# করোনাকালীন ৫(পাঁচ)লক্ষ টাকার অনুদান প্রধান শিক্ষক একাই খেয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ সহকারী শিক্ষকের।
মুহাম্মদ ফারুক আজম, মহেশখালী :
মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের জে.এম.ঘাট আর্দশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক কাইছার লিটনের সহায়তায় স্কুলে না এসে বেতন-ভাতা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ভূয়া নিয়োগ প্রাপ্ত বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) রাশেদুল হাসান ফরাজির বিরুদ্ধে।
একই সাথে ফারাজির মূল বেতনের অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের পকেটে যায় বলে জানা যায়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ।
জানা যায়–সাবেক মেম্বার গোলাম কাদের ২০০৪ সালে এই স্কুলের সভাপতি ছিলেন। জীবিত থাকা অবস্থায় তাকে মৃত দেখিয়ে ২০০৪ সালে বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ফরিদুল আলমকে নিয়োগ প্রদান করেন।
প্রাপ্ত তথ্যে–১৯৯৭ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হলেও এমপিওভুক্ত হয় ২০২২ সালে। অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মরত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে কাইছার লিটন মোটা অংকের টাকায় ৯ জন শিক্ষককে কৌশলে নিয়োগ দেখান। তৎমধ্যে ফারাজি একজন।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা যায়–প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারিতে সংশ্লিষ্টদের সাথে আঁতাত করে নিজেকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ নেন কাইছার লিটন। শুরু হয় প্রধান শিক্ষক লিটনের কেরামতি, তিনি ভুয়া সনদ সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক অনিয়মে ফায়দা লুটার পরামর্শক হয়ে উঠেন রাতারাতি। এমন কুখ্যাতি জেলাব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে অল্প সময়ে।
নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের তালিকা প্রেরণে ও অনিয়মের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যপদে নিয়োগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মোটা অংকের টাকায় উপরি মহলের মাধ্যম এমপিওর ফাইল প্রসেসিং করেন এমন তথ্য দেন অনেকেই। এমনকি তার সহকারি শিক্ষক রাশেদুল হাসান ফারাজী'ও লিটনের কারসাজিতে এমপিওভুক্ত।
তবে কাগজে-কলমে ২০০৪ সালে ফরাজিকে নিয়োগ দেখালেও সরেজমিনে সত্যতা মিলেনি। বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা ফরাজি নামের কোন শিক্ষক ইতিপূর্বে বিদ্যালয়ে ছিলো না বলে জানান।
শিক্ষক হাজিরার তথ্যমতে–২০২০, ২০২১, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে ফারাজির স্বাক্ষর থাকলেও তিনি তখন প্রতিষ্ঠানে আসেন নি বলে জানান এক শিক্ষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান–প্রধান শিক্ষক লিটনকে টাকার বিনিময়ে সমঝোতা করে ফারাজি মাসের শেষে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যেতেন।
পরবর্তীতে এটা নিয়ে সমালোচনা চললে লিটন ২০২৩ সালের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক ফারাজীকে বিএড ছুটি দেখান। কিন্তু ঐ সময়ের মধ্যে বিএড'র আবেদনের কোন সময় ছিলনা বলে জানান বিএড ধারী এক শিক্ষক।
উক্ত প্রতিষ্ঠানের আরেক শিক্ষক জানান–নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে ফরাজি স্কুলে আসেনি,ফরাজির প্রতিমাসের বেতন লিটন নিয়ে নেয় । এমপিও আসার পর সমালোচনার মুখে পড়ে ফরাজিকে অবৈধভাবে বিএড ছুটি দেখায় প্রধান শিক্ষক।
এমনকি করোনাকালীন স্কুলের জন্য বরাদ্দকৃত অনুদানের পাঁচ লক্ষ টাকা একাউন্টে না রেখে খেয়ে পেলেন লিটন।
তিনি আরো বলেন,ওনার আবেদন সমাজবিজ্ঞানে হলেও সেখানে নিয়োগ দেখানো হয় বাংলায়। পরবর্তীতে নিয়োগে ভুল হয়েছে বলে টাকা দাবি করেন লিটন।
এদিকে ফরাজির ফেসবুক আইডিতে দেখা যায় তিনি কুমিল্লার শাহজালাল মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন,তিনি ওখানকার কর্মদিবসের বিভিন্ন তথ্য প্রতিনিয়ত আপলোড করেন।
এ বিষয়ে ফারাজির সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে গালমন্দ ব্যবহার করে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক কাইছার লিটনের সাথে কথা বললে তিনি জানান–২০২২ ইং সালের জুলাই থেকে ২০২৩ ইং সালের জুন পর্যন্ত ফরাজি বি.এড ছুটিতে ছিলেন। তবে শিক্ষক হাজিরায় ২০২৩ ইং সালে ফেব্রুয়ারী /মার্চে স্বাক্ষর রয়েছ ফরাজির।
ছুটি কালীন সময়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোন স্বাক্ষর নাই বলে দাবি করেন। অথচ শিক্ষক হাজিরায় ছুটি কালীন ২০২২ এবং ২০২৩ সালে রয়েছে ফরাজির স্বাক্ষর।
প্রধান শিক্ষক কাইছার লিটন ও ফরাজির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ফরিদুল আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গণিত শিক্ষক ফরাজি মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠানে আসেন। মাঝেমধ্যে আসার বিষয়টি যৌক্তিক কিনা প্রশ্ন রাখলে সভাপতি উত্তর এড়িয়ে যান।
"এদিকে প্রধান শিক্ষকের দাবি ছুটিতে,অন্যদিকে সভাপতির দাবি ওনি প্রতিষ্ঠানে আসেন "--এমন ভিন্নতা কেন?
প্রশ্ন করলে তিনি ছুটির বিষয়টি অবগত নয় বলে জানান বিদ্যালয় সভাপতি।
আর করোনা কালীন ৫(পাঁচ)লক্ষ টাকার বিষয়টি জানতে চাইলে,তিনি এসব মোবাইলে বলতে পারবেননা এবং প্রতিবেদককে দেখা করার অনুরোধ জানান। প্রতিবেদক দেখা করতে নারাজ হলে তিনি আর কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহেদুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে তিনি জানান–এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি আগামীকাল স্কুল পরিদর্শনে যাব,সব বিষয় খুঁজ নিব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০