জন্ম, শৈশব, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য, ধাপে ধাপে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে জীবনের স্বাদ ভোগ করান। তবে সবার জীবন এমন স্বাভাবিক নিয়মে কাটে না, অনেকেই জীবনের সর্বশেষ স্তরে পৌঁছার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চিরস্থায়ী ঠিকানায় চলে যান।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তোমাদের দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন, অতঃপর দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন, শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।’ -(সুরা রুম, আয়াত : ৫৪)
দীর্ঘ জীবন এবং সুন্দর আমল যে কল্যাণ বয়ে আনে
পৃথিবীতে দীর্ঘ অথবা স্বল্প আয়ু যাই হোক কেউ যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান, ইখলাস ও নববী আদর্শের আলোকে পরিচালিত হয় তখন চিরস্থায়ী কল্যাণের ক্ষেত্রে বয়সের স্বল্প-দৈর্ঘ্যের পার্থক্য থাকে না। বরং সৎকর্মের সঙ্গে বয়সের দৈর্ঘ্য ব্যক্তির উভয় জগতের কল্যাণ ও সৌভাগ্যের আলোকবর্তিকা হয়ে ধরা দেয়।
এ বিষয়ে এক হাদিসে সাহাবি হজরত আবু বাকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, কোনো এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, ‘যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। ’ সে আবার প্রশ্ন করল, মানুষের মধ্যে কে নিকৃষ্ট? তিনি বললেন, ‘যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে মুমিনের বয়স বৃদ্ধি তার প্রভূত কল্যাণই বয়ে আনে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬৮২)
অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার পথে যে লোক তার চুল সাদা করেছে, অর্থাৎ বুড়ো হয়েছে, তার জন্য কেয়ামতের দিন একটি আলোকবর্তিকা থাকবে।’ -(তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৫)
ইসলামে প্রবীণদের সম্মান
বয়স্ক-প্রবীণ ব্যক্তিদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম, প্রবীণদের সম্মানের মাধ্যমে বরকত লাভ হয় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘বয়স্কদের সঙ্গেই তোমাদের কল্যাণ ও বরকত রয়েছে।’ (ইবনে হিববান : ৫৫৯) তাই বয়স্ক লোকদেরকে শ্রদ্ধা করা। যথাসম্ভব তাদের খেদমত করা। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘নিশ্চয় শুভ্র চুলবিশিষ্ট মুসলিমকে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার শামিল।’ -(আবু দাউদ : ৪৮৪৩)
হাদিসে এসেছে, ‘রাসুল (সা.) সাদা চুল ওঠাতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা মুমিনের নূর। তিনি আরও বলেন, ইসলামে যদি কেউ সাদা চুল বিশিষ্ট হয় আল্লাহ তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন, একটি পাপ মোচন করে দেন এবং একটি পুণ্য লিখে দেন।’ (আবু দাউদ : ৪২০২; ইবনে মাজা : ৩৭২১)
প্রবীণদের অসম্মানে কঠোর হুঁশিয়ারি
প্রবীণ ও মুরব্বিদেরকে সম্মান প্রদর্শন না করলে রাসুল (সা.) কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। হজরত জারবি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত আনাস বিন মালিককে (রা.) আমি বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘একজন বয়স্ক লোক রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করতে আসল। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে। তা দেখে রাসুল (সা.) বললেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না, সে আমাদের উম্মত নয়।’ (তিরমিজি : ১৯১৯)।
বড়দেরকে দেখলেই আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘ছোটরা বড়দের, চলমান ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যক বেশি সংখ্যককে সালাম প্রদান করবে।’ (বুখারি : ৬২৩১)
একবার তিন সাহাবি—আব্দুর রহমান বিন সাহাল, মুহাইয়্যাসাহ এবং খুয়াইসা ইবনে মাসুদ নবীজির দরবারে গেলেন। আব্দুর রহমান বিন সাহাল প্রথমে কথা বলতে শুরু করলেন। নবীজি তাঁকে থামিয়ে বললেন—বড়কে আগে কথা বলতে দাও। (কারণ তিনি সবার ছোট ছিলেন) তিনি তখন চুপ হয়ে গেলেন। বাকি দুজন কথা বলা শুরু করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩১৭৩)
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০