লাখ টাকা দিয়ে শুরু করা ব্যবসা মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কোটি টাকার ব্যবসায় উন্নীত করেছেন তরুণ আলেম উদ্যোক্তা মাওলানা সাজ্জাদ হোসাইন সজীব। মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি তার কোম্পানিকে দেশসেরা কোম্পানিতে পরিণত করতে চান উদ্যোমী এ আলেম।
করোনা মহামারির মধ্যে শাই টি নামে একটি চা পাতার কোম্পানি খুলেছেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মাসে কোম্পানিতে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার (কমবেশি) বেচাকেনা হয় বলে জানান মাওলানা সাজ্জাদ।
আমি শখের বসে পঞ্চগড়ে উৎপাদিত শুকনো মরিচ ও বাদামের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করি। এতে ভালো সাড়া পাই। তখন আমার মাথায় একটি আইডিয়া আসে– সারা দেশে আমাদের পঞ্চগড় জেলার সমতল ভূমির চায়ের চাহিদা বেশ ব্যাপক। আমি এই চা পাতাকে অনলাইনে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে সাড়া ফেলতে পারি এবং এটি নিয়ে খুব সহজেই আমি ব্যবসা করতে পারি। পরে এলাকায় যারা আগ থেকেই চায়ের ব্যবসা করেন, এমন কয়েকজনের কাছ থেকে চা-পাতা কিনে ফেসবুকের মাধ্যমে বিক্রি শুরু করি। এই পণ্যেও কল্পনাতীত সাড়া পেলাম।
পরে ভেবে দেখলাম, আমি নিজস্ব মোড়কে, নিজস্ব লাইসেন্সে একটি ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে সক্ষম হলে আমার এই ব্র্যান্ডের মাধ্যমে একসময় অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হবে। আমার এই অগ্রণী ভূমিকা হয়তো অনেকের রিজিকের মাধ্যম হিসেবে আল্লাহতায়ালার কাছে কবুল হবে এবং একদিন আমি উঁচু স্বরে বলতে পারব যে, আলেমরা কখনো পরনির্ভরশীল নয়!
মাওলানা সাজ্জাদ বলেন, ব্যবসা বড় করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল পুঁজির। আমি চাইলে বাবার কাছ থেকে বড় বিনিয়োগ চাইতে পারতাম। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল নিজে থেকেই শুরু করার। এ ক্ষেত্রে আমার মা আমাকে সহযোগিতা করলেন। তিনি আমার এগিয়ে যাওয়ার সাহসিকতা অনুভব করে তার স্বর্ণালঙ্কার হতে কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে আমার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিলেন। আমার বাবা এবং আমার সহধর্মিণীর ভূমিকাও ছিল ব্যাপক। এতটুকু পুঁজি ও সবার দোয়া নিয়ে শুরু হয় ‘শাই’-র পথচলা।
ব্যবসায় যখন আমি ভালো করছিলাম, তখন অনেকেই আমার ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে চাইলেন। আমি তাদের মধ্যে বেছে বেছে সৎ ও বিশ্বস্ত কিছু মানুষের বিনিয়োগ গ্রহণ করলাম। আলহামদুলিল্লাহ, দিন যত যাচ্ছে আল্লাহ আমার ব্যবসায় বরকত দিচ্ছেন।
মাওলানা সাজ্জাদ হোসাইন সজীব বলেন, শাই টি কোম্পানির প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টে এখন ১২ জন কর্মী আছেন। অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে কর্মকর্তা রয়েছেন আটজন। বিভাগীয় প্রতিনিধি আছেন কয়েকজন। এ ছাড়া সারা দেশে ৬০ জনের বেশি নিবন্ধিত ডিলার বা পরিবেশক ও ডিপো আছেন। কোম্পানির এসেট, মেশিনারিজ ও আনুষঙ্গিক সব মিলিয়ে আমাদের কোম্পানিতে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা।
প্রতিদিন আমাদের গড়ে এক টন (১ হাজার কেজি) চা পাতা দেশের বিভিন্ন ডিলারের কাছে ডেলিভারি হয়। যার গড় মূল্য প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
এ অনুযায়ী প্রতি মাসে ২৬ কার্যদিবসে কোম্পানিতে প্রায় ৫-৬ কোটি টাকার (কমবেশি) বেচাকেনা হয় বলে জানান মাওলানা সাজ্জাদ।
শাই টির ব্যবসায়িক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে আগামী ১ অক্টোবর দেশের সব ডিলারকে নিয়ে ডিলার সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে তারা।
শাই টি ছাড়াও ভিন্ন আরও দুটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করেছেন মাওলানা সাজ্জাদ হোসাইন সজীব। আল-হিকমাহ টি অ্যাসোসিয়েট নামে।
এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাঁচা চা পাতা ক্রয়-বিক্রয়, গ্রিন টি ম্যানুফ্যাকচারিং, স্মল টি গার্ডেন ও লুজ বস্তা চায়ের পাইকারি ব্যবসা করছেন। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে চা ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া আল-হিকমাহ ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস হজ, উমরাহ ও ই-টিকেটিং এবং ভ্রমণসেবামূলক প্রতিষ্ঠান এটি।
মাওলানা সাজ্জাদ বলেন, বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ বড় বড় কোম্পানিরা ব্যবসায় নেমেই কিন্তু এত বড় বা প্রসিদ্ধ হয়নি। তারা এক-দেড়শ বছর কাজ করে এই পর্যায়ে এসেছে। আমাদের কোম্পানির মাত্র দুই বছর হলো। আমরাও অনেক বড় পরিসরে কাজ করার স্বপ্ন দেখি।
আলেমদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা আছে। আমরা সেই আস্থার জায়গাটা ধরে রেখেই ব্যবসা করতে চাই। দেশবরেণ্য আলেমরা আমাদের উৎসাহিত করছেন। আমাদের চা পান করে প্রশংসাও করছেন।
মাওলানা সাজ্জাদ হোসাইন সজীব বলেন, আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসা করেছেন। তিনি ব্যবসায়ী হিসাবে সবার কাছে বিশ্বস্ত ছিলেন। আমি নবীজির অনুসরণেই সততার সাথে ব্যবসা করতে চাই। একজন আলেম যখন ব্যবসায়ী হন। তিনি আরো বহু মানুষের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করেন। আলেম ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের উপকার বেশি হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশের সব জনগণের দোয়া, ভালোবাসা এবং সমর্থন সঙ্গে নিয়ে ‘শাই টি’কে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চান তরুণ এ আলেম উদ্যোক্তা।
১৯৯৫ সালে ৩০ মার্চ পঞ্চগড়ে জন্ম নেওয়া সাজ্জাদ হোসাইন সজীবের পরিবারে মা-বাবা, দুই ভাই, এক বোন এবং স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে। সাজ্জাদ হোসাইন পরিবারের বড় ছেলে।
মাওলানা সাজ্জাদ বগুড়া জেলার গোদারপাড়া বাজারসংলগ্ন মাদরাসাতুল উলুমিশ শারইয়্যাহয় দীর্ঘ ১০ বছর পড়াশোনা করেন। নুরানি, হিফজ এবং শরহে বেকায়া জামাত পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই পড়াশোনা করেন। এর পর জালালাইন ও মেশকাত পড়েছেন ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে।
দাওরায়ে হাদিস পড়েছেন ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদ্রাসায়। সবশেষে তিনি ইফতা পড়েছেন মিরপুরের মারকাযুদ দিরাসাতিল ইসলামিয়্যাহ মাদ্রাসায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০