আল্লাহর অশেষ নেয়ামতের শোকর পরিপূর্ণভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। তবুও সবসময় শুকরিয়া আদায় করা জরুরি। কারণ শুকরিয়া আদায়ের নির্দেশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকেই এসেছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, তাহলে আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার নেয়ামতের শোকর আদায় করো, আমার অকৃতজ্ঞতা করো না।’ (সুরা বাকারা)
শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ তাআলা নেয়ামত বাড়িয়ে দেন, রিজিক প্রশস্ত করেন। পক্ষান্তরে অকৃতজ্ঞদের কঠিন শাস্তির হুঁশিয়ারি দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘..যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং ঈমান আনো তাহলে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ কী করবেন? আল্লাহ তাআলা পুরস্কার দানকারী সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নিসা: ১৪৭)
যেকোনো ভালো সংবাদ বা কোনো নেয়ামত পাওয়ার পর আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ সেজদা করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে কোনো আনন্দের খবর এলে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য সেজদা করতেন। (আবু দাউদ: ২৭৭৪; মেশকাত: ১৪৯৪)। সাহাবি কাব বিন মালেক (রা.) তার তওবা কবুল হওয়ার সংবাদ শুনে সেজদায় লুটিয়ে পড়েছিলেন। (বুখারি: ৪৪১৮; মুসলিম: ৭১৯২)
আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের জন্য দু’রাকাত নামাজ পড়া উত্তম, যাকে সালাতুশ শোকর বা শুকরিয়ার নামাজ বলা হয়। শুধু সেজদার মাধ্যমেও শুকরিয়া আদায় করা যায়; তখন তাকে সেজদায়ে শোকর বা শুকরিয়ার সেজদা বলা হয়। এ উভয় পদ্ধতিতে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা যায়। শুকরিয়ার নামাজের রাকাতের সংখ্যা নির্দিষ্ট বা স্বতন্ত্র কোনো নিয়ম নেই। তবে দুই রাকাতের কম করা যাবে না। অন্যান্য নফল নামাজের মতো করেই আদায় করতে হয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৭/১২৫)
শুকরিয়ার সেজদা হবে একটি এবং এর জন্য সতর ঢাকা, অজু করা, কেবলামুখী হওয়া এবং সালাম ফেরানো শর্ত নয়। কেননা এটি নামাজ নয়, বরং শুকরিয়া আদায়মাত্র। (ওসাইমিন, শারহুল মুমতে: ৪/৮৯-৯০, ১০৫)
সেজদায়ে শোকরের জন্য পবিত্রতাও শর্ত নয়। বরং যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থায় সেজদা দেওয়া জায়েজ। শরীর পাক থাকুক অথবা নাপাক। এমনকি এই সেজদায় মহিলাদের পূর্ণ পরদা করা ইত্যাদির ব্যাপারেও দলিল নেই। এই সেজদায় তাশাহুদ বা সালাম নেই। তাকবির দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। কেননা এসবের পক্ষে দলিল নেই। আর দলিল ছাড়া কোনো আমল শরিয়তসম্মত হিসেবে বিবেচ্য নয়।
তবে কেউ কেউ এই সেজদার ক্ষেত্রেও আদব রক্ষার কথা বলেছেন। সেজদা যেহেতু নামাজের রুকন, তাই সেজদার আদব রক্ষার্থে কেবলামুখী হওয়া, সতর ঠিক রাখা ইত্যাদিকে উত্তম বলেছেন তারা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০