শামসুল হুদা লিটন কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে:
কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি বালিকা মাদরাসায় জাল সনদধারী তিন ভূয়া শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনি ও বিভাগীয় পদক্ষেপ নেওয়ায় ভারপ্রাপ্ত সুপারকে প্রকাশ্যে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবারের (২২ জানুয়ারি) এ ঘটনায় শুক্রবার কাপাসিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে। জাল সনদধারী ভূয়া শিক্ষকদের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসী এবং জালিয়াত চক্রেরের সাথে জড়িত চিহ্নিত লোকজন স্থানীয় একটি বাজারে মাদরাসা সুপারকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত সুপারকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও লাঞ্ছিত করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।ব্যাপকভাবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাঁর দিকে এক ব্যক্তিকে বারবার তেড়ে যেতে দেখে যায়। সেখানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি তাঁকে বাধা দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি ওই শিক্ষককে অশ্লীল ও অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন এবং তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন। সুপার ওই ব্যক্তিকে ঠান্ডা মাথায় বারবার জাল সনদের বিষয়টি বুঝাতে চেষ্টা করলেও তিনি বারবার সন্ত্রাসী আচরণ করতে থাকেন।
হেনস্তার শিকার মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার, এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন মাওলানা মো. আবুল হাসেম আকন্দ বাদী হয়ে ছয়জনের নামে কাপাসিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় তিনজন ভুয়া শিক্ষক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার ও মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক দুই সভাপতিকে আসামী করা হয়। এজাহারভূক্ত আসামীরা হলেন, মো: রফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, হাছিনা, মো: মেজবাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মিন্টু, মো: আলাউদ্দিন। মামলায় এ ৬ জন ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরে ৪- ৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদী ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. আবুল হাসেম আকন্দ অভিযোগ করে বলেন, উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বড়িবাড়ি বালিকা দাখিল মাদ্রাসায় স্থানীয় একটি জালিয়াতচক্র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার মো. মেজবাহউদ্দিনের যোগসাজশে সনদ ও স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ওই মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় সনদ জালিয়াতি করে ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর জুনিয়র শিক্ষক মোসা. হাছিনা এবং ২০১৬ সালের ২০ আগস্ট ইবতেদায়ি প্রধান পদে চাকরি নেন মো. রফিকুল ইসলাম।
অপরদিকে ২০২৩ সালে সিংহশ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন আকন্দ ওই মাদ্রাসার সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ওই বছরের ১৯ অক্টোবর জালিয়াতি করে সহকারী মৌলভি শিক্ষক পদে শফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দেন। তাঁরা তিনজন নিয়োগের পর থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা ভোগ করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছর কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে ভারপ্রাপ্ত সুপার ওই মাদ্রাসায় কর্মরত ৮ জন নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন শিক্ষকের সনদ জাল এবং নাজমা বেগম নামের একজন শিক্ষকের কাগজপত্রের হদিস পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর গত ৭ জানুয়ারি তাঁদের এমপিও বন্ধ করে এক প্রতিবেদনে তিন ভুয়া শিক্ষকসহ তাঁদের নিয়োগদাতাদের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত সুপারকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেয়। তা ছাড়া বেতনভাতা বাবদ তোলা ১৭ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৮ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে। সে অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় তারা। গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ভুয়া শিক্ষক হাছিনার ভাশুর মো. আফাজউদ্দিন বড়িবাড়ি চৌরাস্তা এলাকায় ভারপ্রাপ্ত সুপারকে পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ সময় একাধিকবার কিলঘুসি মারতে এগিয়ে যান এবং তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাপাসিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিকে একজন জনপ্রিয় আলেমেদ্বীনকে অপমান অপদস্ত করায় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার মতো জঘন্য ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকার লোকজন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। এবং মামলা দায়েরের পরও সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার না হওয়ায় বিশ্বময় প্রকাশ করেছেন।