রফিকুল ইসলাম জসিম
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট>
মনে আছে,কাশ্মীরের মেয়ে নাফিসা উমর নামে সেই পর্দানশীন মেয়েটির কথা। নিশ্চয় সৃষ্টিকর্তা তার দোয়া কাবুল করেছে। তাই পৃথিবীর দেশে দেশে আজ করোনাভাইরাসে মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ-দপ্তর প্রায় সব বন্ধ, লকডাউন।
মনে আছে, সিরিয়ার সেই তিন বছরের ছোট শিশুটির কথা, বোমায় ক্ষতবিক্ষত শরীল নিয়ে মরে যাওয়ার সময় আগে বলেছিল- আমি আল্লাহকে সব বলে দিবো। সেও হয়তো আল্লাহ কে সব বলে দিয়েছে ।
কাশ্মিরে দীর্ঘ সাতমাস লকডাউনের সময় নাফিসা উমর বলেছিল, যদি কোনো জায়গায় লাগাতার সাত মাস ধরে কারফিউ চলে, বাড়ি থেকে বের হওয়া দূরের কথা, বাইরে উঁকি দেওয়াও কঠিন হয়, এলাকাজুড়ে ৮-৯ লক্ষ সেনা মোতায়েন থাকে, ইন্টারনেট বন্ধ থাকে, মোবাইল বন্ধ থাকে, ল্যান্ডলাইন ফোনও বন্ধ থাকে, বাড়ি বাড়ি থেকে শিশু-যুবক-বৃদ্ধসহ হাজারো বেকসুরদের গ্রে’প্তা’র হতেই থাকে, ছোট-বড় সমস্ত নেতাদের জে’লব’ন্দি করা হয়ে থাকে, স্কুল-কলেজ-দপ্তর সব বন্ধ থাকে, তাহলে কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে মানুষ?
কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে মানুষ?
তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কী হবে? অসুস্থদের অবস্থা কী হবে? এসব নাফিসা উমরের কথা ভাবার মতো তখন কেউ কি ছিল? তখন হয়তো সৃষ্টিকর্তা
নিরবে সব শুনছেন।
নাফিসা সৃষ্টিকর্তা নিকট প্রাথনা করে, ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে যা বলেছিল- ইয়া আল্লাহ! যা কিছু আমাদের ওপর হচ্ছে তা যেন অন্য কারোর উপর না হয়, শুধু তুমি এমন একটা কিছু করে দাও যাতে গোটা পৃথিবী কিছুদিনের জন্য নিজেদের ঘরে ব’ন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হয়, সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, থেমে যায়। তাহলে হয়তো দুনিয়া এটা অনুভব করতে পারবে যে, আমরা বেঁচে আছি কেমন করে !
আজ পৃথিবীর মানুষ করোনাভাইরাসে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরেছে, ভু’গতে ভু’গতে মান’সিক অসুস্থতার শিকার হয়ে পড়ে, বাচ্চা সহ সকল মানুষ আত’ঙ্কি’ত হচ্ছে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে দিকে যাচ্ছে। আলোর কোনো রেখা দেখা যায় না, অবস্থা ভালো করার মতো কোন ঔষধ কাজ করছে না। গোটা দুনিয়া মানুষ চুপচাপ দেখছে !
হয়তো তিনি বলে দিয়েছে, আমাদের নির্যাতনের কথা, বিনা কারণে হাজার হাজার হত্যার কথা। আমরা একে অপরের হত্যার জন্য অস্ত্র বানিয়েছি লক্ষ কোটি, মানুষে মানুষে বিভেদ বাড়ানোর জন্য তৈরি করেছি নানা গোপন অস্ত্র।
সেই সিরিয়ার ছোট শিশুটিও হয়তো সৃষ্টিকর্তাকে সব বলেছে, হয়তো সে বলেছে সেই কাশ্মীরের সেই মেয়ে নাফিসা উমরের কান্নার কথা,বলেছে সেই পাখিটির কথা, যে আর আকাশের কথা যে একদিন নীল ছিল, বলেছে সেই বাতাসের কথা, ছিল যে একদিন নির্মল। বলেছে সেই পৃথিবীর কথা, যে একদিন সবার ছিল। এই সবার পৃথিবী আমরা ভাগ করেছি নিজেদের ইচ্ছামতো। ধর্মের নামে, দেশের নামে, ভাষার নামে মানুষ দূরে ছড়িয়েছি। চামড়া রং দিয়ে গণতন্ত্র নাম দিয়ে, কেটে টুকরো করছি সাগরপাড়ে বসে থাকা। এলানকোর্ট দিয়ে কাঁটাতারে ঝুলতে থাকা ফেলানি। সব বলে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা কে।
সৃষ্টিকর্তা তার পৃথিবীকে ফেরত চেয়েছে এবার- তিনি হয়তো সব শুনেছেন তাদের সব অভিযোগ, তিনি হয়তো শুনেছেন,সিরিয়ার সেই তিন বছরের ছোট শিশুটির কথা। কাশ্মিরের সেই পর্দানশীন মেয়েটির কথা। আজ সেই নাফিসার কাশ্মিরের মতো পুরো পৃথিবীই আজ ঘরব’ন্দী। মানুষ প্রতিনিয়ত মৃ’ত্যুর সঙ্গে বসবাস করছে। একদিন হয়তো এই পৃথিবীর সব ঠিক হবে। সৃষ্টিকর্তা দয়ামায়ার জন্য। তবে কিন্তুু আমরা কি সত্যি মানুষ হবো। আগের মতো শান্তির পৃথিবী কবে পাবো।।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০