ঢাকামঙ্গলবার , ২৬ নভেম্বর ২০২৪
  1. সর্বশেষ

বুক রিভিউঃ আয়নাল হক উপাখ্যান

প্রতিবেদক
নিউজ ভিশন
২৬ এপ্রিল ২০২০, ৬:১২ অপরাহ্ণ

Link Copied!

বইয়ের নামঃ আয়নাল হক উপাখ্যান।
লেখকঃ মো. রেজাউল করিম।
ক্যাটাগরিঃ উপন্যাস।
রেটিংঃ ৭/১০।
প্রকাশকঃ শব্দমালা প্রকাশন।
প্রচ্ছদঃ ওয়ালীউল্লাহ।
প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
মুদ্রিত মূল্যঃ ১০০ টাকা।

বইটি পল্টন মোড়ের ভাসমান দোকান থেকে নেওয়া। বইতে একমাত্র প্রকাশক শাহজী প্রকাশনী থাকলেও বইটি বইমেলা, রকমারি.কম এবং দেশের বিভিন্ন পাঠাগারে পাওয়া যাবে। মুদ্রিত মূল্য শত টাকা দেওয়া হলেও আমি তার অর্ধেক দিয়ে কিনেছি।

উপন্যাসের প্রধান চরিত্রের নামে লেখা ‘আয়নাল হক উপাখ্যান’ বইটিতে সমাজের একজন অশিক্ষিত প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নেতৃত্বের গুণাবলি সম্পন্ন একজন ব্যক্তি সমাজের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখে। কিন্তু বাস্তব সমাজে অর্থ আর ক্ষমতার নেতা হওয়ার উদাহরণ ভুঁড়ি ভুঁড়ি। আয়নাল তাদের কাতারের একজন কাউন্সিলর তথাকথিত নেতা। পেশীর শক্তিতে আয়নাল দিনদিন ছদ্মবেশী সন্ত্রাসীতে পরিনত হয়। অনাহারে দিন কাটানো বস্তির ছেলে আয়নাল প্রবল অস্তিত্ববাদে দেশের প্রতিনিধিদের সান্নিধ্যে কিভাবে ক্ষমতা, অর্থ উভয়ই লাভ করেন, লেখক পুরো বইতে তার বর্ণনায় চরিত্রের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন।

বস্তির নামকরা সুন্দরী লাইলী বেগম। বিয়ে হয় এক রিক্সাওয়ালার সাথে। দুজনের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় আয়নাল হক। আয়নালকে কেউ কেউ আনু বলেও ডাকে। কয়েকদিন পরে সুন্দরী লাইলীকে রেখে অন্য মেয়ের সাথে ঘর বাঁধেন আয়নালের বাপ। লাইলীর শ্রী-সৌন্দর্য তাকে আকর্ষণ করে নাই। বরং যাওয়ার আগে তালাক দিয়েই বিদায় হোন। তারপর থেকে মা আর ছেলেকে নিয়ে লাইলীর সংসার। লাইলী ছুটা বুয়ার কাজ করে, তার মা পথে ভিক্ষে করে, উপন্যাসের প্রারম্ভেই আয়নালের কাওরান বাজারের পথে কুড়িয়ে পাওয়া সবজি সংগ্রহ করার চিত্র ফুটে উঠে। অর্থভাবে আয়নালের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ আর হয়ে উঠেনি। একটু বড় হয়ে উঠতেই আয়নাল পুরির দোকানে কাজ নেয়। একটা পুরি চুরি করে খাওয়ায় দোকানদার বেদম মার দিয়ে চাকরিচ্যুত করেন। সেদিন প্রথম বারের মতো কান্না করেন আয়নাল। এদিকে লাইলীর রূপে হাবুডুবু খান বস্তির বিবাহিত দোকানদার আফজাল হোসেন। লাইলীর সুখে দুঃখে সর্বদা পাশেও ছিলেন সন্তানহীন আফজাল। পুরির দোকানদান রহমতের সাথে মারামারি করে নিজের দোকান খোয়ান। মারামারিতে পুড়ে যায় বস্তির একাধিক বাড়ি। বস্তিতে থেকে সেদিনই পালিয়ে যান লাইলী এবং তার পরিবার। আয়নালের শুরু হয় নতুন সংগ্রাম, নতুন জীবন।

‘মহব্বত জান’ বস্তি থেকে আয়নালরা পালিয়ে আসে মোহাম্মদপুর। নানী আর আয়নাল মিলে নতুন বস্তিতে বাস করে। আয়নালের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় লেগুনাস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে পরিচয় হয় মুরগি চোর মিলনের সাথে। একটা মোবাইল কেনার তরে মিলনের সাথে শুরু হয় আয়নালের প্রথম ছিনতাই। সামনে পরিচয় হয় বিখ্যাত সন্ত্রাসী কিরিছ শফিক এর সাথে। বছরখানেক পরে আয়নাল নিজ দক্ষতা আর পেশির শক্তিতে হেল্পার থেকে সিরিয়াল ম্যানে পরিনত হয়। কিছুদিন পরে ক্ষমতাসীন দলের শ্রমিক সংগঠনের সাংগঠনিক পদ পায় আয়নাল। সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের কাজের টেন্ডার আসে আয়নালের কাছে। এখন থেকেই শুরু হয় আয়নালের জীবনের আর্থিক উত্থান। সঙ্গে নিত্যকার সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হয় লেগুনাস্ট্যান্ড এর সুঠাম দেহী দুই ছোট ভাই রমিজ আর আকবর।

আফজাল হোসেন প্রথম স্ত্রীকে ত্যাগ করে লাইলী বেগমকে বিয়ে করেন। আপন বাবা হারিয়ে আয়নালের জীবনে সৎ বাবার আর্বিভাব ঘটে। মায়ের বিয়ের কিছুদিন পরে আয়নালের মাতামহী পরলোক গমন করেন।
দ্বিতীয় বারের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আয়নালের চোখ থেকে। এতদিনের অর্থবিত্তে আয়নাল যথেষ্ট সম্পদশালী হয়ে উঠেন। বিভিন্ন স্থানের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির চাকরি আয়নালের দরবারে ভীড় হতে থাকে। নিজের অবৈধ টাকায় নতুন ফ্ল্যাট কেনেন আয়নাল। বস্তির অনাহারে থাকা আয়নালের এমন অর্থবিত্তের ছোঁয়ায় চমকে উঠেন মা লাইলী বেগম।

আয়নালের বর্ণিল জীবনে রোমাঞ্চ এসেছে। সাহানা এবং আফসানা নামের দুই মেরুর দুই নারীর আর্বিভাব হয়েছে। বিশাল অংকের অর্থ ব্যয়ে আয়নাল বস্তির শীর্ষ সুন্দরী সাহানাকে বিয়ে করে। লেখনীতে আফসানা চরিত্র সাহানার বিপরীতমুখী। আয়নালের রাজনৈতিক বড় ভাই সাংসদ আলমগীর ভুঁইয়ার একান্ত সহযোগী আফসানা। কিন্তু কাউন্সিলর পথে আয়নালকে জায়গা দিতে গিয়ে আফসানাকে বাদ দিতে হয়। সেখান থেকে আফসানার সাথে বড় ভাইয়ের সম্পর্ক শিথিল হতে থাকে। নির্বাচনে আফসানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নেয়।

বদরুল সাহানার আপন খালাতো ভাই। ছোট বেলা থেকেই সাহানাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতো। বান্ধবীরা সাহানাকে বদরুল নামে বেশ খেপাতো। ঢাকার একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করে বদরুল। দারিদ্রতার বেড়াজালে কোনমতে নিজেকে চালিয়ে নেয় বদরুল। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া সাহানার বিয়েতে বাধা তৈরির কোন উপকরণ কিংবা সামর্থ্য হয়ে উঠেনি বদরুলের। দূর আকাশে তাকিয়ে হারিয়ে যাওয়া প্রেয়সীকে নিয়ে ভাবে, কবিতা লিখে। কিন্তু বিয়ের পর সাহানার সাথে বদরুলের যোগাযোগ জমে উঠে। বাজার করার নাম করে বদরুল নিয়মিত সাহানার বাসায় যায়। গল্প জমায়। নিজের স্বামীর অনুপস্থিতিতে সাহানা বদরুলের বুকে মাথা রাখে। বদরুল নতুন করে স্বপ্ন দেখে। তবে কি আয়নালকে ছেড়ে বদরুলের ঘরে পাড়ি জমাবে সাহানা? লেখক যেন এখানে লাইলী বেগমের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।

কিছুদিন পরে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন। সভা, মিটিং, মিছিলে ব্যস্ত হয়ে উঠে আয়নাল। আয়নাল টুপি পরে পথসভা করে, আজান দিলে মসজিদে ঢুঁ মারে। টাকার বিনিময়ে আয়নালকে নিয়ে মেতে উঠে সমাজের বিভিন্ন সংগঠন। নির্বাচনী প্রচারণায় থেমে নেই বিরোধীদলীয় লোকেরা। মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী আফসানার নাম বেশ শোনা যাচ্ছে। টাকা দিয়েও বসানো যায়নি আফসানাকে। আয়নালের মনে একরাশ চিন্তা আর ভয়ের রেখা ভিড় হবে নির্বাচনে। কে জিতবে নির্বাচনে? পাঠকদের মনে নিশ্চয়ই একই প্রশ্ন। কে হবে বিজয়ী? কি জুটবে আয়নালের ভাগ্যে? বিজয়ী বা পরাজিত হলে আফসানার বা কী হবে? নিশ্চয়ই থেমে নেই, বদরুল-সাহানার অনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে শেষ পরিণতির প্রশ্ন ভাণ্ডার। মহব্বত জান বস্তি থেকে উঠে আসা আয়নালের শেষটা কোথায়? জানতে অবশ্যই পড়ে ফেলুন ‘আয়নাল হক উপাখ্যান।’

ব্যক্তিগত মতামতঃ আমি প্রথমেই রেটিং ১০ এ ৭ দিয়েছি। বলা যায় মোটামুটি মানের একটা উপন্যাস। লেখক তার লেখনীর দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। বিভিন্ন চরিত্রকে বিভিন্ন রূপে তুলে ধরেছেন। তবে পুরো লেখনীতে লেখক বেশ তাড়াহুড়ো করেছেন। হুট করেই দৃশ্যপট পরিবর্তন করেছেন, বর্ণনাহীন বছরের পরে বছর অতীত বানিয়েছেন। যেহেতু শরৎচন্দ্রের প্রতি জোঁক। আমার মনে হয় লেখার প্রতি আকর্ষণ থাকে, সেটা শরৎ এর মতো কোন পর্বেই ছিলো না। লেখার প্রতি আরেকটু আকর্ষণ বোধ তৈরি করতে পারলে, সাহিত্য রস আরেকটু বৃদ্ধি পেলে লেখনী অসাধারণ হয়ে উঠবে।

রিভিউ দাতাঃ মুহা. ইকবাল আজাদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

161 Views

আরও পড়ুন

সুনামগঞ্জে ট্রাক-সিএনজি মুখোমুখি সংর্ঘষে শান্তিগঞ্জের এক মহিলা নিহত

শান্তিগঞ্জের জয়কলসে বিএনপির কর্মীসভা

শান্তিগঞ্জে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে সংকেতহীন স্পিড ব্রেকার,দূর্ঘটনার আশঙ্কা

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের উপর ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা, আহত অর্ধ শতাধিক

পাঠকের অনুভূতিতে ❝কলিজার আধখান❞

অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমে বিএনপি সন্দেহ করছে–ড. হুমায়ুন কবির

বিশ্বরূপ চন্দ্র বিশ্বাসের কবিতা:- হাসি

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণসংবর্ধনা ও কাউন্সিল শুক্রবার

শান্তিগঞ্জে জমিয়তের গণ সমাবেশ সফল করার লক্ষে সংবাদ সম্মেলন

আইডিইবির ৫৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আধুনগর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের র‌্যালি ও আলোচনা সভা

দোয়ারাবাজারে এফআইভিডিবি’র স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ