'লাইলাতুল কদর' অর্থ হলো মহিমান্বিত রজনী বা পবিত্র রজনী। যেখানে লাইলাতুল অর্থ রজনী বা রাত এবং কদর অর্থ সম্মান বা মর্যাদা। লাইলাতুল কদর এর পুরো অর্থ হলো সম্মানিত রজনী। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনেও অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে 'কদর' নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও নাযিল হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করেন-
"নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।" (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)
পবিত্র কদর রজনীতে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন নাযিল করেন। ফেরেশতাদের প্রধান হযরত জিবরাঈল (আ.) কে আল্লাহ পাক ওহি নিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) এর নিকট প্রেরণ করেন। তিনি যখন হযরত মুহাম্মদ (স.) এর নিকট আসলেন, তখন প্রিয় নবি (স.) মক্কার নুর পর্বতে হেরা গুহায় মোরাকাবা বা ধ্যান অবস্থায় ছিলেন। এবং প্রথম কোরআন নাযিল হতে শুরু হয়, শুরুতেই নাযিল হয়েছিল সুরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত। সময়টা ছিল ৬১০ সালের শবে কদরের রাত। এই থেকে শবে কদরের পূণ্যতা পেতে থাকে, আজ পর্যন্ত শবে কদর অত্যন্ত মর্যাদার সাথে উদযাপন হয়ে আসছে।
শবে কদর সম্পর্কে প্রিয় নবি মুহাম্মদ (স.) বলেন, "যে ব্যক্তি এ রাত ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তাঁর পূর্বেকৃত সব গুনাহ মাপ করে দেবেন।" (বুখারি)
হাদিস শরীফে আরও বর্ণিত আছে যে, শবে কদরের রাতে হযরত জিবরাঈল (আ.) একদল ফেরেশতা নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত মুমিন ঐই রাতে ইবাদত ও জিকিরে মশগুল থাকে, তাঁদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)
পূর্বের যত গুনাহ ও কুকর্ম রয়েছে, যদি শুদ্ধ বা সহিহ নিয়তে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই তাহলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন।
হযরত মা আয়েশা (রা.) প্রিয় রাসুল (স.) কে প্রশ্ন করেন, "হে প্রিয় রাসুল্লাহ (স.)! যদি আমি শবে কদর পাই তখন কী করব?" তখন প্রিয় রাসুল (স.) উত্তরে বলেন, "তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন।" (তিরমিযি)
পবিত্র এই রাতে আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরে অতিবাহিত করে পূর্ববর্তী সকল গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। এই রাতের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন, এতে সন্দেহ নাই। কারণ এই রাত অন্য সকল রাতের মতো নয়। আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রজনী বলেছেন।
সহিহ বুখারি শরীফে উল্লেখিত আছে যে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়।"
লাইলাতুল কদর পুরো মুসলিম জাতির জন্য এক বরকতময় সময়। যে সময়টাতে আল্লাহর ইবাদত করা, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ ওই ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দিবেন না।
মহিমান্বিত রজনীতে নিজের পরিশুদ্ধতা হওয়া, দেশ-জাতির কল্যাণে দোয়া করা প্রত্যেকের দায়িত্ব। কেননা এই রাতের ফজিলত এতই মহান যে, হাজার মাসের ইবাদত আর কদরের রাতের ইবাদত সমান বা তার চেয়েও বেশি উত্তম।
আমাদের জীবনের যত ভুল-ভ্রান্তি বা গুনাহ সমূহ রয়েছে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে শবে কদরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আমাদের মনে যত আরজি বা ইচ্ছা রয়েছে শবে কদরের রাতে আল্লাহর কাছে চাইবো, কেননা এটাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ। জীবনকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং নবী মুহাম্মদ (স.) এর জীবনাদর্শকে ধারণ করে চলতে হবে, তবে এর আগে আত্মাকে বা কলবকে পরিশুদ্ধ করে নিতে হবে। আর পরিশুদ্ধ হওয়ার মুখ্য সুযোগ শবে কদর। সবারই জীবনে শবে কদর পরিশুদ্ধতায় পরিপূর্ণ হোক। (আমিন)
লেখক : মুঃ মারুফ ইসলাম সাজ্জাদ,
ছাত্র,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০