মহানবী(সাঃ) উপর দরূদ পাঠের ফজিলত
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠের ফজিলতঃ-
কবির ভাষায়-
রবিউল আউয়াল এলে তোমার গুণ গায়,
রবিউল আউয়াল গেলে তোমায় ভুলে যায়,,
যদিও তা এমন হবার নয়-এ মুহুর্তে মহানবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শানে, দুরুদ শরিফের ফজিলত সম্পর্কে কিছু লেখার চেষ্টা করব-ইনশাআল্লাহ!
মহান আল্লাহর বানী-
بسم الله الرحمن الرحيم, ان الله وملائكته يصلون علىالنبى, ياايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما,,
অর্থ-- নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত অর্থাৎ-রহমত (দুরুদ)প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে সালাত অর্থাৎ-রহমতের জন্য দোয়া কর(দুরুদ পড়) এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। (সূরা আল আহযাব:৫৬)
আয়াতের আসল উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদেরকে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর প্রতি দুরুদ ও সালাম প্রেরণ করার আদেশ দেয়া। প্রথমে আল্লাহ স্বয়ং নিজের ও ফেরেশতাগণের দুরুদ(রহমত) পাঠানোর কথা উল্লেখ করেছেন, অতঃপর সাধারণ মুমিনগণকে দুরুদ প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। (মা'আরেফুল কোরআন)
এতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মাহাত্ম্য ও মর্যাদা তুলে ধরে মুসলমানদেরকে যে কাজের আদেশ দেয়া হয়েছে সে কাজ আল্লাহ সয়ং নিজে ও তার ফেরেশতাগণও করেন, অর্থাৎ- আল্লাহ ও তদীয় ফেরেশতাদের পক্ষ হতে অনবরত সালাত ও সালাম বর্ষিত হইতে থাকে।
(ইমাম সাখাভী-কওলুল বাদীয়ে) সুতরাং একাজে যত্নবান হওয়া আমাদের উচিত।
>"আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা মোহাম্মদ"
"ওয়াআ'লা আলি মোহাম্মদ"
>"সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম"
এ আয়াতে 'সালাত' এর সঙ্গত অর্থ -রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সম্মান, প্রসংশা ও শুভেচ্ছা। সুতরাং এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হলে সারমর্ম হবে 'রহমত' তথা অনুগ্রহ, ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে হলে সারমর্ম হবে দোয়া ও ইস্তেগফার, এবং সাধারণ মুমিনদের পক্ষ থেকে হলে এর অর্থ দোয়া, প্রসংশা ও সম্মানের সমষ্টি হবে। (মা'আরেফুল কোরআন) সুতরাং, "রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মহব্বত অন্তরে লালন করে, সম্মান ও প্রসংশা মূলক দোয়া করাই হলো "দুরুদ"।
আল্লাহ পাকের দুরুদ পড়ার অর্থ হলো-রাসুলুল্লাহ সাঃকে 'মাকামে মাহমুদ' অর্থাৎ- সুপারিশের প্রসংশিত অবস্থানে পৌছানো। আর ফেরেশতাদের দুরুদ পড়ার অর্থ হলো-রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উচ্চ মর্যাদার দোয়া করা এবং উম্মতের জন্য ক্ষমা চাওয়া। এবং মুমিনদের দুরুদ পড়ার অর্থ হলো-রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অনুসরণ-অনুকরণ করা, মহব্বত রাখা এবং গুণাবলীসমুহের প্রসংশা করা।
(আল্লামা আলুসী-রুহুল বায়ান) (কিছু পার্থক্যসহ-ইমাম বুখারী)
ইমাম যায়নুল আবেদীন, আলী ইবনে হোসেন ইবনে আলী রাঃ বলেন- "রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর বেশি বেশি করিয়া দুরুদ পড়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিচয়। অর্থাৎ- সে সুন্নী বলিয়া পরিচিত"।
আল্লামা যারকানী বলেন- দুরুদ শরীফের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর হুকুম পালন করিয়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা, এবং প্রিয় নবী সাঃ এর হক্বের সামান্যতম অংশ আদায় করা। (শরহে মাওয়াহেব)
হাফেজ ইজ্জুদ্দীন(ইবনে আসীর) রহঃ বলেন- আল্লাহ পাক আমাদিগকে আমাদের প্রতি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দান ও এহসানের বদলা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। হেদায়েতের দান ও এহসানের বদলা দিতে আমরা সম্পূর্ণ অক্ষম, আর আমরা এই অক্ষমতার দরুন আল্লাহর দরবারে দোয়া করি- "হে আল্লাহ! আমার প্রিয় নবী সাঃ এর শান-মান মোতাবেক আপনিই আমাদের পক্ষ থেকে বদলা দিয়া দিন"। (এটাই দুরুদ শরীফ) (হাফেজ ইজ্জুদ্দীন,ইবনে আসীর)
সুতরাং, আমাদের বেশি বেশি দুরুদ পড়া ও হুজুর সাঃ এর তাবেদারী করা একান্ত কর্তব্য)
আমরা সবাই জানি যে, "রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর একবার দুরুদ পড়লে দশটি রহমত বা নেকী হয়"। (মুসলিম,আবুদাউদ,ইবনে-হিব্বান,তারগীব)
আরো জানব-"রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর একবার দুরুদ পড়লে দশটি রহমত বা নেকী হয়, দশটি গোনাহ মাফ হয়, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি হয়"।
(আহমদ,নাসাঈ,ইবনে-হিব্বান,তারগীব)
আরো জানব- "রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর একবার দুরুদ পড়লে দশটি গোলাম আজাদের সমতুল্য সওয়াব হয়। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)
আমরা আরো জানব- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাঃ হতে বর্ণিত- "যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উপর একবার দুরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ পাক ও তার ফেরেশতাগণ সে ব্যক্তির উপর (৭০)সত্তরবার রহমত পাঠাতে থাকেন"। (আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব)
আল্লাহ কবুল করুন,আমিন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০