কর্ম গুণেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। মনস্তাত্ত্বিক বৈচিত্র্য, রুচির বৈসাদৃশ্য, গন্তব্যের ভিন্নতা এসবেই সমাজ-রাষ্ট্র এবং ধর্মের উদ্ভব হয়েছে । এই চিন্তা বৈচিত্র্যতার রহস্যেই পৃথিবীর ভারসাম্য উপলব্ধ হয়।
মানুষকে কল্যাণের পথে পরিচালনার পাথেয় হিসেবেই ধর্মের সৃষ্টি। আর এই ধর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ তার গন্তব্যে ছুটে যায়।
আত্ম পূজা মানুষকে একান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রীক একটা গন্ডিতে আবদ্ধ করে দেয়, যা সামষ্টিক ভারসাম্যহীন করে তুলে । পরিবেশ ও পৈত্রিক বিশ্বাসের ফলে তৈরী হয় মতের ভিন্নতা।
ধর্ম পরমত সহনশীলতা ও শ্রদ্ধার শিক্ষা দেয়।
সামাজিক ভারসাম্য আনতে হলে এসব ভিন্নতাকে উপেক্ষা করা যায় না!
বরং বৈচিত্রতার মাঝেই জীবনের সৌন্দর্য।
ইসলাম মহান আল্লাহর মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। শ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ (সা) জীবনাচরণ থেকে আমরা দেখতে পাই, এখানে শ্রেণিবেদের বিলুপ্তি, নারীর মর্যাদা, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা, অমুসলিমদের নিরাপত্তা সহ প্রত্যেকের অধিকার সমুন্নত করা হয়েছে।
অর্থাৎ ইসলাম এমন একটি ধর্ম যাতে মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের সমাধান রয়েছে।
ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের জানমালের নিরাপত্তা, ধর্মীয় স্বাধীনতায় রাষ্ট্র সহায়তা করবে, সচেতন থাকবে। এমনকি যুদ্ধাবস্থায়ও উপসনালয়ে হামলা করা যাবে না বরং নিরাপত্তা প্রদান করবে।
অমুসলিম অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, দান করা , ব্যবসা করা, দাফনে সহায়তা সহ সামাজিক কাজে পরস্পরকে সহায়তা, ভাবের আদান-প্রদান করাকে ইসলামে বৈধতা-উৎসাহ দেয়া হয়েছে।
অন্যায় ভাবে কোন অমুসলিমকে হত্যা না করা, প্রথিমাকে গালি না দেয়া, তাদেরকে ধর্ম পালনে বাধ্য- বাড়াবাড়ি না করার জন্য কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল (সা)।
পিতামাতা অমুসলিম হলেও তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা আদেশ করা হয়েছে। অমুসলিম প্রতিবেশীর হক রক্ষা করতে হবে। তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া চাইবে।
খবরের সত্যতা যাচাই না করে কারো প্রতি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে আক্রমণ করা, সম্মান হানি বা হেয় করা একজন মুসলিমের কাজ হতে পারে না।
উত্তম আচরণের মাধ্যমেই ইসলামের বিস্তৃতি ঘটেছে।
তাদের কোন ভুল হলে বা অন্যায় করলে রাষ্ট্র সেটি সমাধান করবে এবং সুষ্ঠু ন্যায়বিচার করার জন্য দাবী উত্থাপন করা যেতে পারে। কিন্তু কোন অবস্থায়ই আইন হাতে তুলে নেয়া বা তাদের প্রতি আক্রমনাত্মক হওয়া যাবে না।
আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত : ৯)
(ওহে মুমিনগণ!) আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তারা ডাকে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না, ( সূরা আনয়াম -১০৮)
‘হে মুমিনগণ! যদি তোমাদের কাছে কোনো ফাসিক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তখন তোমরা তা যাচাই-বাছাই করো (তথ্যানুসন্ধান ও সঠিক সূত্র সন্ধান করো), না হলে তোমরা (এ অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে) অজ্ঞতাবশত কারও প্রতি আক্রমণ করে বসবে (যা যথাযথ নয়), ফলে তোমরা পরে তোমাদের স্বীয় কর্মের জন্য লজ্জিত হতে হবে’ (আল কুরআন, ৪৯: ৬)।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জেনে রেখ! কোনো মুসলমান যদি অমুসলিম নাগরিকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করে, কোনো অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করে, তার কোনো জিনিস বা সহায়-সম্পদ জোরপূর্বক কেড়ে নেয়; তবে কেয়ামতের দিন আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় আমি তাদের বিপক্ষে অমুসলিমদের পক্ষে অবস্থান করব।’ (আবু দাউদ)
আসমা বিনতে আবি বকর (রা.) বলেন,
রাসুলের যুগে আমার মা আমার কাছে এলেন, তখন তিনি মুশরিক ছিলেন। তখন আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার মা এসেছেন। তিনি ইসলাম ধর্মবিমুখ (অমুসলিম)। আমি কি তাঁর আত্মীয়তা রক্ষা করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ, তাঁর সঙ্গে আত্মীয়তা রক্ষা করো। (বুখারি)
ইসলাম অমুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সদাচরণ এবং মানবিক হওয়ার শিক্ষা দেয়। পরমতসহিষ্ণু হওয়া এবং ইসলাম পালনে জোরজবরদস্তি না করার জন্য বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আপনার রব ইচ্ছা করলে পৃথিবীতে যারা আছে সবাই ইমান আনত তবে কি আপনি মুমিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জোরজবরদস্তি করবেন। ’ (১০:৯০)
উদারতা হলো অমুসলিমদের সাথে আচরণে ভদ্রতা, শালীনতা এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার যথাযথ দেয়া।
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধে কাঁটছাট বা শিথিলতা দেখানো উদারতা ও সম্প্রীতি নয়।
ইসলামের মূল লক্ষ্যই হলো শান্তি, সম্প্রীতি। ধর্ম পালনে স্বাধীনতা, নিরাপত্তা প্রদান, অধীকার খর্ব না করা এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও উদারতার শিক্ষা দেয়। কোন অবস্থায়ই বিধর্মী পুরোহিত-উপসনালয়ে হামলা বা কটাক্ষ করা যাবে না বরং কোন সমস্যার সৃষ্টি হলে নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার এর মাধ্যমে তার সমাধান করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে।
তানবীরুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।