মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাত পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক মোড় নিয়েছে। দুই পক্ষই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে একে অপরের উপর। ইসরাইলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর মাধ্যমে ১৩ জুন শুরু হওয়া এই সামরিক অভিযানে ইরানের সামরিক ও বেসামরিক খাত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরানও। প্রায় প্রতিদিনই চলছে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত বড় পরিসরে গড়ালে তা রূপ নিতে পারে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের—এমনকি অনেকে এটিকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইঙ্গিত হিসেবেও দেখছেন।
তবে ইসলামি বিশ্বের একটি অংশ এমন পরিস্থিতিকে কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করছেন। কারণ, বহু শতাব্দী আগেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির বিস্ময়কর মিল খুঁজে পাচ্ছেন অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ।
আরও পড়ুনঃ ইহুদিরা আল আকসার জায়গায় থার্ড টেম্পল নির্মাণ করতে চায় কেন?
একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খোরাসান থেকে একদল সৈন্য কালো পতাকা নিয়ে আগমন করবে। কেউ তাদের থামাতে পারবে না, যতক্ষণ না তারা বায়তুল মুকাদ্দাসে সে পতাকা উড়ায়।’
এই হাদিসটি নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে আলোচনা চলেছে ইসলামি জগতে। ইতিহাসবিদদের মতে, খোরাসান বলতে বোঝানো হয়েছে একটি বিস্তৃত অঞ্চলকে—যার মধ্যে বর্তমান ইরান, আফগানিস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের কিছু অংশ রয়েছে। এর অধিকাংশ এলাকাই আজকের ইরানের ভেতরেই পড়েছে।
হাদিসটির ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই কালো পতাকাধারী বাহিনী আল আকসা মসজিদ তথা বায়তুল মুকাদ্দাসে পতাকা উত্তোলন করবে। অর্থাৎ, তার আগ পর্যন্ত পবিত্র মসজিদটির নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের হাতে থাকবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৮০ সালে ইসরায়েল একটি আইন পাশ করে জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী ঘোষণা করে। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে, বাস্তবে এখনো জেরুজালেম এবং আল আকসা মসজিদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইসরায়েলের দখলে।
অপর একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমরা খোরাসান থেকে কালো পতাকা দেখতে পাবে, তখন তাদের কাছে চলে যেও। কারণ, তাদের মধ্যেই আছেন আল্লাহর খলিফা—ইমাম মাহাদী।’
এই হাদিসদ্বয়ের সমন্বয়ে বহু ইসলামি আলেম বিশ্বাস করেন, খোরাসান থেকে আগত সেই কালো পতাকার বাহিনীর নেতৃত্বে থাকবেন ইমাম মাহাদী, এবং তারা বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয় করবেন। এটি কেয়ামতের পূর্বের অন্যতম বড় আলামত বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরেকটি বিষয় উঠে আসে—তা হলো আল-মালহামা, যাকে অনেক ইসলামি বর্ণনায় ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস অনুযায়ী, এই যুদ্ধের মাধ্যমে দুনিয়ায় পুনরায় একটি ইসলামি খিলাফতের প্রতিষ্ঠা হবে—ইমাম মাহাদীর নেতৃত্বে।
ইরান ও ইসরায়েলের বর্তমান সংঘাতকে ঘিরে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এটাই কি সেই পূর্বাভাসিত যুদ্ধের সূচনা? বিশেষ করে যখন দেখা যাচ্ছে খোরাসানের মতো অঞ্চল থেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছে কিছু সামরিক শক্তি, তখনই এই আলোচনা আরও জোরালো হচ্ছে।