--------------------------
বাংলাদেশে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন হয়েছে। নিবন্ধন না করলেও বিয়ে অবৈধ হয়না। তবে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন হলে বর-কনের ও সন্তানদের নানারকম অধিকার সুরক্ষা ও নিশ্চয়তা পায়। বিয়ে প্রমানসহ নানাবিধ বৈবাহিক প্রতারণা রোধে প্রত্যেক বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন হওয়া প্রয়োজন। নিম্নে এই প্রসঙ্গে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহ কি?
উত্তরঃ হিন্দু বিবাহ হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী অবিচ্ছেদ্য বন্ধন, যার মাধ্যমে একজন পুরুষ একজন নারী আজীবন স্বামী-স্ত্রী রূপে বসবাসের স্বীকৃতি পায়। হিন্দু ধর্ম মতে অগ্নিমন্ত্রের মাধ্যমে স্ত্রী শারীরিক, ধর্মীয় এবং আর্থিক ভাবে মিশে গেছে স্বামীর সাথে। তাই সে স্বামীর অর্ধাঙ্গীনি। আমাদের দেশে এখনও হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের প্রচলন নেই। তবে প্রয়োজনে হলফনামা বা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে হিন্দু বিয়ের ডিক্লেয়ার বা ঘোষনা করা যায়।
প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের কোনো বিধান আছে কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ আছে। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন,২০১২ (২০১২ এর ৪০ নং আইন) এর বিধান মতে হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন করা যায়। প্রত্যেক সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অনধিক ০৩ (তিন) জন এবং সিটি কর্পোরেশন বহির্ভূত প্রত্যেক এলাকার ক্ষেত্রে একটি উপজেলায় ১জন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক কর্তৃক আদায়যোগ্য ফি কত?
উত্তরঃ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন,২০১২ এর ১৭ ধারানুযায়ী প্রতিটি হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন ফি হইবে ১০০০/-(এক হাজার) টাকা এবং হিন্দু বিবাহ সংক্রান্ত নকল প্রাপ্তি বা পরিদর্শন ফি ১০০/-(একশত) টাকা। নিবন্ধন ফি প্রদানের দায়িত্ব বর পক্ষের উপর বর্তাবে।
প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন কিভাবে করতে হয়?
উত্তরঃ বিবাহ কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর বর ও কনের যৌথ স্বাক্ষরে বা টিপসহিতে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য লিখিতভাবে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে বর ও কনের পাসপোর্ট সাইজের ছবি বা স্বামী-স্ত্রীর যৌথ ছবি সংযুক্ত করতে হবে। আবেদন প্রাপ্তির পর হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে সন্তুষ্ট হয়ে আইন ও বিধি মোতাবেক বিবাহ নিবন্ধন করবেন এবং নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করেন।
প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের পূর্বে নিবন্ধক কি কি যাচাই করবেন?
উত্তরঃ নিবন্ধক বর ও কনের জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ বা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট(জে,এস,সি)বা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এস,এস,সি) বা সমমানের পরীক্ষার সনদপত্র পরীক্ষাপূর্বক বর ও কনের বিবাহের জন্য আইনগত বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোনো বিবাহ নিবন্ধন করবেন না। উল্লেখিত কাগজপত্র না থাকলে বর ও কনের বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাতা, পিতা বা আইনগত অভিবভাবক কর্তৃক প্রদত্ত বয়স সংক্রান্ত হলফনামা দ্বারা বর ও কনের বয়স নির্ধারণ পূর্বক বিবাহ নিবন্ধন করতে হবে। বিয়ে নিবন্ধনের সময় বর, কনে বা অন্য কোনো ব্যক্তি মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে এবং উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো বিবাহ নিবন্ধন করা হলে তজ্জন্য কোনো হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক দায়ী হবেন না।
প্রশ্নঃ বিবাহ নিবন্ধন প্রত্যাখ্যানের প্রতিকার কি?
উত্তরঃ হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করার কোনো আবেদন হিন্দু বিবাহ নিবন্ধক প্রত্যাখ্যান করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উক্ত প্রত্যাখ্যানের ৩০(ত্রিশ) দিনের মধ্যে জেলা রেজিষ্ট্রারের নিকট আপীল পেশ করতে পারবেন। এবং এ সম্পর্কে জেলা রেজিষ্ট্রারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত মর্মে গন্য হবে।
প্রশ্নঃ হিন্দু বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন কি বাধ্যতামূলক? এবং কেন রেজিস্ট্রি প্রয়োজন ।
উত্তরঃ না-ঐচ্ছিক। তবে বিবাহ রেজিষ্ট্রির সুফল ইতিমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এতে নানা ধরনের বৈবাহিক প্রতারণা রোধ করা সম্ভব।দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, সন্তানের বৈধতা, অভিভাবকত্ব, স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, বিদেশ গমন, নাগরিকত্ব ইত্যাদির জন্য বিবাহ রেজিষ্ট্রেশন খুবই জরুরী। মুসলিম বিবাহ তালাক রেজিস্ট্রেশন আইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রশ্নঃ হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ আছে কি?
উত্তরঃ বাংলাদেশে হিন্দু আইনের দায়াভাগ বিধান বলবত থাকায় বিবাহ বিচ্ছেদ স্বীকৃত নয়। কারণ হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, বিবাহ একটি আমৃত্যু বন্ধন। তাই হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেই। এফিডেফিট বা হলফমানার মাধ্যমে বিচ্ছেদের নোটিশ বে-আইনী। তবে সংগত কারণে জুড়িশিয়াল সেপারেশন চাওয়া যায়। এই জন্য পারিবারিক আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে। মহামান্য উচ্চ আদালতে রীটও করা যায়।
লেখকঃ আইনজীবী, কলামিস্ট, মানবাধিকার ও সুশাসন কর্মী ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০