউচ্চ মাকাম দেখে তাদের মর্ম পীড়িত হয়েছে। আজও সেই সকল ইয়াহুদীদের দোসররা রাসুল (সা:)-এর রিসালাতের মর্যদাকে অতি সন্তর্পনে তাদের এই ঘৃণ্য মিশন চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে সার্বক্ষনিকভাবে রাসুল (সা:)-এর মর্যাদায় কলম্ক লেপনে অবিরাম কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কখন ভদ্র লেবাসে চেঁচিয়ে ওঠে বলে, রাসুল (সা:) দোষ গুণের যৌথ মিশ্রণের মানুষ, রাসুল (সা:)-এর শাফাআতের আশা রাখা বৃথা, রাসুল (সা:)-এর গুণাকীর্তন করলে সৃষ্টিকর্তার সাথে শিরক্ শামীল হবে ইত্যাদি। শানে রিসালাতের অবমাননার এর সকল কটুক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে আসছেন আমাদের আশিকে রাসুল উলামা-ই-কেরামগণ। আবু জেহেল, আবু লাহাবের উত্তর সূরীরা প্রকাশ্যে তাদের ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে রাসুল প্রেমিকদের হৃদয়ে ঝড় তুলতে চায়। তারা নিপুণভাবে রাসুল (সা:)-এর মর্যাদা ক্ষুণœ করতে চায়। তারা ধৃষ্টতা দেখিয়ে বিশ্বের মানুষের বিবেককে আহত করেছিল। ডেনমার্কের একটি পত্রিকায় রাসুল (সা:)-এর ১২টি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। আর ঐসব ব্যঙ্গচিত্রে রাসুল (সা:)-কে একজন সন্ত্রাসী, জঙ্গি হিসেবে দেখানো হয় (নাউযুবিল্লাহ)। যিনি শান্তির বার্তাবাহক আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জিহাদ করে গেছেন, যার আদর্শ দিতে পারে ইহকালের ও পরকালের মুক্তির নিশ্চয়তা, তাই অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন অমুসলিম বিবেকধারীরাও, এমন মহামানবকে চিহ্নিত করা হয় একজন সন্ত্রাসী, জবর দখলকারী হিসেবে।
সৃষ্টিকর্তা যার চরিত্রকে নিস্কলুষ রেখেছেন, যাঁর শান ও মান মাকামে আ’লায়, এসব ব্যক্তিদের আওয়াজে কি তাঁর রিসালাতের অবমাননা হবে? তাঁর মর্যাদার অনুপরিমাণ কমতির সুযোগ নেই। শানে রিসালাতের দুশমনদের দৌড় ঝাপ এতো কেন? কারণ তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি। সৃষ্টিকর্তা তাদের ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দেন, যাতে তারা অপকর্মে বেশি অগ্রসর হতে পারে। এজন্য দেখা যায়, ডেনিশ পত্রিকায় রাসুল (সা:)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের পর ডেনমার্কের স্থানীয় মুসলমান এবং বিদেশী মিশনের মুসলিম কূটনীতিকদের প্রবল প্রতিবাদের মুখে পত্রিকার কর্তৃপক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করে। কিন্তু তিন মাস পর মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত দেয়ার জন্য কার্টুন পুন: প্রকাশ করে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানী, হল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ ইউরোপের কতিপয় মুসলিম বিদ্বেষী পত্রিকা। একের পর এক ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। যা ইসলাম বিদ্বেষীদের গভীর ষড়যন্ত্রের ফসল। মত প্রকাশের স্বাধীনতার ধুঁয়াতুলে যারা কার্যত রাসুল (সা:)-এর মর্যাদাহানি ঘটাতে চায়। ইন্দোনেশিয়া থেকে আরম্ভ করে পাকিস্তান, ইরাক, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্য হয়ে উত্তর আফ্রিকা পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যাপী উম্মতে মুহাম্মদীর শানে রিসালাতের উত্তাল মিছিল, দেশে দেশে ইউরোপ বিদ্বেষী স্লোগান, ইউরোপীয় পণ্য বর্জনসহ তাদের বিরুদ্ধে হুংকার, মুসলিম স্বাতন্ত্র্য ও শানে রিসারাতের সমুন্নত রাখার এক বিপ্লবী জবাব। পৃথিবীর একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্তের কোটি কোটি মুসলিমদের বজ্র হুংকারে প্রকম্পিত করেছিল বিশ্বের প্রতিটি রাজপথ, চার দিকে শুধু প্রতিধ্বনি ‘নারায়ে রিসালাত ইয়া রাসুলাল্লাহ’। মুসলমানদের হুংকারে বাধ্য হয়ে কাফির মুশরিকেরা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। রাসুল (সা:)-এর মর্যাদা অবমাননায় সর্বদা যারা লিপ্ত; তাদের বিরুদ্ধে বড় বড় মিছিল দিলেই চলবে না। বরং বাতিলের সমুচিত জবাব দিতে হলে আমাদের হুব্বে রাসুল সুন্নাতের অনুশীলন ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে রাসুল (সা:)-এর মর্যাদা রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক।