চকরিয়া প্রতিনিধি
টাকা ধার দেওয়ার অজুহাতে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা এক গৃহবধূকে কক্সবাজারে নিয়ে আবাসিক হোটেলে আটকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি, হোটেলের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল পরবর্তী বিয়ের আশ্বাসে ওই নারীকে বাসায় এসে আরও একাধিকবার ধর্ষণ করেছে লম্পট যুবক।
অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী সর্বনাশের দায়ভার থেকে নিজেকে রক্ষায় ইত্যবসরে বিয়ের জন্য চাপ দেন অভিযুক্ত যুবককে। পরে কথামতো ওই যুবক গত ২৬ আগস্ট চকরিয়া পৌরসভার চিংড়িচত্বর এলাকার মালেক টাওয়ারে গৃহবধূর বাসায় এসে বিশ্বাস জন্মানোর মাধ্যমে সেচ্ছায় কাবিননামা ও চারটি খালী পেপারে স্বাক্ষরও নিয়ে কাগজ গুলো তার কাছে রাখে। এরপর শারীরিক সম্পর্ক শেষে কাগজ গুলোসহ নিয়ে ওইদিন থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান যুবক মোহাম্মদ নিশাত।
এরপর বিভিন্নভাবে যুবক নিশাতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন ওই নারী। একপর্যায়ে একদিন মোবাইলে বলে বাসায় এসে তাকে নিজের (নিশাতের) বাড়িতে নিয়ে যাবেন কথা দিলেও পরক্ষণে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন যুবক নিশাত। এঘটনায় অনেকটা নিরুপায় হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন ভিকটিম ওই নারী। ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর কক্সবাজার নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ২ আদালতে একটি মামলা রুজু করেছেন ভিকটিম উন্মে হাফসা মনি। মামলায় একমাত্র আসামি করা হয়েছে অভিযুক্ত যুবক নিশাতকে।
অভিযুক্ত যুবক নিশাত মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার আবু শামার ছেলে। অন্যদিকে ভিকটিম উন্মে হাফসা মনি একই এলাকার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী নুরুল কালাম মুন্নার স্ত্রী। তার বাপের বাড়ি চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নে।
বাদিপক্ষের কৌশলী কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী এডভোকেট মো জিয়াউল হক মানিক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তিন সন্তানের জননী গৃহবধূ হাফসা মনিকে ব্ল্যকমেইল করার মাধ্যমে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে অভিযুক্ত যুবক। বিষয়টি উপস্থাপন করে জানানো হলে মাননীয় আদালত বাদির ফৌজদারি আবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্তপুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশ বুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজারকে নির্দেশ দিয়েছেন। আইনজীবী জিয়াউল হক মানিক বলেন, তদন্তে আমার মক্কেল নির্যাতিত নারী সুবিচার পাবে।
ভিকটিম গৃহবধূ উন্মে হাফসা মনি বলেন, যুবক নিশাত সম্পর্কে আমার চাচাতো দেবর। আমার স্বামী সৌদি আরবে প্রবাসে থাকেন। আমার তিনটি সন্তান আছে। স্বামী নুরুল কালাম মুন্নার সঙ্গে কথা বলে বড় দুই সন্তানের লেখাপড়ার সুবিধার্থে মাতারবাড়িস্থ শাশুড় বাড়ি থেকে চলে এসে চকরিয়া পৌরসভার সামনে মালেক টাওয়ারে বাসা নিই। মুলত মালেক টাওয়ার বিল্ডিংয়ের পাশে নামীদামী সব শিক্ষাপ্রতিষ্টান আছে।
গৃহবধূ হাফসা মনি বলেন, শাররীক অসুস্থতার কারণে গত ২৬ জুলাই কক্সবাজারে যাই। ওইসময় ডাক্তার ফিস ও ওষুধের জন্য দুই হাজার টাকা দরকার হচ্ছে জানিয়ে দেবর নিশাতকে ফোন করি। পরে সে আমাকে কক্সবাজার লালদিঘিস্থ রহমানিয়া হোটেলে যেতে বলে। আমি কোলে থাকা শিশু সন্তানকে নিয়ে সেখানে গেলে একটি রুমে বসতে দেন। বলে একটু বসেন আমি টাকা নিয়ে আসছি। কিছুক্ষণ পরে একটি ছাকু হাতে রুমে ঢুকে নিশাত আমাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
গৃহবধূ হাফসা অভিযোগ করে বলেন, ধর্ষণের দৃশ্য ওইসময় গোপনে ধারণ করে নিশাত। এরপর ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ও বিয়ের আশ্বাসে আমাকে আরও একাধিকবার ধর্ষণ করে লম্পট যুবক নিশাত। এ অবস্থায় ঘটনাটি আমার স্বামী ও আমার বাপের বাড়ির লোকজন জানতে পারে। এতে আমি লোকলজ্জার ভয়ে এবং নিজের ভবিষ্যত চিন্তা করে নিশাতকে বিয়ের জন্য চাপ দিই। এরই জেরে গত ২৬ আগস্ট চকরিয়া পৌরসভার সামনে মালেক টাওয়ারে আমার বাসায় এসে বিশ্বাস জন্মানোর মাধ্যমে স্বেচ্ছায় কাবিননামা ও চারটি পেপারে স্বাক্ষর করে নিশাত। এরপর থেকে নিশাত আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে নিরুপায় হয়ে আমি তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার নারী শিশু আদালতে মামলা করি।
ভিকটিম উন্মে হাফসা মনি অভিযোগ করে বলেন, সরল বিশ্বাসে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলা থেকে রক্ষা পেতে এখন অভিযুক্ত নিশাত ও তার পরিবার বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমার মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাকে এবং সহযোগিতা করার অপরাধে আমার মামা লুৎফর রহমান রাসেলকে উল্টো মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করছে। একইসঙ্গে সত্য ঘটনা আড়ালে রেখে তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ভুক্তভোগী গৃহবধূ হাফসা মনি তার ইজ্জত লুটের ঘটনায় অভিযুক্ত লম্পট নিশাতকে গ্রেফতারে পুলিশের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশাপাশি আদালতের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেছেন। ###
সম্পাদক ও প্রকাশক: রফিকুল ইসলাম
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০