———-
গত কয়েকদিন ধরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হওয়া চৈত্রের তীব্র তাপদাহে জনমানুষের জীবন অতিষ্ট। ইতোমধ্যে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর চলমান মৃদু তাপদাহ (৩৬-৩৮)0 সে. ও (৩৮-৪০)0 সে. থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য সতর্কতা সর্ম্পকিত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা লোপ পেয়ে হিট স্ট্রোক এর মতো মারাতœক পরিস্থিতি তৈরী করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সচেতনতা পারে তীব্র তাপদাহে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখতে। আমাদের আজকের আয়োজনে মানুষের শরীরে তীব্র তাপদাহের প্রভাব ও ব্যবস্থাপনা জেনে নেই।
হিট স্ট্রোক কি?
হিট স্ট্রোক হচ্ছে এমন একটি জরুরী অবস্থা যাতে শরীরের তাপমাত্রা ৪০0 সেলসিয়াস বা তার উপরে চলে যায়, এমতাবস্থায়, সরাসরি সূর্যের তাপ শরীরে লাগলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারায়ে অবচেতন হতে পারে। অধিকন্তু, শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ নষ্ট করে, মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ অবস্থাকে হিট স্ট্রোক হিসেবে অভিহিত করা হয়। বয়স্ক ও বাচ্চারা হিট স্ট্রোকের উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।
হিট স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ কি কি?
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণত নি¤œলিখিত উপসর্গগুলো দেখা যেতে পারে-
ঘাম হওয়া ছাড়াই ত্বক লাল,গরম,ও শুষ্ক হয়ে উঠে।
শ্বাসকষ্ট
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
ক্লান্তি
বমিভাব/ বমি হওয়া
মাথাব্যাথা
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে কি করবেন?
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তাকে প্রথমে ছায়াযুক্ত ঠান্ডা স্থানে নিয়ে তার শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য ভিজে তোয়ালে অথবা হালকা হাওয়ার ব্যবস্থা করুন। যদি সম্ভব হয়, তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির বগলে ও কুচকির জায়গায় আইস প্যাক দিন। প্রাথমিক সুশ্রুষা শেষে চিকিৎসার জন্য রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আবশ্যক।
অতিরিক্ত গরমে নিজেকে রক্ষা করবেন কিভাবে?
১. সরাসরি সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন।
সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রোদের তীব্রতা বেশি থাকে। এ সময় জরুরী প্রয়োজন না হলে ঘরে অবস্থান করুন।
২. বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন। এছাড়া মাথায় লম্বা কিনারাযুক্ত টুপিও ব্যবহার করা যেতে পারে ।
৩. সূতি, হালকা রংয়ের (যেমন-সাদা) ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করুন।
গরমের সময় জিন্স বা মোটা কাপড় না পড়ে সুতির কাপড় ব্যবহার করুন। এতে ঘাম কম হবে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করবে। এছাড়া কালো বা গাঢ় রঙের কাপড় এড়িয়ে সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরিধান করা ভালো, কারণ হালকা রঙের কাপড় তাপ শোষণ করে কম।
৪. শরীরের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে বেশি বেশি পানি পান করুন।
৫. ভারী ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
এ জাতীয় খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে। ফলে সেটি শরীরের উপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। খাবার মেন্যু থেকে গরমের সময় তেলযুক্ত খাবার, মাংস, বিরিয়ানি, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাবার বাদ দেয়া যেতে পারে। বরং শাকসবজি ও ফলমূল বেশি কওে খাওয়া যেতে পারে।
৬. প্রতিদিন গোসল করুন। এছাড়াও দিনে কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৭. বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জুতা পরিধান করুন। সম্ভব হলে গরমে মোজা ও সু’জুতা পরিহার করুন। সেক্ষেত্রে, চামড়ার জুতা ব্যবহার করতে পারেন কারণ চামড়া কম গরম হয় ও কম তাপ পরিবহন করে।
৮. পুরনো বা বাসী খাবার না খাওয়া। গরমে খাবার দ্রæত নষ্ট হয়ে যায়। তাই আগের দিনের বা বাসী খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে দেখে নিতে হবে সেটি নষ্ট কিনা? নষ্ট খাবার খেলে ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা সহ পেটের অসুখ হতে পারে।
৯. বাহিরে বের হলে হিট স্ট্রোকের লক্ষণ সর্ম্পকে সচেতন থাকুন।
————
মোঃ আব হাসনাত আব্দুল্লাহ
সম্পাদক,স্বাস্থ্য বিভাগ।
নিউজ ভিশন বিডি।