ঢাকামঙ্গলবার , ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  1. সর্বশেষ
  2. আন্তর্জাতিক

বিবিসির প্রতিবেদন
গ্যাং সহিংসতায় বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্প

প্রতিবেদক
তানজীল ইসলাম শুভ
২৫ আগস্ট ২০২৩, ২:০২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পে বাস করেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। তবে গ্যাং সহিংসতা, মানব পাচার এবং মাদক চোরাচালানের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে সেখানকার পরিস্থিতি। এই গ্যাং সহিংসতা কেড়ে নিয়েছে অনেকের চোখের ঘুম।

তাদের একজন মদিনা খাতুন। গুলির শব্দে ভয়ে প্রায় প্রতিরাতই জেগে থাকেন তিনি। তার আশঙ্কা— তার মতো অন্য নারীরাও হয়ত এই গ্যাংদের কারণে— নিজেদের স্বামীকে হারিয়ে ছোট সন্তানদের নিয়ে বিধবা হয়ে যাবেন।

মদিনা খাতুনের স্বামী, বশির উল্লাহ, গত জুনে গ্যাং সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের গোলাগুলির মাঝামাঝি পড়ে প্রাণ হারান। ওই রাতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ক্যাম্পে টহল দিচ্ছিলেন তিনি। যেই ক্যাম্পকে গত ছয় বছর ধরে নিজেদের বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা।

গ্যাংদের উৎপাতের সঙ্গে মানব পাচার ও মাদক চোরাচালান সেখানকার মানুষদের জীবন অতিষ্ট করে তুলেছে। এই রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গণহত্যা থেকে বাঁচতে রাখাইন রাজ্যে নিজেদের বাড়ি-ঘর ফেলে বাংলাদেশে পালিয়ে চলে আসেন। অথচ এখন নতুন করে সহিংসতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের। এখন নিজ গোষ্ঠীর মানুষদের হাতেই প্রাণ হারাচ্ছেন তারা।

এ বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ক্যাপে গ্যাং সহিংসতায় ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। অথচ পুরো ২০২২ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৪০।

এসব সহিংসতা তাদের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে পারবে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এরমধ্যে আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গাকে এখন বোঝা হিসেবে মনে করে। এছাড়া ক্যাম্পের ভঙ্গুর পরিস্থিতি— অগ্নিকাণ্ড ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে তাদের আরও অরক্ষিত করে তুলেছে।

মানুষের এসব হতাশা ও অসহায়ত্ব শোষিত হচ্ছে আরাকান রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি (আরসা), দ্য রোহিঙ্গা সোলিডারিটি অর্গানাইজেনশন (আরএসও) এবং মুনা গ্যাং নামের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের দ্বারা।

মদিনা খাতুন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘জীবন বাঁচাতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে আমরা পালিয়ে আসি। আমি কখনো ভাবিনি আমার স্বামীকে শরণার্থী ক্যাম্পে আরেক রোহিঙ্গা হত্যা করবে। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। আমরা এই ক্যাম্প ছাড়তে চাই। আমি জানি না আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে।’

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী সহায়তা ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, মাদক চোরাকারবারীরা রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে মাদক আনছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বিবিসিকে বলেছেন, ‘ক্যাম্পে কয়েক লাখ মানুষ আছে যাদের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়টি অপরাধীদের জায়গা তৈরি করেছে। এসব অপরাধী খুবই উগ্র এবং তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।’

আরসার বিরুদ্ধে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অপহরণের অভিযোগও রয়েছে। নুর নামে এক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, আরসার সন্ত্রাসীরা তাকে টেকনাফের একটি পাহাড়ি অঞ্চলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর তার বাবা-মায়ের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু তার পরিবার মাত্র ২ লাখ টাকার মতো যোগাড় করতে সমর্থ হয়। তিনি জানিয়েছেন, মুক্তিপণের জন্য তাকে দিনরাত দাঁড় করিয়ে রাখা হতো আর অব্যাহতভাবে চাবুক দিয়ে পেটানো হতো। চারদিন পর তিনি মুক্তি পান। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশে আছেন তিনি।

বাংলাদেশ জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা যে খারাপ হচ্ছে এটি বাস্তব। আর এটির একমাত্র সমাধান হলো তাদের নিজ দেশে পাঠানো। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্সন নিয়ে চুক্তি করলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে কয়েকদিন আগে চীনের মধ্যস্থতায় পাইলট প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ১ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিতে নিতে সম্মত হয়েছে দেশটি।

কিন্তু রোহিঙ্গারা আবার এ চুক্তিতে খুশি নয়। তারা বলছে, যতক্ষণ না তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হচ্ছে ততক্ষণ তারা মিয়ানমারে ফিরতে চায় না।

ক্যাম্পে কোনো ভবিষ্যত না থাকায় অনেক রোহিঙ্গা এখন ঝুঁকিপূর্ণ সাগরপথ পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর এই যাত্রার জন্য মানবপাচারকারীদের হাতে তুলে দিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। কিন্তু অনেক সময় এই সমুদ্রেই নৌকাডুবে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে তাদের।

রোহিঙ্গারা যে সময় সমস্যায় পড়েছিল তখন তাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ওই সময় তাদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল অন্যান্য দেশগুলোও। কিন্তু বর্তমানে এই সহায়তা কমে গেছে। এছাড়া সবার নজর চলে গেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দিকে। ফলে রোহিঙ্গা সমস্যাটি বাংলাদেশের জন্য একটি উভয় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নিজেদের যে সামর্থ আছে তার চেয়েও বেশি এখন রোহিঙ্গাদের জন্য খরচ করতে হচ্ছে।

সূত্র: বিবিসি

436 Views

আরও পড়ুন

টেকনাফে অপহৃত উদ্ধার,অস্ত্র-গুলিসহ অপহরণকারী চক্রের এক সদস্য আটক

নার্সিং শিক্ষার্থীদের ফ্যাসিস্ট বলা মূর্খতা 

নব প্রতিষ্ঠিত কাপাসিয়া মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওরিয়েন্টেশন

কানাডার জীবন: নেতিবাচক দিক

রাঙ্গুনিয়ায় জামায়াতে ইসলামীর গণসংযোগ কর্মসূচি সম্পন্ন

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে সিএনজি অটোরিকসা ও পিক-আপ’র মুখোমুখী সংঘর্ষে নারীসহ নিহত-৬

ইতিহাস প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র
এইচএসসি পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি ২০২৫

বোয়ালখালীতে বিশেষ অভিযানের অস্ত্রসজ্জিত আটক ৪ জন

গাইবান্ধায় দুর্বৃত্তের চুরিকাঘাতে অটোবাইক চালক নিহত

কমলগঞ্জে ভানুগাছ বাজারে জামায়াতে ইসলামীর গণসংযোগ

রাঙ্গুনিয়ায় গনমানুষের হৃদয়ে নতুন আস্থা জামায়াতে ইসলামী

বাপ-দাদার জমিতে ইপিজেড না করার দাবিতে আবারও উত্তাল সাঁওতালরা