মো:জাবেদুল আনোয়ার,
স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার
রামুতে পাহাড় ও বাঁকখালী নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন দুর্গম গ্রাম হলো ডাকভাঙা, ফকিরনিরচর ও বাদনিচর।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ছায়া দিতে এসে, প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর স্বয়ং বিদ্যালয়ের ৫৪টি ছায়াবৃক্ষ বিক্রি করে দিয়েছেন।
রামু উপজেলার ডাকভাঙা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধশতের বেশি ছায়াবৃক্ষ বিক্রি করার অভিযোগ বিদ্যালয় পরিচালনায় নিয়োজিত ‘ডাকভাঙ্গা বাংলাদেশ’ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জুয়েল তালুকদারের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, ডাকভাঙা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি ফরুখ আহমদ। বিদ্যালয়ের ছায়াবৃক্ষ বিক্রি ও কেটে নেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয়রা।
এই গ্রাম গুলোতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৯৮ সালে স্থানীয়দের উদ্যোগে রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড়ের যোগাযোগ দূর্গম পাহাড়ি জনপদ ডাকভাঙা গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ডাকভাঙা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’।
‘ডাকভাঙা বাংলাদেশ’ নামে বেসরকারি সেবামূলক সংস্থার শিক্ষাপ্রকল্পের উদ্যোগে, বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর দ্বারা বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহায়তায় এ বিদ্যালয় পরিচালনা করা হয়। বর্তমানে দায়িত্বরত প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জুয়েল তালুকদারের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে, সম্প্রতি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাস্টার আবুল কাসেম স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
ডাকভাঙা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সহ-সভাপতি ফরুখ আহমদ জনান, গত আট বছর ধরে বিদ্যালয় পরিচালনায় নিয়োজিত ‘ডাকভাঙা বাংলাদেশ’ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জুয়েল তালুকদার। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত না করে, বিদ্যালয়ের ৫৪টি বড় বড় মেহগনি গাছ নামমাত্র ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। বিগত সময়ের দায়িত্বরত পি সি (প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর) ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে সভা করে, বিদ্যালয় পরিচালনার বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করতেন। কিন্তু বর্তমান পি সি জুয়েল তালুকদার একাই ইচ্ছামতো যেকোন সিদ্ধান্ত নিজে নেন। তিনি কারো কথা কর্ণপাত করেন না। তোয়াক্কা করেন না বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিরও।
সহ-সভাপতি ফরুখ আহমদ, সদস্য মোকতার আহমদ আরও জানান, গত এক সপ্তাহ পূর্বে পি সি (জুয়েল তালুকদার) স্কুলে এসে, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে অবহিত না করে বিদ্যালয়ের ৫৪টি মেহগনি গাছ শুধু মাত্র ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে চলে যান। প্রায় ৮০০ ফুট ওই গাছের বর্তমান বাজার মূল্য আনুমানিক ৪ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির কোনো ধরনের সভা, রেজুলেশন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করা হযনি। এমনকি মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি কমিটির কোনো সদস্যকে।
‘ডাকভাঙা বাংলাদেশ’ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জুয়েল তালুকদারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে, সহ-সভাপতি ফরুখ আহমদ আরও জানান, বিভিন্ন সময়ে জুয়েল তালুকদার স্কুল ফান্ডের টাকা ইচ্ছামতো খরচ করতো। সম্প্রতি তিনি ‘ডাকভাঙা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এর নামে রামু জনতা ব্যাংকে রাখা স্টুডেন্ট কালেকশানের ৩০ হাজার টাকা উঠিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। অনিয়মের ব্যাপারে কেউ কথা বলতে চাইলে, তাকে কমিটির পদ থেকে বাদ দিয়ে দিতেন এবং নিয়মভঙ্গ করে কমিটিকে নিজের ইচ্ছামতো পরিচালনা করতেন।
তিনি আরও জানান, বিগত প্রায় চার মাস পূর্বে স্কুল কমিটির সভাপতি মাস্টার আবুল কাসেমকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা উত্তোলনের কথা বলেন। এতে সভাপতি (আবুল কাসেম) টাকা উত্তোলনে সম্মতি দানে অস্বীকার করলে, পিসি জুয়েল তালুকদার ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আপনার (আবুল কাসেম) মতো সভাপতির দরকার নাই। আমি (জুয়েল তালুকদার) যাকে ইচ্ছা সভাপতি করে স্কুল চালাবো। প্রতিবাদ জানিয়ে সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন মাস্টার আবুল কাসেম। তখন থেকে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটিতে সভাপতি’র পদ শূণ্য।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডাকভাঙা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বর থেকে গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) থেকে শনিবার পর্যন্ত পাঁচ দিনে ২০টি মেহগনি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম জানান,দুই মাস পূর্বে এ বিদ্যালয়ে যোগদান করি। জেনেছি আমি যোগদানের আগে অনুষ্ঠিত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ৩০টি গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে ছায়া দানকারী গাছ কাটার ফলে, বিদ্যালয়টি ছায়া বিহীন হয়ে পড়বে। এতে গরমের দিনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হবে।
অনিয়ম-দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা এবং বিদ্যালয়ের ছায়া দানকারী ৫৪টি মেহগনি গাছ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে ‘ডাকভাঙা বাংলাদেশ’ এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জুয়েল তালুকদার বলেন, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলায় অসুবিধা, টিউবওয়েলের জায়গা ও বিদ্যালয়ের সীমানা দেয়ালে ফাটল ধরার কারণে, ৩৪টির অধিক গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয় ডোনার ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে। এখানে আমার নিজস্ব কোন সিদ্ধান্ত নেই। ব্যাংক একাউন্টের টাকা উত্তোলন বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটির সিদ্ধান্তে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যয়ের জন্য। গাছ বিক্রির টাকা বিদ্যালয় অফিস একাউন্টে জমা করা হয়েছে।
এদিকে ডাকভাঙার স্থানীয় বাসিন্দারা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।