জার্মানিতে মসজিদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না৷ তবে সংখ্যাটি ২,৩৫০ থেকে ২,৭৫০ এর মধ্যে৷ জার্মান ইসলাম কনফারেন্সের গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালে জার্মানির ৫৫ লাখ মুসলিমের ২৪ শতাংশ সপ্তাহে অন্তত একদিন মসজিদে গেছেন৷
ইস্তাম্বুলের মুফতির অনুরোধে ১৯১৫ সালে ব্রান্ডেনবুর্গে ভ্যুনশডর্ফ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল৷ একে জার্মানি ও মধ্য ইউরোপের প্রথম ইসলামিক ভবন মনে করা হয়৷ মুসলিম যুদ্ধবন্দিদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল৷ মুসলিমদের ঔপনিবেশিক শাসক ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে মুসলিম বন্দিদের অনুভূতি উসকে দিয়েছিল সেই সময়কার জার্মান সাম্রাজ্য৷ পরে তাদের শপথ পড়িয়ে ‘পবিত্র যুদ্ধে’ পাঠানো হয়েছিল৷ ১৯৩০ সালে মসজিদটি ভেঙে ফেলা হয়৷
জার্মানির প্রথম মসজিদটি ভেঙে ফেলার কারণ ১৯২৮ সালে বার্লিনের ভিলম্যার্সডর্ফে নির্মিত হওয়া এই মসজিদটি (ছবি)৷ পাকিস্তানের লাহোরের আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের জন্য মসজিদটির নকশা করেছিলেন জার্মান স্থপতি কার্ল আউগুস্ট হেয়ারমান৷ এটি এখনও টিকে আছে৷ সে হিসেবে এটি জার্মানিতে টিকে থাকা মসজিদগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো৷
২০১৭ সালে বার্লিনে ইবনে রুশদ-গ্যোয়েটে মসজিদ নির্মিত হয়৷ সেখানে নারী-পুরুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন৷ নারীরা সেখানে খুতবাও দিতে পারেন৷ ইস্তাম্বুলে জন্মগ্রহণকারী তুর্কি-কুর্দি বংশোদ্ভূত জার্মান আইনজীবী, লেখক ও নারী অধিকারকর্মী সেইরান আটেশ এই মসজিদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ এমন মসজিদ নির্মাণের কারণে তিনি কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন৷ তাই এখন সবসময় তাকে পুলিশি নিরাপত্তায় থাকতে হয়৷
জার্মানির মসজিদ পরিচালনায় থাকে বিভিন্ন মসজিদ সংস্থা৷ এর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ও সবচেয়ে বড় সংস্থা হচ্ছে ডিটিব৷ এটি তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সমর্থনপুষ্ট একটি সংস্থা৷ এর ইমামরা মূলত তুরস্কে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন৷ সমালোচকরা অনেকদিন ধরেই ডিটিবের আওতাধীন মসজিদগুলোর সমাবেশে তুরস্কের প্রভাব নিয়ে সতর্ক করে আসছেন৷ ছবিতে ডিটিব পরিচালিত জার্মানির অন্যতম বড় কোলন কেন্দ্রীয় মসজিদ দেখা যাচ্ছে৷
জার্মানির বেশিরভাগ মসজিদই বাইরে থেকে চেনা যায় না বা বোঝা যায় না৷ কারণ সেগুলো কোনো ভবনের পেছনে অবস্থিত৷ একটি সরু গলি দিয়ে সেখানে ঢুকতে হয়৷ আর বেশিরভাগ মসজিদেই মিনার থাকে না৷
জার্মানির কমবেশি প্রায় আড়াই হাজার মসজিদের মধ্যে মাত্র ৩০টিতে মসজিদ থেকে নিয়মিত আজান দেয়া হয়৷ বাকিগুলোতে আজান দেয়ার বিষয়টি স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হয়নি৷ আজানবিরোধীদের যুক্তি, এতে শব্দদূষণ হয় এবং এর মাধ্যমে ধর্মীয় বিশ্বাস প্রকাশ করা হয়৷ তাদের যুক্তি, আজানের একটা ধর্মতাত্ত্বিক অর্থ আছে, যেটা গির্জার ঘণ্টাধ্বনির মধ্যে নেই৷