---+------
মাহে শাবান অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি মাস। শাবান হচ্ছে আরবী শা'বান মাসের ১৫ তারিখ, যা ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে শবে বরাত বা শব-ই-বরাত নামে পালিত একটি পূণ্যময় রাত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানগণ বিভিন্ন কারণে এটি পালন করেন।
আর ১৪ শাবান দিবাগত রাত (শবেবরাত) সবিশেষ ফজিলতপূর্ণ, বরকতময় মহিমা, স্বাতন্দ্র্যমন্ডিত ও তাৎপর্যপূর্ণ। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ রাতটিকে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (অর্ধশাবান রাত) হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
কিন্তু আমাদের সমাজে এই রাতটি শবেবরাত তথা মুক্তি, নিষ্কৃতি, পাপ মোচনের রাত নামেই সমধিক খ্যাত। মাহে শাবানের সূচনা থেকেই ধর্ম প্রাণ মুসলমানদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে তাই এই রাতকে লাইলাতুল বরাত বলা হয়।। কিন্তু সমাজের প্রবল প্রথাগত, আড়ম্বরপূর্ণ উদযাপন ও রেওয়াজি সংস্কৃতিতে শবে বরাতের প্রকৃত মাহাত্ম্য, মর্যাদা ও পবিত্রতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে কি না এ নিয়ে আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে। আর এ জন্য শবে বরাতের প্রকৃত গুরুত্ব ও তাৎপর্য, ফজিলত, মাহাত্ম্য ও করণীয় এবং বর্জনীয় সম্পর্কে সবার সম্যক জানা থাকা একান্ত আবশ্যক।
শবে বরাতের ফজিলত অসীম কল্যানে ভরপুর এই শবে বরাতের রজনী বান্দার জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ এক নিয়ামত। এ রাতে মহান রাব্বুল আলামীন মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন, দয়ার সাগরে ঢেউ উঠে, মাগফিরাতের দ্বার উম্মোচিত হয় পাপি-তাপি সকল বান্দার জন্য।
শবেবরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মধ্য শাবানের রাতে তার সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং মুশরেক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তায়ালা যেকোনো সময় তার বান্দার দোয়া- প্রার্থনা কবুল করতে পারেন। তার পরও বছরের এমন কিছু বিশেষ সময়-ক্ষণ রয়েছে, যে সময়গুলোর মর্যাদা ও ফজিলত অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। সেসব দিন-ক্ষণে কৃত ইবাদত, দোয়া-মোনাজাতের মর্যাদা বেশি ও সওয়াবের মাত্রা অপরিসীম। এ বিষয়গুলো মুসলমানদের মনে শবেবরাতে ইবাদত-বন্দেগি ও বেশি বেশি নেক কাজ করার স্পৃহাকে জাগিয়ে তোলে। ফলে দেশব্যাপী শবেবরাত উপলক্ষে সৃষ্টি হয় এক ধর্মীয় আবহ। যা মানুষের ধর্মীয় বিষয়াদি পালনের আগ্রহ সৃষ্টিতে বিরাট সহায়ক হয়।
বরকত নাযিলঃ-
মহান আল্লাহ পাক কুরআনে ইরশাদ করেন- অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে (শবে বরাতে) কুরআন নাযিল করেছি অর্থাৎ নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিশ্চয়ই আমিই ভয় প্রদর্শনকারী। উক্ত রাত্রিতে আমার নির্দেশে আমার পক্ষ থেকে সমস্ত প্রজ্ঞাময় কাজগুলো ফায়ছালা করা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই প্রেরণকারী।” (পবিত্র সূরা দুখান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৫) উক্ত আয়াত শরীফের মধ্যে বর্ণিত ‘লাইলাতুল মুবারাকাহ’ শব্দ দ্বারা ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান’ তথা অর্ধ শা’বানের রাত বা শবে বরাতকে বুঝানো হয়েছে। সর্বজনমান্য বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীরগুলোসহ সকল তাফসীরসমূহে এ কথাই উল্লেখ আছে। মুসলমানগণের দোয়া কবুলের রাত, ক্ষমা বা মাগফিরাতের রাত, তওবা কবুলের রাত, বিপদ-আপদ থেকে নাযাত পাওয়ার রাত এবং এক বছরের হায়াত ও রিযিকের ফায়সালার রাত। (সুবহানাল্লাহ)[১]
শবে বরাতের রাতে করণীয়:
এই রাত্রের সূচনাতেই অর্থাৎ সূর্যাস্তকালে গোসল করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। অত:পর মাগরিবের নামাজ পড়ে বিভিন্ন তাসবি-তাহলীল পাঠ করলে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। তারপর এশার নামাজ পড়ে (বিতরের নামাজ বাকী রেখে) দুই রাকাত নিয়তে নফল নামাজ পড়তে পারেন। কিছুক্ষণ পর পর দোয়া করবেন। দরুদ শরীফ পড়বেন, ক্বোরআন তিলাওয়াত করবেন। বেশি বেশি করে কাজ্বা নামাগুলো আদায় করবেন। এভাবেই রাতটা কাটিয়ে দিতে পারলেই শবেবরাতের পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে। [ফজরের আগেই বিতরের নামাজ আদায় করতে হবে] শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল প্রসঙ্গে অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,“আল্লাহ পাকের হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই দোয়া বা মুনাজাত পাঁচটি রাতে কবুল হয়ে থাকে । (১) পহেলা রজবের রাত (২) শা’বানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত (৩) ক্বদরের রাত (৪) পবিত্র ঈদুল ফিতরের রাত (৫) পবিত্র ঈদুল আযহার রাত (মা ছাবাত বিস্ সুন্নাহ, গুনইয়াতুত্ত্বালিবীন, মুকাশাফাতুল কুলুব) সুতরাং কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত যে, শবে বরাত কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। অতপর আমরা বিশ্ব মুসলিম জাতি শবে বরাত কে যথাযোগ্য গাম্ভীর্যপূর্ণভাবে পালন করবো।
---------
লেখক
ইউনসুফ আরমান
ফাজিল, কামিল, বি.এ অনার্স
এম.এ, এলএল.বি কক্সবাজার।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০