শহিদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রামের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একশ টাকা মূল্যের তিনটি জাল নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প দাখিল করে একটি কাঠের নৌকার মালিক সেজে আদালতের কাছে জিম্মা চেয়ে উল্টো মামলার আসামি হলেন কর্ণফুলী উপজেলার ফারুক আহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি।
সোমবার (২৪ মে) দুপুরের দিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ এর এজলাস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের দ্বীপকালার মোড়ল এলাকার মৃত আব্দুল মন্নানের ছেলে ফারুক আহাম্মেদ কর্ণফুলী থানার এক মামলার জব্দকৃত একটি কাঠের তৈরী পুরাতন নৌকা (দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট) জিম্মা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে তিনি নৌকাটি স্ট্যাম্প মূলে ক্রয় করে নৌকার মালিক বলে দাবি করেন। শুনানীকালে তিনি একশ টাকা মূল্যের ৩টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প আদালতে দাখিল করেন। যার সিরিয়াল নম্বর যথাক্রমে খষ-০৪৮৬২৯৬, খষ-০৪৮৬২৯৭, খষ-০৪৮৬২৯৮। স্ট্যাম্পে ভেন্ডরের নাম ও লাইসেন্স নম্বর উল্লেখ নেই। যা আদালতের কাছে পর্যবেক্ষণে সন্দেহজনক মনে হয়।
পরে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. অলি উল্লাহ ওই স্ট্যাম্প গুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ট্রেজারি অফিসকে নির্দেশ প্রদান করেন।
ট্রেজারি শাখা পরবর্তী প্রতিবেদনে একশ টাকা মূল্যের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প তিনটি বিগত ৬ মে চট্টগ্রাম ট্রেজারি হতে সরবরাহ করা হয় বলে আদালত কে জানান।
কিন্তু ওদিকে কর্ণফুলী থানা মামলার (নং-১০/২০২৪) নথিতে দেখা যায়, নৌকাটি গত ৪ মে রাত ১১টায় জব্দ করা হয়। মামলা করা হয় ৫ মে। অথচ ট্রেজারি শাখা বলছে স্ট্যাম্প ৩টি সংগ্রহ করেছেন ৬ মে।
এতেই স্পষ্ট, মামলাটি দায়েরের পর জিম্মা আবেদনকারী ফারুক আহাম্মেদ নৌকাটি পুলিশ হেফাজতে জব্দ থাকা অবস্থায় স্ট্যাম্প মূলে জনৈক জিয়াউর রহমান এর কাছ থেকে ক্রয় করেছেন বলে স্ট্যাম্প তিনটি সৃজন করেন।
এতে আবেদনকারী ফারুক আহাম্মেদ জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে স্ট্যাম্পগুলো খাঁটি হিসেবে আদালতে দাখিল করেন। নৌকাটিকে প্রতারণামূলকভাবে জিম্মা নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে, আদালত জিম্মার আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।
একই সময়ে আদালত জিম্মা আবেদনকারী শিকলবাহার ফারুক আহাম্মেদ, অজ্ঞাতনামা স্ট্যাম্প ভেন্ডরসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতি ও স্ট্যাম্প আইনের ধারায় মামলা দায়েরের জন্য আদালতের বেঞ্চ সহকারী’কে নির্দেশ প্রদান করেন।
পরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালত এর বেঞ্চ সহকারী এস.এম শফিউল আজম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালত ও আমালী আদালতে (কোতোয়ালী থানা) ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিএমপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এজাহার হিসেবে গণ্য করতে আদেশ প্রদান করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ওবায়েদুল হক ও মামলার বাদী বেঞ্চ সহকারী এস.এম শফিউল আজম।
প্রসঙ্গত, গত ৪ মে রাত ১১ টার দিকে কর্ণফুলী নদীর শিকলবাহা তাতিয়া পুকুরপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেড় লাখ টাকা মূল্যের ২২ বস্তা চোরাই চিনি জব্দ করেছে নৌ পুলিশ। এ সময় একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা জব্দ করা হয়।