কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে শামসুল হুদা লিটন:
বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রামের পর তৃতীয় বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি গাজীপুর। গতকাল ২৯ মে বৃহস্পতিবার গাজীপুর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ব্যাপক আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্যানেল অভূতপূর্ব বিজয় ও চমক দেখিয়েছে।
গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির ২০২৫—২৬ সেশনের নির্বাচনে ১৬টি পদের মধ্যে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ- সাধারণ সম্পাদক ও দুইজন সদস্য সহ পাঁচ পদে জামায়াত সমর্থিত সবুজ প্যানেল বিজয়ী হয়েছে। অপরদিকে সহ-সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষ সহ ১১টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত দুটি প্যানেলই অংশগ্রহণ করে।
নির্বাচনে মোট ১ হাজার ৮৯০ জন ভোটারের মধ্যে ১ হাজার ৪২৫ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন। পরে রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট মোঃ সুলতান উদ্দিন ফলাফল ঘোষণা করেন।
বিভিন্ন মত—পথের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্যানেল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। ৫ আগস্টের পর কোনো নির্বাচনে জামায়াতের এই বিজয়কে গাজীপুরের রাজনীতিতে একটি নতুন মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সভাপতি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. মোঃ সহিদুজ্জামানকে (৫৬৪ ভোট) হারিয়ে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হক ভূঁইয়া (৭৬৯ ভোট) নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান কামাল (৬৯৩ ভোট) বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল ইসলাম মোল্লাকে (৬৪৮ ভোট) হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে সহসাধারণ সম্পাদক পদে মুহাম্মদ ফখরুদ্দীন আকবরী ফখরু এবং সদস্য পদে আব্দুর রহিম ও মাহদী হাসান নির্বাচিত হয়েছেন।
অন্যদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে সহসভাপতি পদে আব্দুল হামিদ, কোষাধ্যক্ষ মোঃ আবুল কালাম আজাদ, লাইব্রেরি সম্পাদক মোঃ কামরুল হাসান রাসেল, অডিটর রবিউল আলম, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক মোঃ সালাহ্ উদ্দিন খান অপু, মহিলা সম্পাদিকা আজিজা আক্তার এবং সদস্য পদে মোঃ আসিফ রায়হান কাউসার, আশিকুর রহমান, কামরুল হাসান, ফাতেমা খান, মোঃ শ্যামল সরকার নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। নেটিজেনদের মতে, গাজীপুর জেলার আইনজীবী সমাজে এই ফলাফল একদিকে যেমন বিকল্প নেতৃত্বের উত্থানের ইঙ্গিত, অন্যদিকে তা রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মেরুকরণের বার্তা দিচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, এ বিজয় শুধু সংখ্যার নয়, এটা একটি মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের দিকচিহ্ন। অনেকেই মনে করেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। এ নির্বাচনের ফলাফলে জামায়াতে ইসলামীর লোকজন উল্লসিত হলেও বিএনপির নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিএনপির আভ্যন্তরীন কোন্দল ও অনৈক্যকের কারণে এমন ফলাফল হয়েছে বলে মনে করছেন।