হজরত আসমা (রা.)
হজরত আবু বকর (রা.)-এর বড় কন্যা আসমা। মহানবী (সা.)-এর হিজরতের সময় হজরত আসমা যে অবদান রেখেছেন, ইতিহাসের পাতায় তা সোনালি হরফে লেখা আছে। আবু বকর (রা.)-কে নিয়ে যখন নবী (সা.) বাড়ি ছেড়ে চুপিসারে সওর পর্বতের গুহায় আশ্রয় নেন, তখন আবু জাহেল দলবল নিয়ে এসে আসমাকে জেরা করে এবং নির্যাতন করে। তবে দৃঢ়চেতা আসমা কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সওরের নির্জন গুহায় গোপনে নিজেই খাবার সরবরাহ করেছিলেন সন্তানসম্ভবা আসমা। নিজের কোমরবন্দ ছিঁড়ে দুই টুকরো করে এক টুকরোতে খাবার বেঁধে এবং আরেক টুকরো কোমরে বেঁধে রওনা করতেন। এই ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়ে মহানবী (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ এই কোমরবন্দের বিনিময়ে জান্নাতে তোমাকে দুটো কোমরবন্দ দান করুন।’
কিছুদিন পর আসমা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। তখন তাঁর সন্তান প্রসবের সময় ঘনিয়ে এসেছিল। তবুও তিনি হিজরত করতে পিছপা হননি। অবশেষে মদিনার অদূরে কুবায় পৌঁছানোর পর আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর জন্ম নেন। তিনিই মদিনায় ভূমিষ্ঠ মুহাজিরদের প্রথম নবজাতক।
হজরত উম্মে সালামা (রা.)
উম্মে সালামা (রা.) নবুওয়তের প্রথম দিকে ইমান আনেন। মদিনায় হিজরত করার আগে স্বামীর সঙ্গে তিনি আবিসিনায়ও হিজরত করেছিলেন। সেখানে তাঁর পুত্র সালামার জন্ম হয়। আবিসিনিয়া থেকে মক্কায় ফিরলে নবী (সা.) তাঁদের মদিনায় হিজরত করার আদেশ দেন। তাঁর স্বামী মদিনায় হিজরত করলেও পরিবারের বাধার মুখে তিনি সঙ্গে যেতে পারেননি। শিশু সালামাকে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কেড়ে নিয়ে যায়। সেই দিনগুলো বড় কঠিন ছিল উম্মে সালামার জন্য।
কিছুদিন পর সন্তান তাঁর কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। তিনি তাকে নিয়ে একাই মদিনার পথ ধরেন। ৫০০ মাইল দূরের এ বিশাল মরুপ্রান্তর পাড়ি দেওয়া মোটেও সহজ ছিল না। তবুও এক বুক সাহস নিয়ে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে তিনি বেরিয়ে পড়েন। পথে সাহাবি ওসমান ইবনে তলহার সঙ্গে দেখা হলে তিনি তাঁকে বাহনে চড়িয়ে সম্মানের সঙ্গে মদিনায় পৌঁছে দেন।
মদিনায় তাঁর তিন সন্তান জন্ম নেয়। উহুদ যুদ্ধের পর তাঁর স্বামী ইন্তেকাল করেন। কিছুদিন পর মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
হজরত আয়েশা (রা.)
হিজরতের সময় বড় বোন আসমার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন ছোট বোন আয়েশা (রা.)। তিনি মা, বোন ও ভাইয়ের সঙ্গে মদিনায় হিজরত করেন। পথে উট পাগলা দৌড় দিলে তিনি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
মদিনায় পৌঁছে আয়েশা মায়ের সঙ্গে খাজরাজ গোত্রের একটি গ্রামে বসবাস শুরু করেন। সেই দিনগুলোতে মদিনার বৈরী আবহাওয়ার কারণে মুহাজিরদের মধ্যে ব্যাপক রোগবালাই দেখা দেয়। আবু বকর, বিলালসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। একসময় আয়েশাও এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন যে তাঁর মাথার সব চুল পড়ে যায়।
তখন নবী (সা.) দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, মদিনাকে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দিন।’ এই দোয়ার বরকতে এবং কর্তৃপক্ষের উত্তম ব্যবস্থাপনায় মদিনা এখন বিশ্বের অন্যতম স্বাস্থ্যকর নগরী।