মোঃ শিবলী সাদিক, রাজশাহী।
রাজশাহী নগরীতে কুখ্যাত মাদক সম্রাজ্ঞীদের মধ্যে অন্যতম শ্যামলী বেগম (৪০)। শিরোইল কলোনি রেলওয়ে বস্তি এলাকার খায়রুলের স্ত্রী শ্যামলী তার পরিবারে সকলেই মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে স্বামী খায়রুল , মেয়ে খালেদা ও জামাই সুমন মাদকের মামলায় জেলে থাকলেও বন্ধ নেই শ্যামলীর ব্যাবসা।
নগরীর শিরোইল কলোনি, হাজরাপুকুর, আসাম কলোনী, রবের মোড়, কানামোড়, ছোট বনগ্রাম, শিরোইল, বাস্তহারা, ভদ্রামোড়, পদ্মা আবাসিকসহ শহরজুড়ে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হিসাবেই খ্যাতি অর্জন করেছেন শ্যামলী বেগম।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞীদের মধ্যে অন্যতম এই শ্যামলী। ২ যুগ ধরে মাদক ব্যবসা করলেও এখন তার স্পটে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় হেরোইন।
রাজশাহীর বানেশ্বর হলিদাগাছী ও গোদাগাড়ী থেকে হেরোইন সংগ্রহ করা হয় এবং ট্রেনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার করা হচ্ছে পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে।
রেলওয়ে বস্তিতে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন তিনি। শ্যামলীর বিরুদ্ধে কেও কথা বল্লে বাহিনী দ্বারা প্রতিহত করা হয় তাদের বিনিময়ে তাদের বিনামুল্যে খাওয়ানো হয় হেরোইন। এছাড়া বস্তিতে আগুন দেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া তার কাছে নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাড়িছে।
গোপন সুত্রে জানা গেছে, তার বস্তির পাশে ট্রেন ধোলায় কারখানা (ওয়াসফিড) রয়েছ। সেখানে ধোলাই করা হয় ঢাকার চারটি ট্রেনসহ আন্তনগর ট্রেনগুলো। ওয়াসফিডের কিছু কর্মচারিদের সাথে পরস্পর যোগসাজসে হেরোইনের বড় বড় চালান ট্রেনের গোপন জায়গায় রেখে পাচার করা হয়। পুলিশের সোর্স রাজ্জাক হত্যা মামলার আসামি শ্যামলী ও তার স্বামী খায়রুল। হত্যাসহ মাদকের অসংখ্য মামলা রয়েছে শ্যামলীর বিরুদ্ধে ।
রেলওয়ে কোয়ার্টার ও বস্তি এলাকার বাসিন্দারা জানান, শ্যামলীর মাদক স্পটে ভোর থেকে গভির রাত পর্যন্ত চলে মাদক কেনা বেচা। দৈনিক অসংখ্য মাদকসেবীরা আসে তার কাছে মাদক নিতে এবং তারা আমাদের রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করে। কিছু বল্লে মারমুখি আচারণ করে তারা। মাদক সেবনকারি সুশিল, নাগরাজ, জায়জুল, মানিক, গাজিয়া, পুন্নু ও মেহেদীসহ আরও অনেকে বলেন, আমরা দৈনিক দুই ধাপে শ্যামলীর কাছ থেকে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকার হেরোইন ক্রয় করি। টাকা কম হলে মাদক দেয়াতো দুরে থাক উল্টো গালিগালাজসহ মারধরও করে মাদকসম্রাজ্ঞী শ্যামলী। আগে দৈনিক এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাদক কেনাবেচা হত এখন বেড়ে দুইগুন হয়েছে।
খুচরা ও পাইকারি মিলে মাসে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার মাদক বিক্রি করে সেখানে। বস্তিতে বসবাসকারি মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রশাসনের লোকজন যায় আর আসে। তার বাসায় গিয়ে যে স্থানে মাল রাখা থাকে সেখানে বাদে বাসার অন্যান্য জায়গায় খতিয়ে দেখেন। নামকাওয়াস্তে, লোক দেখানো অভিযান শেষে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা নিয়ে চলে যায় তারা ।
এছাড়া শ্যামলী বস্তিবাসিদের প্রায়সময় বলেন, প্রশাসনকে আচলের তলে বেধে রাখি। প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ টাকা এমনিতে দেয়না তাদের! আমার এখানে অভিযান দিতে আসলে আমার অনুমতি নিয়ে আসতে হবে! মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজনসহ থানা ও ডিবি পুলিশ সদস্যরা আমার সাথে ইমুতে কথা বলেন। এব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) উপ-পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, শ্যামলীকে ধরার জন্য বস্তি এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।
অল্প সময়ের মধ্যে তাকে আইনে আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানান তিনি। চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাহবুব আলম বলেন, এর আগে হেরোইনসহ শ্যামলীকে গ্রেফতার করে থানার একটি টিম এঘটনায় তিন মাস জেলে ছিল সে।
জামিনে এসে আবার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, আমরা বড় চালান সহ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টায় রয়েছি। অচিরেই মাদকসহ তাকে গ্রেফতার করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০