রফিকুল ইসলাম জসিম,
২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফলে অন্যান্য জেলার উপজাতিদের জন্য ৭৭ কোডে ৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪ জনই অ-উপজাতি কে নির্বাচিত করা হয়েছে। এছাড়াও ৭৭ কোডের অপেক্ষমান তালিকায় ৪ জনের মধ্যে ১ জন অ- উপজাতি শিক্ষার্থী রয়েছে। এসকল শিক্ষার্থীর কেহই সরকারের গেজেটভুক্ত ৫০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর (আদিবাসী) সদস্য নয়। ফলে, বঞ্চিত হচ্ছে সমতলের উপজাতিরা।
সরকারী মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রতি শিক্ষাবর্ষেই উপজাতি (ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী) কোটায় নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকেই উপজাতি শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসনগুলোতেও অ- উপজাতি শিক্ষার্থীদের নির্বাচন করা হয়ে আসছে। এতে প্রতিবছরই অনেক উপজাতি শিক্ষার্থীই মেডিকেল কলেজে ভর্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা হতাশাগ্রস্ত।
এই বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় কোড ৭৭ উপজাতি কোটায় কুষ্টিয়া মেডিকেলে মো. নাজমুল ইসলাম, সাতক্ষিরা মেডিকেলে মো: সাকিব বাশার, মাগুরা মেডিকেলে খন্দকার কাশেবা কুমকুম ও কক্সবাজার মেডিকেলে নেপাল চাকমার নাম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দকৃত ৮টি আসনের মধ্যে এই ৪ জনই সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বহির্ভুত থাকায়
গত ২৫ এপ্রিল এই তালিকা হতে অ-উপজাতি প্রার্থীর নাম বাতিল করার জন্য অনুরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ চেয়ে সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সংগঠকরা সংবাদ সম্মেলন করার পরও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপরন্ত ২০২২ সালেও একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে কোড ৭৭ উপজাতি কোটায় অপেক্ষমান মেডিকেলে চান্সপ্রাপ্ত নামের তালিকায় অ-উপজাতি রাখা হয়েছে।
গতকাল ৫ জুন প্রকাশিত অপেক্ষমান মেডিকেলে মেধা তালিকায় এখানেও অ-উপজাতি রয়েছে। আমাদের আবারও আপত্তি জানাতে হবে বলে ফেসবুক স্টাটাস দেন বাংলাদেশ মণিপুরী মুসলিম এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি সাজ্জাদুল হক স্বপন। তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১- ২০২২ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেলে মেধা তালিকা (৭৭ কোড) এ ০৮ জনের মধ্যে অ-উপজাতি শিক্ষার্থী ৪ জনে পর – আবার
অপেক্ষামান তালিকায় ৪ জন শিক্ষার্থী চান্সপ্রাপ্ত নামের তালিকা ১জন অ-উপজাতি রয়েছে জানান৷
সমতলের ক্ষুদ্র-গোষ্ঠীর ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যতে যেন এধরণের ঘটনার শিকার না হয় তার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে অনেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুনঃতদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কমলা বাবু সিংহ, বাংলাদেশ মণিপুরী মুসলিম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বামডো) এর সভাপতি নুর উদ্দিন, বাংলাদেশ মণিপুরি কাং ফেডারেশনের সভাপতি ইবুংহাল সিংহ শ্যামল, বাংলাদেশ মণিপুরী মুসলিম সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ মণিপুরি এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি সাজ্জাদুল হক স্বপন, তেতইগাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহেনা বেগম, মণিপুরী সমাজ কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শান্তুমনি সিংহ প্রমুখরা জানান, সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে সমতলে বসবাসরত উপযুক্ত উপজাতি শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করার জোর দাবী জানান।
উল্লেখ্য, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের বিজ্ঞপ্তিতে এবছর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি) কোটায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীর আসন বরাদ্দ ছিলো। যার মধ্যে পার্বত্য তিন জেলার উপজাতিদের (কোড-৭১, ৭৩, ৭৫) জন্য ৯টি, পার্বত্য তিন জেলার অ-উপজাতিদের (কোড- ৭২, ৭৪, ৭৬) জন্য ৩টি, এবং রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে ১৩টি এবং অন্যান্য জেলার উপজাতিদের (কোড- ৭৭) জন্য ৮টি কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে আদিবাসী (উপজাতি) কোটায় অ-আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।
উপজাতি- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সংগঠনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে মোট ৪৫টি জাতিসত্ত্বার প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। সরকারিভাবে যারা ‘ক্ষুদ্র- নৃ গোষ্ঠী’ হিসেবে পরিচিত। তিন পার্বত্য জেলায় ১৩টি ভাষাভাষীর ১২টি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। বাকি ৩২টি জাতিগোষ্ঠী দেশের শেরপুর, জামালপুর,নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, গাজীপুরসহ রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু সংখ্যক জেলায় বাস করে, যারা সমতলের উপজাতি বলে পরিচিত।