ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের ফলে গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাম্প্রতিক গবেষণা। নিখোঁজদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু এবং গাজার সরকারি হিসাবের থেকে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।
ইসরায়েলি অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব-এর নেতৃত্বে তৈরি এই গবেষণা প্রতিবেদনটি হার্ভার্ড ডেটাভার্সে চলতি মাসেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি তুলে ধরেছে সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব এবং মিডল ইস্ট মনিটর।
গার্ব তার গবেষণায় তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও স্থানিক ম্যাপিং ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলা ও মানবিক সহায়তা বাধাগ্রস্ত করার ফলে গাজা অঞ্চলের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
সরকারি তথ্যের চেয়েও অনেক বেশি মৃত্যু
বর্তমানে গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৬১ হাজার মানুষ। তবে গার্বের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রকৃত সংখ্যা এই হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।
গবেষণায় জানানো হয়, যুদ্ধ শুরুর আগে গাজার জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ২২ লাখ ২৭ হাজার। বর্তমানে গাজা সিটি, মাওয়াসি ও মধ্য গাজা- এই তিনটি অঞ্চলে মোট ১৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষের উপস্থিতি শনাক্ত করা গেছে। অর্থাৎ কমপক্ষে ৩ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ নিখোঁজ, যাদের একটি বড় অংশ বাস্তুচ্যুত অথবা নিহত হয়ে থাকতে পারেন।
প্রতিবেদনটিতে মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ভূমিকা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। গার্ব দাবি করেন, এই সহায়তা কাঠামো মূলত ইসরায়েলের সামরিক কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গড়া হয়েছে, মানবিক প্রয়োজনের ভিত্তিতে নয়।
স্থানিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, গাজার অধিকাংশ মানুষ এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতেই পারেননি। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত ‘নেতজারিম করিডোর’, দুর্বল অবকাঠামো, যানবাহনের অভাব এবং নিরাপদ সড়কের সংকট।
গার্ব লিখেছেন, এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোর কাঠামো এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে, সেগুলো নির্বিচারে সংঘর্ষ ও দুর্ঘটনা ঘটানোর একটি ইঞ্জিনের মতো।
তিনি আরও বলেন, যেখানে একেকটি কেন্দ্রে পাঁচজনের জন্য সাড়ে তিন দিনের খাবার বরাদ্দ রাখা হয়, সেখানে গাজাবাসী টিকে থাকার জন্য বারবার বিপজ্জনকভাবে সামরিক নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পাঁচটি সহায়তা কেন্দ্রের মধ্যে চারটি রয়েছে মোরাগ করিডোরের দক্ষিণে, যেগুলোকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘কনসেন্ট্রেশন এলাকা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। গার্ব এই পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয়, সহায়তা নিতে আসা বেসামরিক নাগরিকদের মর্যাদা বা নিরাপত্তা রক্ষায়ও কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি, যা খুবই উদ্বেগজনক।